ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় নেতা থেকে খালেদা এখন আন্তর্জাতিক নেতা ॥ মোশাররফ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জাতীয় নেতা থেকে খালেদা এখন আন্তর্জাতিক নেতা ॥ মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচী পালন করে দলটি। এতে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও যোগ দেন। এতে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ কারণেই খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এদিকে একই দাবিতে আজ বুধবার সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ব নির্ধারিত অনশন কর্মসূচী পালন করবে বিএনপি। ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় পাঁচ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। তাকে পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে পরিত্যক্ত কারাগারে রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে সরকার। এ জন্য একদিন তাদের বিচার হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে সরকার মনে করছে দেশের মানুষকে স্তব্ধ করা যাবে, দমিয়ে রাখা যাবে। কিন্তু সেটা করা যাবে না। দেশের মানুষ অবশ্যই কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। কারণ, তিনি ১৭ কোটি মানুষের নেত্রী। এখনও তিনি যখন রাজপথে আসেন তখন লাখ লাখ মানুষ তার পেছনে থাকেন। বিএনপির আন্দোলনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন জানিয়ে ফখরুল বলেন, তার বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমাদের এই সংগ্রাম, এই লড়াই গণতন্ত্রকে মুক্ত করার লড়াই। খালেদা জিয়ার মুক্তির লড়াই। দেশের মানুষকে মুক্ত করার লড়াই। তিনি বলেন, এ সরকার খালেদা জিয়াসহ ১৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী খালেদা জিয়াকে বানোয়াট মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারপর কারাগারে অন্যায়ভাবে ডিভিশন থেকে বঞ্চিত করেছে। কারাগারে যাওয়ায় খালেদা জিয়া আরও শক্তিশালী হয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এখন জাতীয় নেতা থেকে আন্তর্জাতিক নেতা হয়েছেন। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জনসমুদ্র দেখে ভয় পেয়ে সরকার আজ আমাদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে কর্মসূচী করতে দেয়নি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী শক্তি নির্বাচনে যাবে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কবর রচনা হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অল্প সময়ে হাজার হাজার জনতার উপস্থিতি প্রমাণ করে খালেদা জিয়া দ্রুত ফিরে আসবেন। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় সরকার তাকে জেলে পাঠিয়েছে। নির্জন কারাগারে পাঠিয়ে প্রমাণ করল তারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার মামলায় বিচারের নামে প্রহসন করে সরকারের ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছে। আমরা সুবিচার পাইনি। আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাসী। তাই আইনীভাবে মোকাবেলা করছি। তারেক রহমানের নির্দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অবস্থান কর্মসূচীর জায়গা পরিবর্তনের কারণে অনেকের কষ্ট হয়েছে। এ জন্য আমরা দায়ী নই। আমরা প্রেসক্লাবে করতে চেয়েছিলাম, দেয়া হয়নি। পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইসস্টিটিউশনে করতে চেয়েছি সেখানেও করতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বন্দী মানে গণতন্ত্র বন্দী। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব। তিনি আরও বলেন, বিএনপিতে ভাঙ্গন ধরানোর ক্ষমতা দেশের কারও নেই। অনেকে ভেবেছেন কিছু একটা হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ কিছুই হবে না। সরকারকে ধন্যবাদ কারণ, আমরা খালেদা জিয়াকে দেশনেত্রী বানিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা তাকে নেলসন মেন্ডেলা বানিয়ে দিয়েছেন। অবস্থান কর্মসূচীতে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নাল আবদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, তথ্য গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু প্রমুখ। এছাড়া ২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম, এনপিপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপি নেতা মঞ্জুর হোসেন ঈশা প্রমুখ। বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক ॥ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। বৈঠকে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি অবহিত করেছেন। এ ছাড়া তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য বিদেশী কূটনীতিকদের সহযোগিতা চান। বৈঠকে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল প্রমুখ। বিদেশী কূটনীতিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ভারত, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, পাকিস্তান, জাপান, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, জার্মানি ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা। উল্লেখ্য, এর আগে খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের আগে ৩০ জানুয়ারি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল বিএনপি। তখন দলের পক্ষ থেকে ৬ পাতার একটি লিখিত কপি কূটনীতিকদের হাতে দেয়া হয়েছিল। সেখানে খালেদা জিয়ার মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল।
×