ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জড়িত নয়জন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার

এসএসসির গতকালের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

এসএসসির গতকালের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শনিবার সারাদেশে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খুলনা থেকে র‌্যাবের হাতে নয় জন গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে গেছে। ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই ফাঁস হয়ে যায়। হোয়াটস এ্যাপের মাধ্যমে ফাঁস করা হয়েছে প্রশ্নপত্র। এর আগে এবার অনুষ্ঠিত হওয়া এসএসসি পরীক্ষার দশটি বিষয়েরই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ শনিবার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষাটি বাতিল হবে কিনা সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা জারি করা হয়নি। শনিবার সকাল দশটায় শুরু হয় এসএসসি পরীক্ষার বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের পরীক্ষা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এর আগে সকাল নয়টার দিকে হোয়াটস এ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। ফাঁস করা প্রশ্নপত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখা হয়। তাতে দেখা গেছে, দুইটি প্রশ্নপত্রই হুবহু মিলে গেছে। বিষয়টির বহুনির্বচনী প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটলো। এ নিয়ে এবার অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার এগারো বিষয়ের প্রশ্নপত্রই ফাঁস হলো। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রেই পরীক্ষা হয়েছে। ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে তারা নতুন পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে তিনি শনিবার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। পরীক্ষাটি বাতিল হবে কিনা সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শনিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট নিদের্শনা জারি করা হয়নি। শনিবার খুলনায় এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নয় জনকে আটক করেছে র‌্যাব। শনিবার সন্ধ্যায় র‌্যাব-৬ খুলনার পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মোঃ খায়রুল ইসলাম (১৮), মোঃ নাইমুর রহমান (১৬), মোঃ সাকিব হোসেন (১৮), মোঃ ইব্রাহিম আল নাইম (১৬), মোঃ সাজিদ (১৬), মোঃ সাব্বির হোসেন (১৮), মোঃ সাব্বির হোসেন (১৮), মোঃ মোনায়েম শাহারিয়া রাফি (১৬) ও চয়ন রায় (১৭)। র‌্যাব জানায়, শনিবার বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (সৃজনশীল) পরীক্ষার দিন নির্ধারিত ছিল। ওই পরীক্ষার লিখিত প্রশ্নের উত্তর আগের রাতে এবং অবজেকটিভের উত্তর শনিবার পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগেই একটি চক্র ফাঁস করে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার সকালেই র‌্যাব- ৬ এ খুলনায় কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নানের নেতৃত্বে একটি দল খুলনা মহানগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর ও চিত্রালীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে ওই নয় জনকে আটক করে। তাদের কাছে থাকা প্রশ্নপত্র উদ্ধার হয়। সেই প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর আগেই জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে সারাদেশে অভিযান চলছে। অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে হাজারখানেকেরও বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। জামিনে ছাড়া পাওয়াদের অনেকেই আবার জড়িয়ে পড়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে। এ বিষয়ে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার ও সিআইডির মুখপাত্র মোল্যা নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, জামিনে ছাড়া পাওয়াদের প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িয়ে পড়ার মূল কারণ কাঁচা টাকা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের লোকজনের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। তাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের নেপথ্যের মূল কারণ জানার চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যমতে অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে। আর শনাক্ত হওয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সদস্যদের সঙ্গে ফেসবুক, হোয়াটস এ্যাপ বা অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগকারীদের উপর নজরদারি চলছে। তাতে দেখা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে ফেসবুকে বা অন্যান্য গ্রুপে যোগাযোগকারীদের অধিকাংশই ভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী। চক্রের সদস্যদের মধ্যে সরকারবিরোধী মতবাদে বিশ্বাসীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। প্রশ্নপত্র ফাঁস কোন সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কিনা তা জানতে রাষ্ট্রীয়ভাবেও গভীর অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন বলেন, এমসিকিউ পদ্ধতি চলমান থাকলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো সম্ভব নয়। পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন নিয়ে সরকার ভাবছে। আগামী বছর থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির পদ্ধতি পরিবর্তন করা হবে। প্রসঙ্গত, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। ওইদিন থেকে শুরু করে শনিবার ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট এগারোটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিষয়েরই বহুনির্বচনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হোয়াটস এ্যাপ, ফেসবুক, ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে সারাদেশে রীতিমত লঙ্কাকা- ঘটে যাচ্ছে। সারাদেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রযুক্তির সুবিধা অসুবিধা নিয়ে রীতিমতো মাঠে ময়দানে বাগ্যুদ্ধ চলছে। এমন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রকৃত রহস্য জানতে চায় হাইকোর্ট। এজন্য গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দুইটি কমিটি গঠন করেছে। একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। অপরটি প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠিত হয়। কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে কমিটি। আর বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এ কমিটির সদস্য পাঁচজন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সাত দিনের মধ্যে কমিটি কাজ শুরু করবে। ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। একই দিন সকালে এসএসসি পরীক্ষা বাতিল ও পুনরায় কেন নেয়া হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেয়।
×