ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতির মেরুদণ্ড ভাঙ্গার অপচেষ্টা

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জাতির মেরুদণ্ড ভাঙ্গার অপচেষ্টা

প্রশ্ন কি আর সঠিক উত্তর কিভাবে লিখতে হয় তখনও জানে না কোন কোন শিশু। অথচ জীবনের প্রথম পর্যায়েই সম্মুখীন হয়েছে এক কলঙ্কের কালিমায় অর্থাৎ প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির প্রশ্নফাঁসের মধ্য দিয়ে। প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএস এবং নিয়োগ পরীক্ষাতেও এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে অহরহ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত মেধাবীরা। কিছুসংখ্যক ছাত্রের জন্য অধিকাংশ কেন্দ্রে পরীক্ষা বাতিলের ঘটনাও ঘটেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে বরগুনায় ২৪৮টি স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এতে তাদের চলমান পরীক্ষাগুলোর উপরও প্রভাব পড়েছে। ১৯৭৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে এদেশে প্রশ্নফাঁসের প্রবণতা শুরু হলেও বিগত কয়েক বছরে এর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেনÑ ‘এখানে দুর্নীতি আছে’ কিন্তু এই দুর্নীতিবাজদের দমন করা খুব কি কঠিন? কঠিন ভাবে যদি এদের দমন করা না যায় তাহলে তো একসময় দেশ পরিচালিত হবে দুর্নীতিবাজদের দিয়ে। জাতির মেধার মূল্য আমরা কতটুকু দিতে পারব। এ ব্যাপারে অনেক মামলা হয়েও বিচার হচ্ছে না। ঢাকায় বিগত আট বছরে অন্তত ৯০টি মামলা হয়েছে, সাজা হয়নি কারও। গত বছরে গ্রেফতার হয়েছে ৭১ জন অথচ বিচার হয়নি। কিন্তু কারা এই প্রশ্ন ফাঁসকারী? এমন প্রশ্ন ওঠাতে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘কতিপয় শিক্ষকও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।’ কিন্তু এই কতিপয় শিক্ষকরাই বা কারা? যারা প্রতিনিয়ত আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করে যাচ্ছেন। আমরা কেন পারছি না তাদের চিহ্নিত করতে? কিছু চক্র আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনভাবে চলতে থাকলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনও শোনা যাচ্ছে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতি রাখা হবে না। আসলে নৈর্ব্যক্তিক আছে বলেই অনেক শিক্ষার্থী মূল বই খুব ভালভাবে পড়ে কিন্তু যখন নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন তুলে দেয়া হবে তখন মূল টেক্সটও অনেকে পড়া বাদ দেবে। বাজারে গাইড আকারে যে বইগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দেবে সবাই। এতে তাদের মেধা বিকশিত হবে না। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে তরুণ সমাজ। তরুণ সমাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আর তরুণ সমাজ মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারলে দেশও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। এমনভাবে চলতে থাকলে ঘুষের মতো আমরা শুনতে পাব অঘোষিত বৈধতা ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস করুন কিন্তু সহনীয় মাত্রায় করুন।’ কিন্তু আমরা চাই না আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হোক। ভর্তি পরীক্ষায় বিতর্কিত প্রশ্ন করার কারণে যদি শাস্তি হয়ে থাকে তবে কেন প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি হবে না? অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি হওয়া উচিত। প্রশ্নপত্র ফাঁস না হয়েও যে স্বচ্ছ পরীক্ষা হতে পারে এমন দৃষ্টান্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়েছে। তাহলে কেন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিভিন্ন ব্যাংকগুলোতে সম্ভব হচ্ছে না? অনেকে বলে থাকেন, পরীক্ষার হলে ছাত্ররা ‘ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস’ নিয়ে আসেন। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে তারা বাইরে থেকে প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান। এমন বিবেকহীন কথা বলা বোকামির অংশ বলে আমি মনে করি। কারণ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসকে অকেজো করার জন্য ‘ইলেক্ট্রনিক জ্যামার’ চালু করা যেতে পারে। ‘ইলেক্ট্রনিক জ্যামার’ এমন একটি সিস্টেম যা পরীক্ষার কেন্দ্র ও আশপাশের মোবাইল ফোন ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়। ইতোমধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এই সিস্টেম চালু করে সফল হয়েছে এবং তারই দেখানো পথে চলেছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং প্রয়োজনে আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা চালু করতে হবে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। জবাবদিহিতা কাজের স্বচ্ছতা আনয়নে সাহায্য করে। যাদের উপর দায়িত্ব দেয়া হবে তারা কতটুকু তা পালন করতে পারবে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি না পারে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। তবুও যেন কারো একটু অবহেলার কারণে গোটা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আঘাত না হানে। এ বিষয়ে আমাদের সরকারকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রয়োজনে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। সরকারী-বেসরকারীভাবে সোচ্চার হতে হবে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে। বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×