ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ফিরিয়ে দাও হৃদয়ের সেই শহীদ মিনার॥ বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ফিরিয়ে দাও হৃদয়ের সেই শহীদ মিনার॥ বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি

সমুদ্র হক ॥ বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে তারেক রহমানের নির্দেশে বগুড়ায় ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ম্যুরালের নক্সায় নির্মিত যে শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়া হয় তা পুনর্নির্মাণের দাবি জোড়ালো হচ্ছে। সেই শহীদ মিনার ভেঙ্গে অন্যস্থানে দলের সংকেতে ‘ব ন প’ বর্ণ এঁটে যে কথিত শহীদ মিনার নির্মিত হয় তা অনেক আগেই বগুড়ার সুধীজন প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রতি বছর কথিত ওই শহীদ মিনারের ধারে শোলা দিয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার বানিয়ে প্রগতিশীল ধারার তরুণরা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ বছরও উদীচীসহ অন্যান্য সংগঠন প্রতীকী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ দেয়ার প্রস্তÍুতি নিয়েছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষ বড় ভূমিকা রাখে। পরবর্তী বছর ১৯৫৩ সালে প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয় নগরীর আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে। একই সময়ে নগরীর এ্যাডওয়ার্ড পার্ক ও কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেদিনের তরুণরা। পরে এই শহীদ মিনারগুলো গুঁড়িয়ে দেয় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারী আযীযুল হক কলেজের পুরাতন ভবনে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেখানেই পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হতো। বগুড়া নগরীতে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের তাগিদ অনুভব করেন বগুড়ার গুণী সৃষ্টিশীল শিল্পী খন্দকার আমিনুল করিম দুলাল (প্রয়াত)। ১৯৮৩ সালে তিনি একটি শহীদ মিনারের নক্সা করে নিজে নির্মাণ ও তত্ত্বাবধানের আগ্রহ প্রকাশ করে পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের (প্রয়াত) কাছে প্রস্তাব করেন। পৌর চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তখনই অনুমতি দেন। একই বছর নগরীর নবাববাড়ি সড়কের ধারে শহীদ খোকন পার্কের ভেতরে ডানদিকে শহীদ মিনার নির্মাণের স্থান নির্বাচন করে দেন। বরাদ্দ হয় ১ দশমিক ৮০ লাখ টাকা। ওই বছরই ভাষা আন্দোলন থেকে ’৬৯-এর গণ অন্দোলন হয়ে ’৭১-এর দিনগুলোকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় পর্যন্ত ইতিহাসভিত্তিক কনস্ট্রাকশন ম্যুরালের ওপর অ আ ক খ বর্ণমালা দিয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেন শিল্পী দুলাল। বগুড়ার এই শহীদ মিনার দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে ব্যতিক্রমী একটি শহীদ মিনার হিসেবে প্রশংসিত হয়। সেই শহীদ মিনারের বিভিন্ন কোণায় ম্যুরালে তাকালে একটি জাতির জন্মের ইতিহাস দৃষ্টিতে ভেসে আসে। শিশু-কিশোররা হৃদয়ে গেঁথে নেয় ইতিহাস। বগুড়ার মানুষের প্রাণের সেই শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ২ হাজার ৪ সালে। শহীদ খোকন পার্কের উল্টোদিকে স্টীলের পাইপ ও কনস্ট্রাকশনে এমন একটি কথিত শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় যা দেখে সাধারণ মানুষ ধিক্কার দেয়। ওই বছর থেকেই আগের শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের দাবি উঠতে থাকে। ২ হাজার ৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হারানো শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণের দাবি জোরদার হয়ে ওঠে। উদীচীর তৎকালীন সভাপতি রহীম চৌধুরীর (প্রয়াত) নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সকল সদস্য সংগঠন মানববন্ধন, সমাবেশসহ আন্দোলন গড়ে তোলে। শরিক হয় বগুড়ার সুধীজন। বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না, সংশপ্তক থিয়েটারের সভাপতি সাদেকুর রহমান সুজন, নীভা রানী, উদীচীর আরিফুল হক খান, শব্দকথন সাহিত্য আসরের এইচ আলিম বলেন, এবারও তারা প্রতীকী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ দেবে। উদীচী, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, খেলাঘর, রক্তটিকা আসর, লেখক চক্র, গীতিচর্চা সঙ্গীতালয়সহ প্রগতিশীল ধারার সকল সংগঠন এবং বগুড়ার সুধীজনের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর ‘ফিরিয়ে দাও আমাদের হৃদয়ের শহীদ মিনার’। তাদের দাবি, প্রাণের সেই শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হোক।
×