ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনে প্রাইভেসি রক্ষায় চাপ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চীনে প্রাইভেসি রক্ষায় চাপ বাড়ছে

চীনে ড্যাটা প্রাইভেসি রক্ষার ব্যাপারে জনমত সচেতন হচ্ছে, প্রবল হয়ে উঠছে। প্রাইভেসি রক্ষায় শৈথিল্যের কারণে অনেক অঘটন ঘটেছে। আর সে কারণেই গ্রাহকরা ও টেক কোম্পানিগুলো বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করছে। গত জানুয়ারি মাসে পূর্বাঞ্চলের নানজিং নগরীর এক আদালতে একটি মামলার শুনানি হয়। সরকার নিয়ন্ত্রিত ভোক্তা গ্রুপ চীনের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন বাইদুর বিরুদ্ধে মামলাটি করে। ভোক্তা গ্রুপ অভিযোগ করে যে বাইদুর একটি এ্যাপ গ্রাহকদের ফোনকল বেআইনীভাবে মনিটর করে অথচ বিষয়টি তাদের কাছে গোপন রাখে। একই সময় আলিবাবার আর্থিক অঙ্গ ‘এ্যান্ট ফিন্যান্সিয়াল’ তাদের মোবাইল মানি এ্যাপে একটা ডিফল্ট সেটিংয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। ওই এ্যাপ দিয়ে সিসেম ক্রেডিট নামে একটি ক্রেডিট স্কোরিং স্কিমে গ্রাহকদের নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে তালিকাভুক্ত হয়ে যেত এবং সেটা হতো গ্রাহকদের সম্মতি ছাড়াই। চীনের তিনটি বড় ইন্টারনেট কোম্পানির মধ্যে তৃতীয়টি টেনসেন্টের বিরুদ্ধেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চীনের অন্যতম বৃহৎ কার কোম্পানির প্রধান পনি মা অভিযোগ করেছেন যে টেনসেন্টের প্রতিষ্ঠাতা পনি মা তার কোম্পানির জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম এ্যাপ উইচ্যাটের সাহায্যে প্রতিদিনই নিশ্চয়ই সমস্ত মেসেজ দেখে নিচ্ছেন। চীনের গ্রাহকদের এমন উদ্বিগ্ন বোধ করার সঙ্গত কারণ আছে। একটি মাধ্যমের দ্বারা সংগৃহীত তথ্য আরেক মিডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। প্রাইভেসি ক্ষুণœ হওয়া সংক্রান্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বস্তুতই বাড়ছে। প্রাইভেসির চীনা শব্দ হলো ইনশি। গোপনীয়তা শব্দটির এটি হলো এক নেতিবাচক অর্থ। অপরিচিত দুই ব্যক্তির মধ্যে কথাবার্তায় যে বিষয়গুলো পাশ্চাত্যে ট্যাবু হিসেবে বিবেচিতÑ যেমন অন্যের বেতন জানতে চাওয়াÑ সেগুলো চীনে প্রায়শই আলোচিত হয়। ২০১৩ সালে জরিপে দেখা গেছে চীনের বাইরে প্রশ্নমালার জবাবদাতাদের তিন-চতুর্থাংশ বলেছে যে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য আদান প্রদান করার সময় সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। কিন্তু চীনে এমন জরিপে উত্তরদাতাদের মাত্র অর্ধেক এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়। কিন্তু এই কয়েক বছরে চীনের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনমানসিকতায় অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। তা ছাড়া অনলাইনে বেশ কিছুু অঘটনও ঘটে গেছে। দুটো কারণে চীনাদের অনলাইন বিষয়ক মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটেছে। একটা হচ্ছে অনলাইনে জালিয়াতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ। এটা চীনে এক বিশাল সমস্যা। ২০১৬ সালে ইন্টারনেট সোসাইটি অব চায়নার এক জরিপে কমপক্ষে ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানায় যে তাদের তথ্য বা ড্যাটা কোন না কোন রূপে চুরি হয়েছে। চুরির সংখ্যা বেড়েও যাচ্ছে। ‘লিগাল ডেইলি’ পত্রিকায় বলা হয় ২০১৭ সালে ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ৪ হাজার ৯০০টি ঘটনা ঘটে এবং তার পরিণতিতে ১৫ হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এটা আগের বছরের তুলনায় চুরির ঘটনা দ্বিগুণ এবং সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতারকৃত সংখ্যা ৪ গুণ। তথ্য চুরি নিয়ে উদ্বেগ প্রাইভেসি নিয়ে উদ্বেগের মতো একই না হলেও অনেক সময় একটির দ্বারা অপরটিকে বোঝানো হয়। অন্য বড় পরিবর্তনটা হলো চীনের ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর ড্যাটার নিরাপত্তা আরও ভালভাবে রক্ষার লবিষ্ঠ হিসেবে বিস্ময়কর উত্থানÑ যদিও তাদের উদ্দেশ্য মিশ্রিত। একদিকে তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে যেসব তথ্য যোগাড় করে নিচ্ছে সেগুলো উত্তরোত্তর মূল্যবান পণ্যে পরিণত হচ্ছে। কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধির ব্যবসায়ে বৈশ্বিক আধিপত্যের অন্বেষায় এসব ড্যাটাকে ব্যবহার করতে চায়। কাজেই যত বেশি সম্ভব ড্যাটা সংগ্রহ করা এবং শিথিল ড্যাটা নিরাপত্তা আইন সমর্থন করার পেছনে তাদের একটা স্বার্থ কাজ করে। অন্যদিকে চীনের গ্রাহকরা আরও কঠোর নিরাপত্তা দাবি করছে। আর পাশ্চাত্যে যেখানে চীনা কোম্পানিগুলো ব্যবসা প্রসারিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার গ্রাহকরা প্রাইভেসি নিয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন থাকছে। গত বছর কোম্পানিগুলো এই দুইয়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য কিভাবে রক্ষিত হয় তার পথ বের করার চেষ্টা করেছে। এখন মনে হয় গ্রাহকদের চাপই জয়যুক্ত হতে যাচ্ছে। ড্যাটা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক ফ্যান বলেন সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর মধ্য দিয়েই টার্নিং পয়েন্ট বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে একটা কোম্পানি সফল হবে কি হবে না তা তার ড্যাটা প্রটেকশন পলিসি দ্বারাই নির্ধারিত হবে। এ্যান্ট ফাইন্যান্সিয়ালের চীপ প্রাইভেসি অফিসার নাই ঝেংজুন বলেন, চীনের গ্রাহকরা তথ্যকে জালিয়াতির কাজে ব্যবহার বোধ করার ব্যাপার নিয়েই আর তুষ্ট নয়, তারা এখন নিজেদের প্রাইভেসি রক্ষায় নিয়ন্ত্রণ চায়। গত বছর চীন সরকার এক তদন্ত অভিযানে ১০টি ইন্টারনেট ফার্মের প্রাইভেসি নীতি পরীক্ষা করে দেখে। অন্তত পাঁচটি কোম্পানি ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলা গ্রাহকদের পক্ষে সহজতর করে তুলে ড্যাটার নিরাপত্তা বিধান উন্নত করে তুলেছে বলে লক্ষ্য করা যায়। তার ফলে সরকার চীনের ড্যাটা সুরক্ষা আইনের নিরাপত্তা নিয়ে গর্ব করতে পারছে এবং দাবি করতে পারছে যে তারা ব্যক্তিগত তথ্যকে অপরাধীদের হাত থেকে নিরাপদে রাখতে পারছে। তবে প্রাইভেসি নিয়ে জনগণ যেভাবে উত্তরোত্তর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে এবং সরকারও যেভাবে এক নতুন ধরনের নজরদারি রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে তাতে শেষ পর্যন্ত এই দুইয়ের মধ্যে অবশ্যই একটা সংঘাত দেখা দেবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×