কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে রবিবার ঢাকায় এসেছেন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন সুইস প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আনুষ্ঠানিক সফরে আসলেন। রবিবার দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
সুইজারল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে রবিবার বেলা দেড়টায় বাংলাদেশে পৌঁছান
সুইস প্রেসিডেন্ট। এ সময় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ তাকে স্বাগত জানান। তিনি বিমান থেকে নেমে আসার সময় ২১ বার তোপধ্বনিতে তাকে স্বাগত জানানো হয়। তখন দুটি শিশু ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় সুইস প্রেসিডেন্টকে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসার পর দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল এ সময় সুইস প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার দেয়। পরে প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে গার্ড পরিদর্শন করেন এবং উপস্থিত সবার সঙ্গে পরিচিত হন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেনে হোলেস্টাইন প্রমুখ বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দরে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, তিন বাহিনীর প্রধান, আইজিপি, ঢাকায় ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব সচিব নজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে কক্সবাজার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনসহ সেখানে স্থানীয় একটি হাসপাতালের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করবেন তিনি। রোহিঙ্গাদের মুখে শুনবেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়ার নির্মম ঘটনা।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশকে দেয়া সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে সুইজারল্যান্ড। এ ইস্যুতে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে। বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গাদের তাড়াতাড়ি প্রত্যাবাসন শুরু হোক। সুইস প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে দেশটি সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
বিমানবন্দর থেকে সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল সোনারগাঁওয়ে পৌঁছান সুইস প্রেসিডেন্ট। সেখানে তার সঙ্গে সন্ধ্যায় সৌজন্য সাক্ষাত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ সোমবার দিনভর ব্যস্ত সময় পার করবেন সুইস প্রেসিডেন্ট। সোমবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুরে বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন আঁলা বেরসে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন সুইস প্রেসিডেন্ট। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করবেন তিনি।
সফরের তৃতীয় দিন আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে রোহিঙ্গাদের সরেজমিনে দেখতে কক্সবাজার যাবেন। আশা করা হচ্ছে সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে পরদিন বুধবার দুপুরে একটি বিশেষ বিমানে নিজ দেশের উদ্দেশ্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন সুইজারল্যান্ড প্রেসিডেন্ট আঁলা বেরসে।
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে অনেক জোরদার হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে তৎকালীন সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সে সময় তিনি সুইস প্রেসিডেন্টকে ঢাকায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তবে নানা কারণে তিনি আসতে পারেননি। এখন চলতি বছর নতুন সুইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন আঁলা বেরসে। তিনিই এবার ঢাকায় এলেন।
সুইস প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশে এই প্রথম আনুষ্ঠানিক সফরে মূলত দুটি আলোচ্য বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। প্রথমটি মিয়ানমারে সংঘটিত সঙ্কটে গুরুতরভাবে প্রভাবিত বাংলাদেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ। দ্বিতীয়টি দুদেশের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা।
