ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী শিক্ষক

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নারী শিক্ষক

সময়ের দাবিতে, প্রয়োজনের তাড়নায় এবং সমাজের চাহিদায় নারীরা আজ পরিবারের ক্ষুদ্রতর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে বৃহত্তর সামাজিক আঙিনায় নিজেদের সক্রিয় ভূমিকা জোরদার করে চলছে। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে দেশের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রায় নারীর এই অবস্থান এবং ক্ষমতা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে। সেই বিবেচনায় সমাজের অর্ধেক হিসেবে নারীরা যে কোনভাবেই পিছিয়ে নেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন সমৃদ্ধির প্রায় ক্ষেত্রেই নারীর সক্রিয় সম্পৃক্ততা দৃশ্যমান। কিন্তু পাশাপাশি স্বাধীনতা, অধিকার এবং মর্যাদার বিষয়গুলো এখনও কিছুটা উপেক্ষিত। একথা সত্য যে, শুধু অংশগ্রহণের আলোকে ক্ষমতা নির্ধারণ করা যায় না। তার ওপর বিভিন্ন জরিপে উঠে আসা নারী নির্যাতনের চিত্রও। তারপরও নানা বাধা পেরিয়ে শিক্ষক, সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে পেশাজীবী নারী, বিভিন্ন গণমাধ্যমে নারী কর্মী তাদের সামাজিক অবস্থানকে মজবুত করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সফলও হচ্ছে নিজেদের প্রমাণ করতে। যদিও তাদের সংখ্যা পুরো জনগোষ্ঠীর তুলনায় নগণ্য। সার্বিক এই চিত্রের পাশাপাশি সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যান তাদের এগিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুরুষ শিক্ষকের চেয়ে প্রায় দেড় লাখ বেশী মহিলা শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৩.১৭ শতাংশই মহিলা শিক্ষক। দেশে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ৫ লাখ ৫৭ হাজার শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৮৬৩ জনই মহিলা শিক্ষক। প্রাথমিক বিদ্যালয় বার্ষিক জরিপ ২০১৭ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে কয়েক ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় গত কয়েক দশকে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এর শুরুটা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই। ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রার শুভ সূচনা করেছিলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে প্রায় ২৬ হাজার বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত আরও পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে তিন দফার প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী। এ কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনেই রঙিন বই তুলে দেয়া, উপবৃত্তি কার্যক্রম, অনগ্রসর এলাকায় স্কুল ফিডিং চালু, সরকারী বিদ্যালয়ে দফতরী-কাম-প্রহরী নিয়োগ, স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন প্রভৃতি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানসিক বিকাশ ও খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করতে শিক্ষার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টসহ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টিসহ প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণী চালু, পুল শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগও প্রশংসনীয়। এত কিছুর পরও মানের দিক দিয়ে এখনও অনেক পিছিয়ে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় অনেকেই আগ্রহী হন না। অথচ প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে মূল ভিত্তি। তবে এ আগ্রহের তালিকায় নারীরা বেশ অগ্রগামী। আজকের কচি প্রাণ আগামী দিনের সুনাগরিক। একটি স্বনির্ভর জাতি গঠনের পূর্বশর্ত যোগ্য নাগরিক গড়ে তোলা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। পরিবারের সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রথম ভূমিকা মায়েদের। তেমনি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষায় নারীদের সংখ্যাধিক্য সুখবরই বলা চলে। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের জীবনধারা। একটা সময় ছিল, বাবা-মায়ের কাছে শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ শেষে বিদ্যালয়ে পাঠানো হতো শিশুদের। এখন বাবার সঙ্গে মায়েরও ব্যস্ততা বেড়েছে। আসলে কর্মক্ষেত্রে নারীকে নারী হিসেবে না দেখে একজন মানুষ হিসেবে দেখা বাঞ্ছনীয়।
×