ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে-

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে-

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। শুক্রবার জনকণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদনে প্রশ্ন ফাঁসের মামলার তদন্তের পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। তাতে দেখা যায় প্রশ্ন ফাঁসের জন্য এমসিকিউই দায়ী। একমাত্র রচনামূলক ও সৃজনশীল পদ্ধতি প্রণয়ন করা হলে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব বলে অভিমত উঠে এসেছে। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সচিবের কথায় বাস্তব পরিস্থিতি উঠে এলেও ফাঁস রোধের ব্যাপারে জোরালো কোন বক্তব্য প্রকাশ পায়নি। বরং তিনি এক ধরনের অসহায়ত্বই প্রকাশ করলেন। পরীক্ষা গ্রহণকারী উচ্চ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষই যদি আশার বাণী শোনাতে না পারে, তাহলে সেটি গোটা সমাজকেই প্রভাবিত করতে পারে। আমরা মনে করি, প্রশ্ন ফাঁসের সমস্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও এটি এখনও রোধ করা সম্ভব। এ জন্যে সব পক্ষের নৈতিক দৃঢ়তা, গতিশীলতা এবং আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। আগামী বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা নেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষা সচিব। প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলার তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলছে, শুধু এসএসসি নয়, সব ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করতে হবে। অন্যথায় প্রশ্নফাঁস হওয়ার আশঙ্কা প্রায় শতভাগ। প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিটি কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। এ নিয়ে আমরা বার বার সম্পাদকীয়তে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছি। এবার এসএসসি পরীক্ষা চলার সময় প্রতিদিনই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা থেকে এমনটা অনুমান করা স্বাভাবিক যে বর্তমান সরকারকে শুধু বিব্রত করাই নয়, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করার জন্যে একটি মহল তৎপর রয়েছে। সেই কুচক্রী মহলকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য সরকারের যা যা করা সমীচীন, অবশ্যই তা করতে হবে। কোনক্রমেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। সমকালে সংস্কৃতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, যত পরীক্ষা তত যেন ফাঁস। প্রশ্নপত্র ফাঁসের চোরাবালি থেকে কোন পরীক্ষাই যেন বেরিয়ে আসতে পারছে না। তাতে ফাঁস লাগছে নীতিনৈতিকতার গলায়, দেশের সামনের পথ চলায়। সত্যি বলতে কি, দেশে এখন খুব কম পাবলিক পরীক্ষা আছে যার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠেনি! ফাঁস হয়েছে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। প্রশ্নপত্র ফাঁস, অবৈধপথে তা গ্রহণ ও সমস্যার সমাধান না হওয়া আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ার আলামত। পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা গোটা জাতির জন্যই উদ্বেগজনক। দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার যে সাফল্য, তা এই কেলেঙ্কারিতে ঢাকা পড়ে গেছে। প্রশ্ন উঠছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন কুৎসা রটনা করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং দোষী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে তেমন বেগ পেতে হয় না। কিন্তু মোবাইল নম্বরসহ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হলেও দোষীদের এবং এর মূল হোতাদের কেন আটক করা যাচ্ছে না? তাই প্রশ্ন ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে শুধু ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেয়াই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে হবে। এই সম্পর্কিত পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) ও আইসিটি আইনের যথাযথ প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। এই ধরনের অপরাধ বন্ধে দরকার মোবাইল নম্বরের যথাযথ রেজিস্ট্রেশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ। প্রশ্ন ফাঁসের মহামারী ঠেকাতে সর্বোপরি বহমুখী ও সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে উঠেছে।
×