ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে

লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনা তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনা তদন্ত শুরু

শংকর কুমার দে ॥ লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন অফিসের কর্মকর্তাদের উপর হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে আগে থেকেই লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে তারেক রহমানের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ থাকার অভিযোগ আছে এবং তারেক রহমানের নির্দেশেই লন্ডন হাইকমিশনে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তে হামলার প্রমাণ পাওয়া গেলে লন্ডনে স্বেচ্ছ নির্বাসনে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে এবং তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে বহিষ্কার করার জন্য যুক্তরাজ্যের কাছে অনুরোধ জানাতে পারে বাংলাদেশ। লন্ডন পুলিশ ইতোমধ্যেই হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ হস্তান্তর করেছে এবং যুক্তরাজ্যের এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। লন্ডন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে কূটনৈতিক চ্যানেলে ও ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার পর্যায়ে। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কোন দেশের দূতাবাস এলাকায় ওই দূতাবাসের লোকজন পূর্ণ নিরাপত্তা ভোগ করবে। কিন্তু ভিয়েনা কনভেশন অনুযায়ী লন্ডন হাই-কমিশনের বিএনপির নেতাকর্মীদের হামলার বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে ঢাকা। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন মামলার রায়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্মারকলিপি দেয়ার নামে হাইকমিশনে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের মারধর ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনটি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই দূতাবাসের সম্পত্তি ধ্বংস করা মানে রাষ্ট্রের সম্পত্তি ধ্বংস করা এবং দূতাবাসে আক্রমণ করার বাংলাদেশকে আক্রমণ করার শামিল। বিক্ষোভকারীদের এ ধরনের সহিংস ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। এ জন্য তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গোয়েন্দা সূত্র জানান, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ইউকে এবং এর অঙ্গ সংগঠনসমূহ কর্তৃক আয়োজিত বিক্ষোভ শেষে স্মারকলিপি হস্তান্তরের নামে একদল বিক্ষোভকারী জোরপূর্বক দূতাবাসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দূতাবাসের কর্মচারীদের আক্রমণ করে এবং দূতাবাসের সম্পত্তি ভাংচুর করে। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ছবি পোস্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যুক্তরাজ্য বিএনপির হামলা ও ভাংচুরের জন্য লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমান ছাড়াও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকও সাধারণ সম্পাদক এম কায়সার আহমেদসহ অন্যরাও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হতে পারেন। যুক্তরাজ্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন অফিসের সামনে ইতোপূর্বেও এ ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হয়েছে, যা দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে ক্ষুণœ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘটনার পর কক্সবাজারের এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে অভিযোগ করেছেন, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জড়িত। তিনি অভিযোগ করেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা, যা একটা দেশের বিদেশী দূতাবাসে হামলা চালানো হয়। এই হামলার নির্দেশদাতা লন্ডনে অবস্থানরত, জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তার নির্দেশেই, তিনি নিজে করিয়েছেন। অথবা তার নির্দেশে এ ঘটনা ঘটেছে। পররাষ্ট্র দফতর ও বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন পুলিশ সদর দফতরের এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ১৯৬১ সালের ১৮ এপ্রিল ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কূটনৈতিক আদান-প্রদান ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিনিধি সম্মেলনে ভিয়েনার ‘কূটনৈতিক সম্পর্কের কনভেনশন’ স্বাক্ষরিত হয় তাতে কূটনৈতিক অধিকার, দায়মুক্তি ও সুযোগ-সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রগুলোর উল্লেখ আছে। ১৯৬৪ সালের ২৪ এপ্রিল এ চুক্তির ৫৩টি ধারা যুক্ত করে এ কনভেনশন কার্যকর হয়। বিদেশে নিযুক্ত কূটনীতিবিদদের গ্রহণ করা, স্তর বিন্যাস, বিশেষ অধিকার, দেশের অধিকার ও দায়িত্ব এতে বর্ণিত হয়েছে। এ কনভেনশনের ২২ ধারা অনুযায়ী দূতাবাসে মিশনপ্রধানের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যায় না এবং দূতাবাসের ভবন রক্ষা করার দায়িত্ব থাকে গ্রহণকারী রাষ্ট্রের। কনভেনশনের ২৪ ধারা অনুযায়ী দূতাবাসের দলিলপত্র, এমনকি দূতাবাসের বাইরে সংরক্ষিত দলিলপত্রের সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া ২৭ ধারা অনুযায়ী তাদের অবাধ যোগাযোগের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। আবার ২৯ ধারা অনুযায়ী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ব্যাঘাত করা যায় না অর্থাৎ তাদের গ্রেফতার ও ডিটেনশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। কনস্যুলার অফিসারদের পরিবারের সদস্য অথবা তার ব্যক্তিগত কর্মচারীরাও ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক দায়মুক্তি ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকারী। ভিয়েনা কনভেশন লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে বহিষ্কারের জন্য যুক্তরাজ্যের কাছে অনুরোধ জানানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার বিষয়টি তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে ঢাকা থেকে লন্ডনে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করতে পারেন ঢাকার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তদন্তের বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেল ও লন্ডন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তদন্ত চালানো হচ্ছে। কারা কিভাবে কেন হামলা করেছে তা তদন্তে প্রমাণ হলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হতে পারে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×