ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টিকেটে মক্কা মদিনার বাড়ির ঠিকানা না থাকলে জেদ্দা থেকেই ফেরত

প্রকাশিত: ০৫:১১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

টিকেটে মক্কা মদিনার বাড়ির ঠিকানা না থাকলে জেদ্দা থেকেই ফেরত

আজাদ সুলায়মান ॥ এবার প্রত্যেক হজযাত্রীর টিকেটের পেছনে মক্কা-মদীনার বাড়ির ঠিকানা লেখা থাকতে হবে। নইলে জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকেই তাকে ফেরত দেয়া হবে। একইভাবে টিকেটের টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে এয়ারলাইন্সের এ্যাকাউন্টে। কিছুতেই সে টাকা ব্যাংক থেকে কোন এজেন্সি তার এ্যাকাউন্টে নিতে পারবে না। এ ধরনের বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাবনা রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে এবারের হজ নীতিমালা। হজযাত্রীদের সার্বিক কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ধর্মসচিব আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, নীতিমালার কাজ প্রায় শেষ। আগামীকাল চলে যাবে কেবিনেট শাখায়। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহেই এ নীতিমালা কেবিনেট বৈঠকে অনুমোদিত হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিবছরই হজ প্যাকেজের সব টাকা আগাম পরিশোধ করে ভিসা থাকার পরও শুধু টিকেটের টাকা নিয়ে ঝামেলার কারণে হজে যাওয়া হয় না অনেক হজযাত্রীর। বছরকয়েক আগেও এ ধরনের প্রতারিত শত শত হজযাত্রীকে হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছরও এ ধরনের প্রায় এক শত প্রতারিত হজযাত্রী টিকেটের টাকা পরিশোধ করেও হজে যেতে পাারেননি। দালাল-ফড়িয়া ও সাব এজেন্ট টিকেটের টাকা আত্মসাত করার দরুন এবার এ ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। এবারের নীতিমালায় ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা দেয়া বিমানের টিকেটের টাকা কিছুতেই মূল বা সাব এজেন্ট উত্তোলন করতে পারবে না। হজ প্যাকেজের ঘোষিত টাকা ব্যাংকে জমার পরপরই তা চলে যাবে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের এ্যাকাউন্টে। ধর্মসচিব আনিসুর রহমান জানান, গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকেই এবার প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে কিছুতেই ব্যাংকে জমা দেয়া টিকেটের টাকা প্রকৃত পাওনাদার এয়ারলাইন্স ছাড়া কেউ গোপনে বা প্রকাশ্যে তুলে নিতে না পারে। এটার ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে প্রস্তাবিত নীতিমালায়। অপর প্রস্তাবনা হচ্ছে-টিকেটের পেছনে মক্কা-মদীনার হোটেলের নাম-ঠিকানা লেখার বাধ্যবাধকতা। ঢাকা থেকে হজযাত্রী ফ্লাইটের টিকেট যখন বুঝে পাবেন, তখনই তার পেছনে মক্কা-মদীনার যেই বাড়ি বা হোটেলে থাকবেন তার নাম-ঠিকানা ও ফোন নাম্বার লিখে দেয়া হবে। যাতে জেদ্দা বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার প্রতিনিধিরা বুঝতে পারেন ইতোমধ্যে তার বাড়িভাড়া নিশ্চিত করা হয়েছে। গত বছর অনেক হজযাত্রীকে বাড়িভাড়া না করেই ঢাকা থেকে মক্কা নেয়া হয়। সেখানে তাদের হেরেম শরীফ থেকে অনেক দূরে দুর্গম পাহাড়ী এলাকার বাসা বাড়িতে রাখা হয়। এয়ারকন্ডিশন নেই এমন বাড়ি ঘর, এমনকি কবুতরের খোপের মধ্যে হজযাত্রীদের রাখা হয়। এ নিয়ে সে সময় জনকণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় চলে। পরে ওই এজেন্সিকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। গতবারের মতো এহেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আর যাতে কোন হজযাত্রীকে পড়তে না হয় সেজন্য এবার ঢাকা থেকেই হজযাত্রীর সুনির্দিষ্ট বাসা বাড়ি বা হোটেলের ঠিকানা নিশ্চিত করতে হবে। যদি কোন এজেন্ট এই কাজটি না করে তাহলে ওই হজযাত্রীকে ফ্লাইটের টিকেট দেয়া হবে না। নীতিমালার আরও একটি নতুন প্রস্তাব হচ্ছে- হজযাত্রীর কাছ থেকে পুরো প্যাকেজের টাকা জমা নেয়ার পরই তাকে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করা হবে। টাকা বাকি রেখে কোন রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ থাকছে না এবার। এতে করে মাঠ পর্যায়ের দালাল বা সাব এজেন্টরা ইচ্ছে করলেও সাড়ে তিন লাখ টাকার প্যাকেজের চেয়ে কমিয়ে তার খেয়াল খুশিমতো দুই বা আড়াই লাখ টাকা নিতে পারবে না। এক্ষেত্রে তাকে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দেয়া হবে না। এবার রিপ্লেসমেন্টের বিষয়ে খুব কড়াকড়ি করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। গত বছর প্রথমে ছিল ৫ পার্সেন্ট। পরে সেটা ১৫ পার্সেন্ট করা হয়। এবার তা কিছুতেই ৫ পার্সেন্টের বেশি করা হবে না বলে জানিয়েছেন সচিব আনিসুর রহমান। তিনি বলেন- মৃত্যু ও গুরুতর অসুস্থতাজনিত কারণ ছাড়া অতিরিক্ত রিপ্লেসমেন্ট হবে না। আগামী সপ্তাহেই হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হবে। তাই এজেন্সিগুলো রিপ্লেসমেন্টের অতিরিক্ত যাত্রী পাবেন- এমন আশা না করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এ বিষয়ে ধর্ম সচিব আনিসুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন নীতিমালায় এ ধরনের আরও কয়েকটি প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে যা শুধু হজযাত্রীদের কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য। এ দিক থেকে বলতে পারেন এটা হাজী আনুকুল্য নীতিমালা। নির্ভেজাল ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হজের সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই এবারের নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে রবিবার হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন বিমানের টিকেটের দাম বাড়ানোর জন্য এবারের নীতিমালায় প্যাকেজ ব্যয় বাড়বে। এ জন্য বিমানের এমডির পদত্যাগ দাবি করে দুদকের কাছে তদন্তে দাবি জানান পরিষদ সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুলাহ আল নাসের। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত বছর হজে বিমান ভাড়া এক লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা থাকলেও এ বছর ১৬৩৩ মার্কিন ডলার বা প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে বিমান। যা সম্পূর্ণ অন্যায় সিদ্ধান্ত। এতে হাজীদের কাছ থেকে ৩৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বেশি নেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিমানের পরিচালক আলী আহসান বাবু বলেন, বিমানের এমডির একক ইচ্ছায় এখানে কিছুই করা হচ্ছে না। গতবারের তুলনায় এবার তেলের দাম বাড়ায় ভাড়ার সঙ্গে তা সামঞ্জস্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করে দিয়েছে। আজ সে রিপোর্ট পাবার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা নিয়ে কেউ যদি এমডি বিরুদ্ধে বিষোদগার করে সেটা হবে একান্তই ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার প্রতিফলন। এদিকে প্রথমবারের মতো রাজধানীসহ জেলা শহরে হজ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত বুধবার রাজধানীর আশকোনা হজক্যাম্পে বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের উদ্যোগে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের বিষয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ঘোষণাও দেন। জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাফিজ-উদ্দিন আহমেদ জানান, এ বছর হজ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। প্রথমবারের মতো হজ প্রশিক্ষণ গাইডলাইন তৈরি হয়েছে। গাইডলাইনের ভিত্তিতে সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছর শতকরা এক থেকে দুই ভাগ হজযাত্রী হজে যেতে পারতেন না। কিন্তু গত বছর ধর্মমন্ত্রীর নেতৃত্বে আন্তরিকতার সঙ্গে সব কাজ সম্পন্ন করায় মাত্র ১৯৮ জন যাত্রী হজে যেতে পারেননি। কয়েকটি হজ এজেন্সির গাফিলতি এবং হজযাত্রীদের অকাল মৃত্যুতে ১৯৮ জন হজে যেতে পারেননি। শতকরা হিসেবে এ সংখ্যা খুবই নগণ্য। গত বছর হজ ফ্লাইটে বিপর্যয় দেখা দেয়। ২৪টি ফ্লাইট বাতিল হয়। হাজার হাজার হজযাত্রীর হজপালন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এ বছর সরকারী ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার এবং বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ জনসহ মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন।
×