ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিহা রহমান

চেতনায় একুশ পোশাকে বর্ণমালা

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চেতনায় একুশ পোশাকে বর্ণমালা

বাঙালীর যা কিছু অহঙ্কারের, একুশ তার একটি। আর বাংলা বর্ণমালা আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়। ভাষার মাসের বিশেষ রং হিসাবে সাদা আর কালো আমাদের ভাবনার জগতকে অধিকার করে আছে। আর সেই সঙ্গে আরও মানাবে ছাই রং বা অ্যাশ অফ হোয়াইট। একুশের পোশাকে সবার প্রথমে আসবে রং, বিভিন্ন দিবসে বিভিন্ন মুড আর থিম আছে। একুশের প্রধান বিষয় হচ্ছে শোকের সঙ্গে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো। এটি বৈশাখ বা অন্য দিবসের মতো নয়, এটি ভাবগম্ভীর একটি বিষয়। সেটিকে বোঝাতেই কালো সংযুক্ত হয়েছে। আর সাদার অর্থ হচ্ছে শুদ্ধতা ও শ্রদ্ধা। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের দিনেও আমরা সাদা পোশাকের ব্যবহার দেখেছি। তখন থেকেই শুদ্ধ সাদা। এর সঙ্গে শোক যুক্ত হয়েছে। এ দুটো রং ছাড়া একুশকে কোনভাবেই বোঝানো সম্ভব নয়। আর যেহেতু আমাদের আত্মত্যাগ আর লড়াই ছিল ভাষার জন্য, সেহেতু ভাষা ও বর্ণমালা এখানে অনেক বেশি সংযুক্ত। একুশের পোশাকে সাদাকালোর সঙ্গে বর্ণমালা কিংবা কোন পঙ্ক্তিমালা ছাড়া ভাবাই যায় না। একুশ আমাদের অহঙ্কার। বিগত কয়েক বছর থেকে পোশাকে সাদাকালো রঙের ব্যবহারের পাশাপাশি শুরু হয়েছে বর্ণমালার প্রাধান্য। পোশাকের অবয়ব অলঙ্করণে নানাভাবে বর্ণমালাকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্ণ ও শব্দ মালার বিন্যাসে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং অন্যান্য গর্বের বিষয় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পোশাকে। এ রকম দিনে নারী-পুরুষ সবার জন্য চাই ট্র্যাডিশনাল পোশাক। বিশেষ দিবস উপলক্ষে পোশাকে ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, মেশিন ও হ্যান্ড এ্যাম্ব্রয়ডারিতে করা হয়েছে জমিন অলঙ্করণ। ভালবাসাকে সারাক্ষণ শরীরে জড়িয়ে রাখতে তাই দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোরও চেষ্টার অন্ত নেই। বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশীয় বুটিক হাউসগুলো তাদের পোশাকে নিয়ে আসছে ভাষার মাসকে। প্রথমে সাদাকালোর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল পোশাক। তখন কালো চাদরের ব্যবহারও শুরু হয়েছে। পোশাকে ভাষা দিবসকে প্রাধান্য দিয়ে কিভাবে ডিজাইন করা হয় এই বিষয়ে ফ্যাশন ডিজাইনারা বলেন, ‘পোশাকে কালো রঙের ব্যবহার কারণ বাংলা বর্ণমালা আমরা কালো কালিতে লিখি, আবার শোক হিসেবেও কালো রং ব্যবহার করি। একুশের ইতিহাস রক্তক্ষয়ী ইতিহাস তাই লাল আসে। আর শুদ্ধতার প্রতীক সাদা রংকে সমতল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আগে একুশকে শুধু শোক দিবস হিসাবে পালন করা হতো। কিন্তু এখন তা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও। সাধারণত সব হাউসগুলোতেই একুশের পোশাকে শ্রদ্ধা ও পরিমিতবোধ থাকে। উজ্জ্বল রং বা জমকোলো যে কোন ব্যাপার এড়িয়ে চলা হয়। এদিনে প্রিন্টেড শাড়ি পরে অনেকে। সেখানে হালকা হাতের কাজ থাকতে পারে। এসব কিছু মাথায় রেখেই সাধারণত ডিজাইন নকশা করা হয়।’ একুশ যেহেতু শোকের দিবস, তাই এই দিনে সাধারণ সাজই নেয়া দরকার। সে ছেলে বা মেয়ে যেই হোক। এদিন মেয়েরা এমন মেকআপ করতে হবে যাতে গর্জিয়াস লুক না আসে। নেচারাল করতে হবে। সঙ্গে লিপিস্টিক হচ্ছে ম্যাট কালার বা স্কিন টোন কালারের হলে ভাল লাগবে। ট্রেডিশনাল লুক আনতে চুল বেণী বা খোপা করা যেতে পারে। আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পরতে পারে, চুল সিঁথি দিয়ে সিম্পল লুক নিয়ে আসতে পারে তাহলে তাদের ভাল লাগবে মেয়েদের কালেকশনে আছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, টপস, আনষ্টিচ, সিঙ্গেল ওড়না, ব্লাউজ। জমিন অলঙ্করণে ব্যবহৃত হয়েছে ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, হাতের কাজ, প্যাচওয়ার্ক। কেবল মেয়েদের নয়, ছেলেদের কালেকশনও সমান আকর্ষক। পাঞ্জাবি, পায়জামা, ফুলহাতা ও হাফহাতা শার্ট, টি-শার্ট, পোলো-শার্র্ট, উত্তরীয়। মেয়েদের সংগ্রহ : কটন শাড়ি পাওয়া যাবে ৮৫০ থেকে ২,০৫০, হাফসিল্ক শাড়ি ২,১০০ থেকে ৩,৫৫০, থ্রি-পিস ২,৫০০ থেকে ৩,৯৯০, সিঙ্গেল কামিজ ১,০৫০ থেকে ১,৮৫০, আনস্টিচ ২,০০০ থেকে ২,৫০০, সিঙ্গেল ওড়না ৫০০ থেকে ৭৫০ ও ব্লাউজ ২৫০-৩৫০ টাকা। ছেলেদের সংগ্রহ : ছেলেদের পাঞ্জাবি ১০০০-১২৫০, টি-শার্ট ৩৫০-৪৮০, শার্র্ট-৭৫০-৯৫০ ও উত্তরীয় ২৫০-৫০০ টাকা। বাচ্চাদের সংগ্রহ : শার্ট ৩৫০-৫৫০, টি-শার্ট-৩৫০-৩৮০, পাঞ্জাবি-৫৫০-৭৫০, ফ্রক-৬০০-৮৫০ ও সিঙ্গেল কামিজ-৬৫০-১১৫০ টাকা। ছবি : রঙ বাংলাদেশ ও কে ক্রাফট
×