ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মামলার অভিযুক্ত পক্ষ

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মামলার অভিযুক্ত পক্ষ

এই মামলার অভিযুক্ত পক্ষ কে হবে সেটাই হয়ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা হয়ত ভাবতে পারে যে, অভিযুক্ত পক্ষ হবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক। কারণ তারাই মূলত ভুয়া সুইফট মেসেজের ভিত্তিতে লেনদেনটি সংঘটিত করেছে। সেই বিবেচনায় তারা হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পাচ্ছে না। কিছুদিন আগে এই ঘটনার অতি পরিচিত একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি জানালেন যে, সরকার ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা করতে চায় না। বিষয়টি মোটেই বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা যুক্তরাষ্ট্র আইনের শাসনের দেশ, তাই এখানে যে কোন প্রতিষ্ঠান, এমনকি স্বয়ং প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেও যে কোন ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা সংস্থা মামলা দায়ের করতে পারে। এটা মোটেও দোষের কিছু নয়। এখানে সকলেই যে কোন বিবদমান সমস্যা আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কেননা এতে করে কোনরকম ব্যক্তিগত ভুল বোঝাবুঝির বা দোষারোপের অবকাশ থাকে না। মামলার রায়কে বাদী-বিবাদী সবাই স্বাগত জানিয়ে মেনে নেয় এবং কোন পক্ষই একে ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে মনে করে না। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলা করার ক্ষেত্রে কোনরকম সিদ্ধান্তহীনতা থাকা উচিত নয়। তবে আলোচ্য ক্ষেত্রে এই মামলার অভিযুক্ত পক্ষ মোটেই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক বা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হতে পারে না। কেননা তারা এই অন্যায় কাজ সংঘটিত করেনি। তারা মূলত প্রাপ্ত সুইফট মেসেজের ভিত্তিতে খোয়া যাওয়া অর্থ এক হিসাব থেকে অন্য হিসাবে স্থানান্তর করেছে মাত্র। বড় জোর প্রকৃত তথ্যপ্রমাণ সরবরাহের স্বার্থে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক এই মামলার সহযোগী পক্ষ হতে পারে। মূল অপরাধ সংঘটিত করেছে ফিলিপিন্সের রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন। সুতরাং তারাই প্রকৃত আসামি এবং মূল অভিযুক্ত পক্ষ। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের যে তিনটি মধ্যস্থতাকারী ব্যাংক এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত তারাও এই মামলার অভিযুক্ত পক্ষ হতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক এই অবৈধ সুইফট মেসেজের অর্থ সরাসরি ফিলিপিান্সের রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের হিসাবে জমা করেনি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ব্যাংক যথা দি ব্যাংক অব নিউইয়র্ক, দি সিটি ব্যাংক ও ওয়েলস ফারগো ব্যাংক যাদের সঙ্গে ফিলিপিন্সের ব্যাংকের ডলার হিসাব আছে, সেখানে প্রেরণ করে এবং ওই তিনটি ব্যাংকই পরবর্তীতে তাদের সঙ্গে পরিচালিত রিজ্যাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের ডলার হিসাবে জমা করে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাংক তিনটি কোন অবস্থাতেই তাদের দায়িত্বে অবহেলার দায় এড়াতে পারে না এবং এই অভিযোগেই তারা এই মামলার অভিযুক্ত পক্ষ হতে বাধ্য। কেননা বর্তমান বিশ্বে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ অন্যান্য আইন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কোন ব্যাংকে অন্য কোন দেশের ব্যাংকের ইউএস ডলার হিসাব খুলতে বা পরিচালনা করতে হলে অনেক কঠিন নিয়মকানুন পরিপালনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। খুবই উঁচু মানের কমপ্লায়েন্স সম্পন্ন করেই এই ধরনের হিসাব খোলার অনুমতি দেয়া হয়। তাছাড়া কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টোমার) এবং কেওয়াইসিসি (নো ইউর কাস্টোমারস কাস্টোমার), ডিডি (ডিউ ডিলিজেন্স), ইডিডি (এনহেন্সড ডিউ ডিলিজেন্স) সফলভাবে সম্পন্ন করেই অন্য কোন দেশের ব্যাংকের ইউএস ডলার হিসাব খোলার এবং পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়। এগুলো পরিপালন করা মোটেই সহজ কাজ নয়। আমাদের দেশের অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকেরই এই কাজটি সম্পন্ন করতে রীতিমত গলদঘর্ম অবস্থা। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে পরিচালিত তাদের ইউএস ডলার হিসাব টিকিয়ে রাখাই দুরূহ হয়ে উঠেছে। লেখক : ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা [email protected]
×