ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাজমা আক্তার রোজী

অভিমত ॥ অপপ্রচার কেন?

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অভিমত ॥ অপপ্রচার কেন?

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতিবাজ সাব্যস্ত করে ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ে ফৌজদারি দণ্ড বিধির ৪০৯ ধারায়, ক্ষমতায় থেকে অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে ‘অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের’ কারণে ‘বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড’ দিয়েছে বিচারিক আদালত। আর এতেই বিএনপির নেতাকর্মীসহ কতিপয় সুশীল নামধারী ব্যক্তি-মহল রং-চং মিশিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে উঠে পড়ে লেগেছে। লন্ডনে বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর ছবির প্রতি অবমাননা করে তাদের নোংরা মনমানসিকতার বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে। এটা শুধু দুঃখজনকই নয়; এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অপসংস্কৃতি যা বিএনপি তাদের ২০০১ থেকে ২০০৬ এবং ২০১৩-১৪ সালের পেট্রোলবোমা মানুষ হত্যার বর্বরতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি বলে প্রতীয়মান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুদকের করা মামলায় এখানে শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কী দোষ! কেন তাদের ঘিরে সমালোচনা ও ছবিকে নিয়ে অবমাননা করতে হবে? যদি শেখ হাসিনার সরকার এই মামলায় কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করত তাহলে (১) দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই মামলার সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে খালেদা জিয়া যেমন বঞ্চিত হত (২) খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তিই বিচারিক আদালত কর্তৃক প্রদান করা হতো। দীর্ঘ এই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে মোট ২৬১ কার্যদিবসে বসেছে আদালত। এর মধ্যে ২৩৬ কার্য দিবসে রাষ্ট্রপক্ষ হতে ৩২ জন সাক্ষ্য দিয়েছে এবং আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছে ২৮ কার্যদিবস পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, দশ বছরেরও অধিক সময়ের এই বিচার প্রক্রিয়ায় মামলা থেকে রেহাই পেতে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেছেন বার বার। তাঁর অনাস্থার কারণে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে তিনবার এ মামলার বিচারক বদল করেছে। শুনানিতে হাজির না হওয়ায় তিনবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। খালেদা জিয়া যেভাবে চেয়েছে আদালত একজন সাবেক প্রধামন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার সকল কথার গুরুত্ব দিয়েছে। বিচারিক আদালত স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়- এই ধরনের বক্তব্যও খালেদা জিয়ার মুখ থেকে ধৈর্য সহকারে শুনেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত, খালেদা জিয়ার আইনজীবীসহ খোদ বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীরাও জানে না প্রকৃত পক্ষে এতিমখানা কোথায় বা আদৌ এতিমখানা হয়েছে কীনা! আবার অন্যদিকে অনুসন্ধানী সংবাদকর্মীরাও কবে, কীভাবে, কোন ব্যাংকে, কোন এ্যাকাউন্টে, কতটাকা, কে কীভাবে লোপাট করেছে তার বিস্তারিত বিবরণও তুলে ধরেছে। তাহলে কি এখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলেই বিএনপির সিনিয়র-জুনিয়র নেতাকর্মীর সঙ্গে সঙ্গে খোদ খালেদা জিয়াও এ নিয়ে মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করেছে। যারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে, যারা জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় বন্দী রেখে নিমর্মভাবে খুন করে খুনীর বিচারকে নিষিদ্ধ করে; তারা আর যাই হোক, আইনের শাসন মানতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিএনপি কতটুকু বিচারহীনতার সংস্কৃতির গভীরে গিয়েছে যখন তাদের নেতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচারের ব্যবস্থা থেকে আজও দূরে থাকে। খালেদা জিয়া শুধু একজন বিএনপির চেয়ারপার্সনই নয়, তিঁনি জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্ত্রীও। তিনিও তাঁর স্বামী হত্যার বিচার করেনি। অন্যদিকে তারেক জিয়া হাওয়া ভবনে লাশের ষড়যন্ত্র করলেও তাঁর বাবাকে যারা লাশ বানিয়েছে সেই অপরাধীদের খুঁজে বের করার বিপরীতে শেখ হাসিনার মতো মমতাময়ী নেত্রীকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড মেরে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল! জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- হয়েছে। এটা শুধু জাতির জন্য দুঃখজনক নয়। এটা শেখ হাসিনার জন্য দুঃখজনক। কারণ তিনিও একজন নারী। আর নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শেখ হাসিনা শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি জাতির পিতার কন্যা। তিনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাঁর বাবাসহ পরিবারের ছোট্ট রাসেলকে পর্যন্ত হত্যার কথা, দেশে আসতে না দেয়ার যন্ত্রণার কথা, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার কথা ক্ষণিকের জন্য ভুলে গিয়ে সন্তানহারা মা খালেদা জিয়ার বাড়িতে গিয়েছিল তাঁর মমতা আর ভালবাসা নিয়ে। লজ্জাজনক হলেও সত্য, বাড়ির দরজা থেকে রীতিমতো তাড়িয়ে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে। বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার ৫ বছরের সশ্রম কারাদ- হয়েছে। সামনে আপীলের ব্যবস্থা আছে। সুপ্রীম কোর্ট আছে। তার পরেও আপিল বিভাগ আছে। বিএনপির উচিত হবে আইনী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়া। হতাশ না হয়ে মামলা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা। মিথ্যাচার, অপপ্রচার বন্ধ করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা। মিথ্যাচার, অপপ্রচার শুধু জাতিকে ভিভ্রান্তই করে না, একটা সময় নিজের গ্রহণযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। আধুনিক সভ্যতায় মানুষ অনেক দূর এগিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদেরও এগিয়ে যেতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা বিএনপির নেতাকর্মীদের শুধু গ্রহণযোগ্যতাই বাড়াবে না, সভ্যতার বহির্প্রকাশও ঘটাবে। আর সেটাই জাতির প্রত্যাশা। লেখক : সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)
×