ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিমিয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ঝিমিয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের আগ্রহের কোন লক্ষণ নেই। বরং এখনও রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো বাংলাদেশ সরকারের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে মতব্যক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সরকার টেকনাফের নাফ নদীর পশ্চিম পাড় বরাবর প্রায় ৪৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রস্থ এবং উঁচু করার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ আগামীতে অনেকাংশে রোধ হবে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ থেকে। এদিকে, রোহিঙ্গা ইস্যুটি দীর্ঘস্থায়ী যে হবে তাতে কোন এখনও দ্বিমত নেই। কেন না, মিয়ানমার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান চালিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং বিপরীতে প্রত্যাবাসনের কথা বলছে এতে বড় ধরনের ব্যত্যয় রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু সে চুক্তি বাস্তবায়নে তারা ধীরগতির পথ অবলম্বন করেছে। উপরন্তু রাখাইন রাজ্যে এখনও রোহিঙ্গাদের ওপর নানামুখী ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে। সর্বশেষ মংডুর দংখালী এলাকায় সেনা অভিযান হয়েছে। ফলে সেখান থেকে শতাধিক রোহিঙ্গা গত রবিবার সকালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত রবিবার ২১ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু রাখাইন থেকে ইয়াঙ্গুনে পাড়ি জমাবার সময় পুলিশ তাদের আটক করেছে। এদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ, ৫ জন মহিলা এবং ৪ জন শিশু রয়েছে। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামূলক। রাখাইনের বিত্তশালী পরিবারের ২১ সদস্য ইয়াঙ্গুনে চলে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। এসব রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্যের কিয়ত্ত এলাকার বাসিন্দা। অথচ সেখানকার পুলিশ বলেছে, আটককৃতরা রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা নয়, তারা অবৈধ অধিবাসী। এদিকে, উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা আগামী বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ইউএনএইচসিআরএ’র পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্যাম্পের এক তৃতীয়াংশ বসতি বন্যা প্লাবিত হতে পারে। এতে পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসকারী ৮৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি হারাতে পারে। এছাড়াও ২৩ সহস্রাধিকম রোহিঙ্গা ভূমিধসের কবলে পড়তে পারে। অপরদিকে, মূলত রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সরকার প্রায় ৪৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ প্রশস্ত ও উঁচু করার যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে এতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর বিষয়টি জড়িত রয়েছে। কক্সবাজার জেলা উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ঠিক পূর্বদিকে মিয়ানমার অবস্থিত। টেকনাফ উখিয়া ও মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে নাফ নদী প্রবাহিত। এ নদীর পশ্চিম পাড় (ডান তীর) বরাবর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ৪৭ দশমিক ৬০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং ৪৬টি পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো রয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য প্রকল্প এলাকায় নাফ নদীর লবণাক্ত পানির প্রবেশ ঠেকানোসহ বন্যা ও জোয়ারের হাত থেকে প্রকল্প এলাকায় শস্য ও জানমাল রক্ষা করা। এ বাঁধে বিজিবি সদস্যদের নিয়মিত টহল রয়েছে। তবে ইতিপূর্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বিজিবি’র পক্ষে যানযোগে নিয়মিত টহল দেয়া সম্ভব হয় না। বিজিবি সূত্র জানায়, বর্তমানে বাঁধের উপরি ভাগ ৪ দশমিক ২৭ মিটার হওয়ায় বাঁধের ওপর দিয়ে যানবাহন দিয়ে টহল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ লক্ষ্যে যান চলাচল সহজ করতে বাঁধের প্রশস্ততা বাড়ানো প্রয়োজন। এ পটভূমিতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৫ সালে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। ঐ কারিগরি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কক্সবাজার জেলার অংশে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর ৬৭/এ, ৬৭, ৬৭বি এবং ৬৮ হোল্ডারগুলোতে পুনর্বাসন প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ অর্থ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে বলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানিয়েছেন। এদিকে, বাংলাদেশে সফররত সুইস প্রেসিডেন্টের আজ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে কর্মসূচী রয়েছে। সোমবার সুইস প্রেসিডেন্টের রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে নিয়ে মঙ্গলবার করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
×