ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরার মঞ্চে স্মিথ-পেরি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরার মঞ্চে স্মিথ-পেরি

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল এবার দেশটির বর্ষসেরার পুরস্কার যাচ্ছে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের পকেটে। যেটির নাম ‘এ্যালান বোর্ডার মেডেল’। সোমবার মেলবোর্নে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটানো উইলোবাজের গলায় সেটি পরিয়ে দেয়া হয়। ২০১৭ সালের পারফর্মেন্সের বিচারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটারও নির্বাচিত হন স্মিথ। ভারত ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ দুই সিরিজে দাপুটে নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ৬ ভোটের ব্যবধানে তারকা স্পিনার নাথান লেয়নকে পেছনে ফেলে সিএÑর বর্ষসেরা হন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। ওয়ানডের বর্ষসেরার মেডেল গেছে তুখোড় ওপেনার ডেভিড ওয়র্নারের গলায়। আর টি২০র সেরা এ্যারন ফিঞ্চ। সবধরনের আন্তর্জাতিক ফর্মেটে গত এক বছরে ৬৭.৪৪ গড়ে ১ হাজার ৭৫৪ রান করেছেন স্মিথ। এ্যালান বোর্ডার পদক জয়ের ভোটেও ছিল তাই একচ্ছত্র আধিপত্য, পেয়েছেন ২৪৬ ভোট। তিনি টপকে গেছেন ডেভিড ওয়ার্নার (১৬২) ও লেয়নকে (১৫৬)। ২০১৫ সালের পর এই নিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার দেশের বর্ষসেরা ক্রিকেটার হলেন স্মিথ। গত বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত পারফর্মেন্স বিবেচনা করা হয়েছে। এই সময়ে স্মিথ তিন ফরম্যাট মিলিয়ে সবার উপরে। তবে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন টেস্টে। ১১ ম্যাচে ৮১.৫৬ গড়ে ৬টি সেঞ্চুরিসহ ১ হাজার ৩০৫ রান করেছেন তিনি। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ইনিংসটি খেলেছেন পার্থে গত ডিসেম্বরে। এ্যাশেজের তৃতীয় ম্যাচে ক্যারিয়ার সেরা ২৩৯ রান করেন স্মিথ। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে না পারলেও রঙিন পোষাকে মৌসুম জুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জন্য স্মিথ ও অলরাউন্ডার মার্কাস স্টোইনিসকে টপকে অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা ওয়ানডে খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ওয়ার্নার। টি২০র সেরা এ্যারন ফিঞ্চ। সিএÑর নারীদের বর্ষসেরা ‘বোলিন্ডা ক্লার্ক এ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন এলিস পেরি। মূলত টেস্ট ফরম্যাটে দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণেই ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো বোর্ডার টদক জিতলেন স্মিথ। ২০১৫ সালে প্রথমবার এই এ্যাওয়ার্ড জিতেছিলেন তিনি। ১৯ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চারবার করে বোর্ডার মেডেল জয় করেছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং ও মাইকেল ক্লার্ক। দ্বিতীয়বারের মতো মেডেল জিতে আবেগে আপ্লুত স্মিথ বলেন, ‘অবশ্যই আমার জন্য বছরটি দুর্দান্ত ছিল। ব্যাট হাতে দুটি সিরিজে আমি শতভাগ সাফল ছিলাম। একইভাবে ভবিষ্যতে আরও ভাল খেলার চেষ্টা করব এবং সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেব, যাতে দলকে জয়ের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারি।’ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখন পর্যন্ত ৬১ টেস্টে ২৩টি করে সেঞ্চুরি ও হাফ-সেঞ্চুরিতে ৬০৫৭ রান করেন স্মিথ। অন্যদিকে ২০১৭ সালে ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ওয়ার্নার। তবে ওয়ানডেতে বিশ্বে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় ১৫ স্থানে ছিলেন তিনি। ১৩ ম্যাচে ৬৯১ রান করেছেন এই বাঁ-হাতি ওপেনা। ফলে সীমিত ওভারের বর্ষসেরা হন তিনি। আর ধুন্ধমার ছোট ফরম্যাটের টি২০তে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চ। ৫ ম্যাচে ১৫৮ রান ছিল এই ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের। ২১ বছর বয়সী জে রিচার্ডসন হয়েছেন ব্র্যাডম্যান বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড়। সময়ের নারী ক্রিকেটের অন্যতমসেরা এলিস পেরির কথাও আলাদা করে বলতে হবে। গত বছরই ডিসেম্বরে ঘোষিত নিউজিল্যান্ডের এ্যামি স্যাটার্থওয়েট ও ভারতের হারমানপ্রিত কৌরকে টপকে ২০১৭ আইসিসিসির (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটার নির্বাচিত হন অস্ট্রেলিয়ান তারকা অলরাউন্ডার এলিস পেরি। সর্বোপরি বর্ষসেরার পুরস্কার না জিতলেও বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটার হয়েছেন স্যাটার্থওয়েট। আর পেরির সতীর্থ বেথ মুনির মুকুটে উঠেছে সেরা টি২০ ক্রিকেটারের স্মারক, সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারও হয়েছেন তিনিই। পুরস্কারের জন্য বিবেচিত সময় ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭-এর ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওয়ানডেতে ১৯ ম্যাচে ৯০৫ রান করেন পেরি। মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে নেন ২২ উইকেট। ২৭ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডার গত নবেম্বরে নর্থ সিডনি ওভালে এ্যাশেজের দিবারাত্রির টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিকে ডাবলে রূপান্তর করেন, খেলেন অপরাজিত ২১৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। যেটি অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত টেস্ট ইনিংসের রেকর্ড। ‘বর্ষসেরার পুরস্কার জেতাটা আনন্দের ও সম্মানের। এই খেলাটার জন্য র‌্যাচেলের অবিশ্বাস্য অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি আমি।’ উল্লেখ্য, এবার থেকে আইসিসি বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটারের পুরস্কারটি র‌্যাচেল হেহো ফ্লিন্টের নামে করা হয়েছে। গত বছরই না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো ইংল্যান্ডের প্রাক্তন এই ক্রিকেটারকে সম্মানিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি। গত বছরের পারফর্মেন্সের জন্য সর্বোপরি আইসিসির বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন বিরাট কোহলি। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ককে টেক্কা দিয়েছেন ভারত অধিনায়। তবে মেয়েদের ক্রিকেটে কিন্তু ঠিকই ভারতীয়দের পেছনে ফেলে বর্ষসেরা হন অস্ট্রেলিয়ার একজন। তিনি হালের প্রমীলা ক্রিকেটের আইকন এলিস পেরি। স্মিথ অবশ্য কেবল টেস্টের বর্ষসেরা নির্বাচিত হন। কোহলির মতো স্মিথও বিরল প্রতিভাধর এক ক্রিকেটার। এত অল্প বয়সে দায়িত্ব পাওয়ার পরও সেটি তার ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলেনি। বরং সব ফরমেটেই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। গতবার ইংল্যান্ডের মাটিতে এ্যাশেজ খোয়ানোর পর সেসময়ের অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কসহ পাঁচজন সিনিয়ার ক্রিকেটর একসঙ্গে অবসর নিলে কার্যত বেসামাল হয়ে পড়ে কুলিন দেশটি। হারে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। সেখান থেকেই নতুন সব ক্রিকেটার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গৌরব পুনরুদ্ধার করেন স্মিথ। এবার ঘরের মটিতে ৫ টেস্টের এ্যাশেজ জেতেন ৪-০ ব্যবধানে। তুখোড় এই উইলোবাজ কিংবদন্তির পথেই হাটছেন। তার হাতে বর্ষসেরার বোর্ডার পদক তুলে দিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও হয়ত তৃপ্তি বোধ করবে।
×