ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিপর্যয় ধেয়ে আসছে এন্টার্কটিকা থেকে

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বিপর্যয় ধেয়ে আসছে এন্টার্কটিকা থেকে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভয়াবহ পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পৃথিবী। তা থেকে সুদূর উত্তরের আর্কটিক অঞ্চল ও দক্ষিণের এন্টার্কটিকা মহাদেশও রেহাই পাচ্ছে না। অর্থাৎ পৃথিবীর কোন অংশই আর এর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মুক্ত নয়। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে উভয় মেরুর চারপাশের সাগরের বরফ বছরের ওই সময়টায় রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। গত জুলাই মাসে মোটামুটি ডেলাওযাবের সাইজের সমান এক ট্রিলিয়ন টন আইসবার্গ পশ্চিম এন্টার্কটিকার লারসেন-সি আইস শেলস্্ থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেছে। পৃথিবীর বায়ু উষ্ণ হয়ে ওঠায় বরফের এই ক্ষতিটা যে শুধু উপর দিক থেকে হয়েছে তা নয়, সমুদ্রও উষ্ণ হয়ে ওঠায় নিচের দিক থেকেও হয়েছে। আর্কটিক বা সুমেরু সাগরের বরফ গলে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পরিবেশগত বিপর্যয় বোঝার জন্য যথেষ্ট। তবে এন্টার্কটিকা বা কুমেরু মহাদেশকে ঢেকে রাখা বরফ গলার ব্যাপারটা সত্যিকারের আরও বৃহত্তর বিপর্যয় বা দুর্যোগের ইঙ্গিত বহন করে। ২০১৭ সালের এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন যদি বর্তমান হারেই চলতে থাকে তাহলে এ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই সাগরের জলস্তর ৪ ফুট বেড়ে গিয়ে সারা বিশ্বে ও নিচু এলাকাগুলো গ্রাস করে নিতে পারে। আরও সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক পরিণতিতে এন্টার্কটিকার পূর্ব প্রান্তে তুষারপাত বেড়ে যাবে। এতে করে গলে যাওয়া বরফের খানিকটা পুনরুদ্ধার হবে। তাতে সাগরের জলস্তর বৃদ্ধির হার মন্থর হতে পারে মাত্র, তাই বলে তা বন্ধ হবে না। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুর গতিপ্রকৃতি দেখার জন্য বেশ আগে থেকেই নাসা সেখানে স্যাটেলাইট মোতায়েন করে রেখেছে। ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নাসার আইসিই স্যাট স্যাটেলাইট দুই মেরু অঞ্চলের বরফের ওপর দৃষ্টি রেখে উত্তর-দক্ষিণ কক্ষ পথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছে। তবে আইসিই স্যাট ভূমি থেকে কমসে কম ৩৬৪ মাইল ওপর দিয়ে গেছে। এ বছর ছাড়া হবে আইসিই স্যাট-২। সেটিও একই উচ্চতা দিয়ে যাবে। অথচ অতি নিখুঁত পর্যবেক্ষণের জন্য আরও নিচ দিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য বসেছে নাসার আইসব্রিজ মিশন। এতে বিমানে করে নিচু দিয়ে দুই মেরু অঞ্চলের ওপর উড়ে যাওয়ার সময় বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন নিচের অবস্থা। তাদের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণমূলক মিশন থেকে অতি নিরাপদ চিত্র বেরিয়ে এসেছে। দেখা গেছে বরফ মোড়া সুবিস্তীর্ণ এন্টার্কটিকা এখন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতি বিপজ্জনক ঝুঁকির মুখে। সেখানে ৭ হাজার বছরের মধ্যে সম্ভবত প্রথমবারের মতো একটা ঘটনা ঘটছে। তা হলো মহাসাগরের উচ্চতর জলরাশি উর্ধমুখে সাগরপৃষ্ঠের দিকে উঠে আসছে এবং তার পরিণতিতে মহাদেশকে ঘিরে থাকা সাগরের বরফের তাক ধসে পড়ছে, ফাটল ধরছে এবং ফেটে ও ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এমনও অনেক স্থান আছে যেখানে বরফ ফেটে দানা দানা অবস্থা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও ফাটলের অবস্থা এমন যে আমাদের দেশে খরার সময় ক্ষেতের মাটি ফেটে যেমন চৌচির অবস্থা ধারণ করে অনেকটা সে রকম। বরফের তাক কোথাও কোথাও গলে পাতলা ও হাল্কা হয়ে গেছে। কোথাও তা এক একটা বিশাল চাইয়ের আকারে মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সাগরে ভাসছে। কোন কোন চাই ১০০ ফুট পুরু। অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচের দিকে এর ব্যাপ্তি দশ তলা ভবনের সমান। এন্টার্কটিকার পাইন আইল্যান্ড বে নামে একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে, সেখানে দুটো হিমবাহর হাতে মানব সভ্যতা জিম্মি হয়ে আছে। দেড় শ’ মাইল লম্বা এই দুটো হিমবাহর নাম পাইন আইল্যান্ড ও থোয়াইটস। হিমবাহ দুটি বৈশ্বিক উষ্ণয়নের কারণে দ্রুত গলছে। দুটো হিমবাহ এত বরফ ধারণ করে আছে যে, সেগুলো সম্পূর্ণ গলে গেলে বিশ্বের মহাসাগরগুলোর পানির উচ্চতা ১১ ফুট বেড়ে যাবে এবং তখন পৃথিবীর প্রতিটি উপকূলীয় নগরী তলিয়ে যাবে। সূত্র : টাইম ও ইন্টারনেট
×