ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

’১৯ সালের জুন থেকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যান চলবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

’১৯ সালের জুন থেকে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যান চলবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৯ সালের জুন থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর আগে মার্চ মাস থেকেই যান চলাচল শুরু হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথাও জানান অর্থমন্ত্রী। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ২০১৮ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট সম্মাননা প্রদান এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে এতো ঝামেলা হয়েছে সর্বশেষ কারও কাছে সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, আমার ধারণা, আগামী বছরের জুননাগাদ আমরা অবশ্যই পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন করতে পারব। আমাদের ওবায়দুল কাদের চেয়েছিলেন, যেন এর কাজ ডিসেম্বরেই শেষ করতে পারেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না। তবে জুননাগাদ যান চলাচলের জন্য আমরা খুলে দিতে পারব। বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট বি জুয়েলিকে ‘একজন ভয়ঙ্কর ধরনের বদমাইশ’ বলে অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ওই লোকটা (জুয়েলিক) একটা অপদার্থ, ভয়ঙ্কর ধরনের বদমাইশ ও অত্যন্ত বাজে লোক। রবার্ট জুয়েলি তার মেয়াদ শেষ সময়ে এসে কনসালটেন্ট নিয়োগে ঘুষ নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে এমন অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু থেকে অর্থায়ন স্থগিত করেন। তার ষড়যন্ত্রের কারণেই পদ্মা সেতুর অর্থায়ন আটকে যায়। এ বিষয়ে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবও আমার ওপর কালি মারার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। মুহিত বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রেসিডেন্টের কারণেই আমরা চারজন মানুষ অপদস্থ হয়েছিলাম। আমি বার বার বলেছিলাম, এটা ষড়যন্ত্র। কিন্তু সেটা তখন আমলে নেয়া হয়নি। ওই সময় একমাত্র প্রধানমন্ত্রী প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন। তিনিই প্রথম বললেন, এটা ষড়যন্ত্র, বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থ নেয়া বন্ধ করে দেন। আমি তখন রাজি হইনি। আমার চিন্তা ছিল এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতেই হবে। একই সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে হবে। আমরা এই যুদ্ধ অনেক দিন চালিয়ে গেলাম। পরবর্তীতে আরেকজন নতুন প্রেসিডেন্ট আসলেন। তিনি এসে ওই বছরের জানুয়ারিতে বললেন, এ ঋণ বরাদ্দ বাতিল হতে পারে। কারণ পদ্মা সেতু নিয়ে নতুন করে ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে। এটা অনেক দিনের পুরনো হয়ে গেছে। এতে প্রায় বছরখানেক লাগবে। মুহিতের ভাষায়, তখন আমরা বললাম, এটা বাতিল হোক। আমরা নিজেরাই করে ফেলব। তখনই পদ্মা সেতু নিজ অর্থায়নে করার একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। এটা নিয়ে এতো ঝামেলা হয়েছে, আর কারও কাছে সহায়তা চাইলাম না। রবার্ট বি জুয়েলিক ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়ই বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর ১২০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ঋণ চুক্তি আটকে যায়। পরবর্তীতে বিশ্ব ব্যাংকের টাকা না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করার ঘোষণা দেয় সরকার। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে বৈদেশিক সাহায্য আমাদের জাতীয় আয়ের ৯-১০ শতাংশ পেলেও বর্তমানে ১.৪ শতাংশ পাই। গত কয়েক বছরে এ হার বেড়ে ২ শতাংশ হতে পারে। আমরা এখনও যথেষ্ট বৈদেশিক সহায়তা পেয়ে থাকি। এরপরও আমরা তাদের দাতা বলতে চাই না। কারণ তারাও সেটা পছন্দ করে না। আমরা তাদের ‘ডেভেলপমেন্ট পার্টনার’ বলতে পারি। অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কয়েক বছর ধরে যারা বেশি কর প্রদান করেন তাদের স্বীকৃতি দেয়। তারা সমাজে একটু সম্মান পাবেন এবং তাদের দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হবেন। ভ্যাট সম্পর্কে তিনি বলেন, ভ্যাটে আমরা কিছু সংস্কার করতে চেয়েছিলাম। ব্যবসায়ীদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তা দুই বছরের জন্য স্থগিত করে দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি এ সময়ের মধ্যে কিভাবে এ ভ্যাটকে কাস্টমারবান্ধব করা যায়। এনবিআরের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অনুষ্ঠানে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে ২০১৭ সালের ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী ও ঢাকা জেলার কর বাহাদুর পরিবার স্বীকৃতি দেয় এনবিআর। পুরস্কার পেয়ে সাবেক এই মন্ত্রী এনবিআরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। কর যারা দেয় তারা স্বচ্ছ থাকে। আমি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ভেতর সর্বোচ্চ কর দেয়ার মাধ্যমে আমার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার প্রমাণ রেখেছি। আবুল হোসেন এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময়ও আমার কাগজপত্র দেখেছেন। আমার কাগজপত্র এবং কর স্বচ্ছভাবে দেয়া ছিল বলেই ওয়ান ইলেভেনের কেয়ারটেকার গবর্নমেন্টের সময় আমার বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ ছিল কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আমার জীবনটাই স্বচ্ছ এবং সততার ওপর ভিত্তি করে। এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। এ সময় উর্ধতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০১৮-এ অংশগ্রহণকারী ১০ প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদান করায় ভ্যাট সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড, হাতিল কমপ্লেক্স লিমিটেড, সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড, আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেড, বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেড, ডিউরেবল প্লাস্টিক লিমিটেড, আকতার ম্যাট্রাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড।
×