ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিয়া পরিবার বাংলাদেশের জন্য একটি অশুভ শক্তি

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জিয়া পরিবার বাংলাদেশের জন্য একটি অশুভ শক্তি

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনিয়র সংসদ সদস্যরা বলেছেন, জিয়া পরিবার বাংলাদেশের জন্য একটি অশুভ শক্তি। এদের দিয়ে দেশ ও জনগণের কোন কল্যাণ হয়নি। বয়সের কারণ বিবেচনা করে আদালত খালেদা জিয়াকে কম দন্ড দিয়েছেন। নইলে যে অপরাধ তিনি করেছেন সেজন্য সর্বোচ্চ শাস্তি তাঁর প্রাপ্য ছিল। খালেদা জিয়া গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাস করেন না। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছেন। বাঙালী জাতি আর খালেদা জিয়ার দুঃশাসনের যুগে ফিরে যেতে চায় না। দেশের জনগণ আর বিএনপি-জামায়াতকে অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করার সুযোগ দেবে না। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সিনিয়র নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সরকারি দলের বিএম মোজাম্মেল হক, নুরুল ইসলাম সুজন, নাহিম রাজ্জাক, মোহাঃ গোলাম রাব্বানী, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য ও জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বিএনপির উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে আন্দোলন করে বের করা যাবে না। একমাত্র আদালতের মাধ্যমেই তাঁকে (খালেদা জিয়া) বের করতে হবে। অযথা হুমকি-ধুমকি দিয়ে কোন লাভ হবে না। দেশের জনগণ আর বিএনপি-জামায়াতকে অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করার সুযোগ দেবে না। বিএনপি যদি দেশের জনগণের আস্থা পেতে চায় তবে দলটির নেতাদের উচিত দুর্নীতিবাজদের ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পরিচ্ছন্ন নেতাদের সামনে নিয়ে আসা। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের উন্নয়ন চায় না, সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধা দিতে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার কারণেই তাদের দোসর বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা চেয়েছিল জ্বালাও-পোড়াও করে দেশকে অস্থিতিশীল করে একটি অগণতান্ত্রিক শক্তিকে আনতে। কিন্তু সেখানেও বিএনপি-জামায়াত জোট ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মামলাকে কেন্দ্র করে তারা আবারও দেশকে অস্থিতিশীল করতে সন্ত্রাসের পথে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বয়সের কারণে খালেদা জিয়ার কম দন্ড হয়েছে। না হলে তিনি যে অপরাধ করেছেন তার জন্য খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ দন্ড হওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, শুধু খালেদা জিয়াই নয়, তাঁর পুত্র ও স্বামীও দুর্নীতিবাজ। জিয়া পরিবার বাংলাদেশের জন্য একটি অশুভ শক্তি। এদের দিয়ে দেশ ও জনগণের কোন কল্যাণ হয়নি। ব্যাংকিং ও শিক্ষা খাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের প্রায়শঃই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। দেশ যখন সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন কিছু সামান্য এসব ঘটনায় সরকারকে কেন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থাতেও দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট অস্বস্তিকর পরিস্থিতি নিরসন করতে হবে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, শিক্ষায় পদে পদে ঘুষ বাণিজ্য চলছে। আগে একটা দুইটা প্রশ্ন মোবাইলে, ফেসবুকে পাওয়া যেত। এবার বাসভর্তি ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পাওয়া গেল। প্রশ্নফাঁসের পুরো বিষয়টি সরকারে নাগালের বাইরে। ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত সবচাইতে বড় খাত। আর এই ব্যাংকিং খাতে চলছে নৈতিকতার সংকট। ব্যাংকিং খাতে না জেনে শুনেই ব্যাংক ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে ব্যাংক ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ঋণ যারা পাচ্ছে তারা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক খাতে হরিলুট অর্থপাচারের ভয়াবহ তথ্য আছে। ব্যাংক এখন পরিবারতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার কারাবাস সম্পর্কে তিনি বলেন, নদীতে জোয়ার ভাটা হয়। তবে জোয়ার-ভাটা এক সঙ্গে হয় না। রাজনীতির জোয়ার-ভাটার খেলায় কেউ এগিয়ে যাবে কেউ পিছিয়ে পড়বে- এটাই নিয়ম। এসময় তিনি তাঁর দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের বিরুদ্ধে করা মমলার কথা তুলে ধরে বলেন, আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান যখন জেলে ছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলায় হয়েছিল। প্রতিটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে খালাস পেয়েছি, নিচে কোন মামলায় খালাস পাইনি। সেই সময় বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকেও জেল খানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তখন তাঁকে ১৫ দিন কয়েদীদের সঙ্গে মাটিতে রাখা হয়েছিল। এগুলো শুধু মনে পড়ে যায়। শুধু এগুলো মনে হয় এইজন্য ইতিহাস আবার ফিরে আসে। রাজনীতিতে যদি রাগের বশবর্তি হয়ে রাজনীতির বাইরে গিয়ে কোন কিছু করা হয় সেটা আবার তার উপর ফিরে যায় কি না? রাজনীতিতে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। তাই ক্ষমতাসীনদেরও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০৪০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত বিশ্বের একটি দেশ হিসাবে বাংলাদেশকে গড়তে চাচ্ছেন। সেখানে পৌছাতে হলে জাতীয় রাজস্বের টেকসই হতে হবে প্রায় ১০ শতাংশ। এখন আছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ লাগবে সড়ে ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ২১ বিলিয়ন ডলারে কাজ করছে। ২০৪০ সালে বাংলাদেশ হবে ৩৪তম বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ। সেখানে পৌছাতে হলে প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ইউরোপ থেকেই বিদ্যুত-জ্বালানীতে বিনিয়োগ পেয়েছি প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ৪৫ বছরে ইতিহাসে এই প্রথম ইউরোপের দেশগুলো শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি আস্থা দেখিয়ে বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তিনি বলেন, ধানমন্ডি এলাকার সমস্ত বিদ্যুত আমরা মাটির নিচে নিয়ে যাচ্ছি। ধীরে ঢাকা শহরসহ ডিপিডিসি এবং ডেসকো এলাকায় সমস্ত সাব স্টেশন মাটির নিচে চলে যাবে। বিদ্যুত লাইনগুলো মাটির নিচে চলে যাবে। আগামি দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সতেল ক্রড ওয়েল ফিনিশ ওয়েল সব গভীর সমুদ্রের পাইপ লাইনের মাধ্যমে আসবে । তিনি জানান, শীঘ্রই বরিশাল ও রংপুরে গ্যাস নিতে পাইপ লাইন নির্মাণ করা হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, খালেদা জিয়ার রায়ের মাধ্যমে সারাবিশ্বের সামনে প্রমাণ রয়েছে বাংলাদেশে আইনের শাসন রয়েছে, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। খালেদা জিয়া গণতন্ত্র ও নির্বাচনে বিশ্বাস করেন না। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছেন। বাঙালী জাতি আর খালেদা জিয়ার দুঃশাসনের যুগে যেতে চায় না।
×