ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওজন কমানোর কিছু টিপস

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ওজন কমানোর কিছু টিপস

ওজন কমানো যে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার তাতে সন্দেহ নেই। তবে বিজ্ঞানের নতুন তথ্যে জানা গেছে যে, কিছু কিছু বিস্ময়কর অভ্যাসগত পরিবর্তন- যেমন একটু বেশি করে ঘুমানো থেকে শুরু করে ডায়েট সোডা বাদ দেয়া ওজন হ্রাসের লক্ষ্য অর্জনে অনেক সহায়ক হতে পারে। ওজন কমাতে এখানে ৮টি টিপস দেয়া হলো। ভালমতো প্রাতরাশ করুন সারা দিনের যতগুলো খাবার আছে তার মধ্যে প্রাতরাশ হতে পারে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে উপকারী খাবার। কথাটা আগে থেকেই প্রচলিত। তবে এ সংক্রান্ত প্রমাণ আরও বেশি বেশি করে পাওয়া যাচ্ছে আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজির জার্নালে। সেখানে বলা হয়েছে যারা প্রাতরাশ এড়িয়ে চলে তাদের ওজন বাড়ার এবং ধমনীতে বিপজ্জনক চর্বি জমা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ব্যাপারে গবেষকরা স্পেনে বসবাসরত চল্লিশ ও পঞ্চাশের ঘরের চার হাজারেরও বেশি লোকের প্রাতরাশের অভ্যাস বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। কিছু লোক সকালের খাবার একেবারেই বাদ দিয়ে গেছেন। তবে বেশিরভাগ লোকই খেয়েছে টোস্ট বা ছোট পেস্ট্রির মতো স্বল্প ক্যালরিযুক্ত খাবার। অন্যরা যারা তৃপ্তির সঙ্গে মোটামুটি ভরপেট নাস্তা করেছে তার মধ্যে ছিল তাদের দৈনিক গৃহীত ক্যালোরির ২০ শতাংশেরও বেশি। যারা প্রাতরাশ এড়িয়ে গেছে বা অতি সামান্য খেয়েছে ভালভাবে স্বাস্থ্যসম্মত প্রাতরাশ করা ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের ধমনীতে চর্বি জমা হওয়ার লক্ষণ বেশি দেখা গেছে। তাদের মোটা হওয়ার ওজন বেশি হওয়ার, কোমরের বেড় বেড়ে যাওয়ার বডি ম্যাস ইনডেক্স বেশি হওয়ার, রক্তচাপ। কোলেস্টেরল এবং খালি পেটে থাকা অবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ারও লক্ষণ ধরা পড়েছে। প্রাতরাশ এড়িয়ে গেলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও দেখা দেয় এবং দিনের পরবর্তী সময়ে অধিক ক্যালরিযুক্ত এবং স্বাস্থ্যের জন্য অধিক ক্ষতিকারক খাবার খাওয়া হয়ে যায়। কোক ইত্যাদি পরিহার করুন ওজন কমাতে হলে চিনিযুক্ত সোডা পরিহার করুন কিংবা কম খান। সপ্তাহে একটা করে ক্যান কম খেলে দু’বছরে এক পাউন্ড ওজন কমতে পারে বলে এক জরিপে দেখা গেছে। কোমরের বেড় বেশি হওয়ার সঙ্গে চিনিযুক্ত পানীয়ের যে সম্পর্ক আছে তা অসংখ্য সমীক্ষায় দেখা গেছে। এ আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। যারা ওজন ঝরানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাদের কোক ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করা বা কমিয়ে দেয়া অতি জরুরী। ইতালিয়ানের মতো খান ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বিশেষ করে ইতালিয়ান খাবারের উপকারিতার জুড়ি নেই। ইউএস নিউজ এ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্টের ২০১৮ সালের সেরা খাবারের মর্যাদা পেয়েছে এটি। কম চর্বিযুক্ত খাবার না হলেও এই খাবারের নানা উপকারিতা আছে এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, আয়ু বাড়ায় এমনকি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ভূ-মধ্যসাগরীয় ডায়েট চিকিৎসক, ডায়েটিশিয়ান ও ভোজনরসিক নির্বিশেষে সবার কাছে কেন এত প্রিয়? কারণ এই ডায়েটে প্রচুর ফল, সবজি, বাদাম, দানাদার শস্য, অলিভ অয়েল ও চর্বিযুক্ত প্রাণিজ প্রোটিন থাকে। রেড মিট ও অন্যান্য সম্পৃক্ত চর্বি থাকে কম এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পরিশোধন করা চিনিও থাকে অল্প পরিমাণে ইতালি ও স্পেনের মতো ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোর এগুলোই হলো ঐতিহ্যবাহী খাবার। ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাবারের অনেক উপকারিতা আছে। এমন ডায়েট অনুসরণ করা হলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ স্তনক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এর একটা কারণ এসব খাবারের মধ্যে প্রদাহনাশক ও এ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে। ভূ-মধ্যসাগরীয় খাবারের বৈশিষ্ট্য হলো এতে প্রচুর ফল ও সবজি থাকে। নানা রঙের রকমারি সবজি থাকার অর্থ হলো এতে বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যাল ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের মিশ্রণ থাকছে। অলিভ অয়েল, বাদাম ও এ্যাভোকাডোর মিশ্রণ খাদ্যের পুষ্টি উপাদানকে আরও সমৃদ্ধ করে। ডায়েটে রুটি ও নাস্তারও স্থান আছে। তবে হোলগ্রেইন ও হোলহুইটকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ এগুলো খাদ্যে আঁশ যোগায়। এগুলো খেলে দ্রুত পেট ভরে যায় বলে মনে হয়। প্রাণিজ আমিষের কথা এলে মুরগি ও মাছের মতো কম চর্বিযুক্ত আমিষের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ডিম, পনির ও দইও ডায়েটের অংশ হতে পারে। সেই সঙ্গে প্রচুর পানিও খেতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ওজন কমানোর গুরু রহস্য। তবে ব্যায়ামের গুরুত্বও কিছুমাত্র কম নয়। ব্যায়াম শরীরে জমা বাড়তি ক্যালরি পুড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্যে করে। ওজন কমাতে হলে আপনি যতটা ক্যালরি গ্রহণ করছেন তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলা প্রয়োজন। তাছাড়া ব্যায়াম হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মেদবহুলতা, অস্টিও পোরোসিস ও কয়েক ধরনের ক্যান্সারসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে ওজন কমাতে হলে ভাল ঘুম হওয়া প্রয়োজন। রাতে অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম হলে চিনি খাওয়ার চাহিদা কমে যায়। পরোক্ষভাবে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে। ঘুম হলো মস্তিষ্কের পুষ্টির মতো। বেশিরভাগ মানুষের রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। এর কম ঘুম হলে শরীরে প্রতিক্রিয়া হয় যা খাদ্য গ্রহণের ওপর প্রভাব ফেলে। কিভাবে? অপর্যাপ্ত ঘুম ক্ষুধাকে প্রভাবিতকারী হরমোনগুলোকে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে দুটি হরমোন হলো ঘ্রেলিন ও লেপটিন। ঘ্রেলিন মস্তিষ্কে এই সঙ্কেত পাঠায় যে এখন খাবার সময় হয়েছে। ঘুম না হলে শরীর বেশি পরিমাণে ঘ্রেলিন তৈরি করে। অন্যদিকে লেপটিন মস্তিষ্ককে সঙ্কেত পাঠায় যে এখন খাওয়া চলবে না বা কম খেতে হবে। ঘুম না হলে বা কম হলে লেপটিনের মাত্রা কমে যায়। ফলে মস্তিষ্ক কম খাওয়ার বা না খাওয়ার সঙ্কেত পায় না। ফলে ঘুম কম হওয়ার কারণে একটি হরমোনের সক্রিয়তা বেড়ে যাওয়া এবং অন্যটির কমে যাওয়ার শরীরে বেশি খাওয়ার তাড়না সৃষ্টি হয় এবং বেশি খাওয়ার কারণে ওজনও যায় বেড়ে। ধীরে সুস্থে খান পুরো খাবার ভালমতো চিবিয়ে খাওয়া হজমের জন্যই যে শুধু ভাল তাই নয়, এতে পেট ভরে খাওয়ার অনুভূতি হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, এমনকি কমানোও যায়। একদল লোকের ওপর ৮ বছর মেয়াদী এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, যারা দ্রুত খেয়েছে তাদের তুলনায় যারা ধীরে ধীরে খেয়েছে তাদের ওজন বৃদ্ধি কম হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যা খাবার ভালমতো চিবিয়ে খেলে হজমের সময় শরীরের পুড়িয়ে ফেলা ক্যালরির পরিমাণ বাড়ে। ৩০০ ক্যালরির খাবারের ক্ষেত্রে বাড়তি ১০ ক্যালরি পুড়ে। অন্যদিকে দ্রুত খেলে কোন ক্যালরি বলতে গেলে পুড়ে না। বরং মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ে। এটা হলো বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার সমষ্টি যার একটি হলো তলপেটে বাড়তি চর্বি জমা হওয়া। কৃত্রিম চিনি বর্জন করুন কৃত্রিম চিনি ওজন বাড়ায়। এমন চিনি খাওয়া ৪ লাখের বেশি লোকের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে যারা ওজন বৃদ্ধি ঠেকাতে এমন চিনি খেয়েছে তাদের ওজন তো কমেইনি বরং বেড়েছে। যারা নিয়মিত এমন চিনি খেয়েছে কিংবা এই চিনিযুক্ত পানীয় পান করেছে তাদের ওজন বৃদ্ধি মেদবহুলতা, ডায়াবেটিস ও অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বেড়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা, কৃত্রিম চিনি মানুষের মধ্যে অধিকতর মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি তাড়না সৃষ্টি করে এবং শরীরে প্রকৃত চিনির বিপাকক্রিয়া ঘটানোর পথে ব্যাঘাত ঘটায়। ওজন একটু বাড়লে হতাশ হবেন না ওজন কমানোর ব্যায়াম শুরু করার পর অল্প কয়েক পাউন্ড ওজন বাড়লে হতাশ হবেন না। ওজন বাড়লেই যে শরীরে বাড়তি মেদ জমা হয়েছে এটা নিশ্চিতভাবে মনে করার কারণ নেই। স্বল্পমেয়াদী ওজন পরিবর্তনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী হলো পানি। বাইরে গিয়ে কাজ শুরু করলে ও শরীর ঘামালে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। ডিহাইড্রেশন ঠেকানোর জন্য শরীর অনেক সময় বাড়তি পানি জমিয়ে রাখে যার জন্য সামান্য কিছু ওজন বাড়তে পারে। সেই হিসেবে ব্যায়াম বাদ দিলে প্রথম দিকে কয়েক পাউন্ড ওজন কমতে পারে। সূত্র : টাইম
×