ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির ৬ শর্ত বাস্তবায়নযোগ্য নয় ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 বিএনপির ৬ শর্ত বাস্তবায়নযোগ্য নয় ॥  তোফায়েল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিয়ে বিএনপির দেয়া ৬ শর্তের কোনটাই বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কেননা সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মন্ত্রী আরও বলেন, এ বছর বাণিজ্যমেলায় রফতানি আদেশ পাওয়া গেছে প্রায় বিশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১৬০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার। আর মেলায় বিক্রি হয়েছে ৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকার। ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল বলেন, এবারের মেলা সব দিক থেকে সার্থক হয়েছে, কারণ ২০১৩ ও ২০১৪ সালে একটি জোট জ্বালাও-পোড়াও করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। কোন লাভ হয়নি বলে এখন তারাও আর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে না। তাই বলা যায়, ওই দুই বছরের তুলনায় এবারের বাণিজ্যমেলায় সুষ্ঠু এ সময় মন্ত্রী বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি দল ছয়টি শর্ত দিয়েছে। কিন্তু এসব শর্ত বান্তবায়নযোগ্য নয়। কেননা নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে। সেখানে সংলাপেরও প্রয়োজন নেই, সহায়ক সরকারেরও প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, এ বছর নির্বাচনের বছর। আমরা ক্ষমতায় থাকব ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন দেবে নির্বাচন কমিশন। সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। সব ক্ষমতা প্রয়োগ করবে নির্বাচন কমিশন। এবারের মেলা নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) অনেক লাভ হবে। আর আমরা সারাবছর যাতে মেলা করতে পারি সে জন্য পূর্বাচলে ৩৫ একর জায়গাজুড়ে যা আগে ২০ একর ছিল সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। ২০২০ সালে আশা করছি সেখানে মেলা হবে। পৃথিবীর বহুদেশে সারাবছর মেলা করার কেন্দ্র আছে আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এই মেলা তারই প্রমাণ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএ-এর সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য প্রমুখ বক্তব্য দেন। মঞ্চে বাণিজ্যমন্ত্রীর সহধর্মীনি আনোয়ারা আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লায়লা আঞ্জুমান, এমপি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে গত বছরের রফতানি আদেশ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর গতবারের চেয়ে ৮.৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি আদেশ পাওয়া গেছে। গত বছরের রফতানি আদেশ স্বরণ করিয়ে দিলে মন্ত্রী উপস্থিত ইপিবিসহ সংশ্লিষ্ট কমকর্তাদের ওপর কিছুটা ক্ষোভও ঝাড়েন। উল্লেখ্য, গতবছর মেলার শেষ দিনের অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছিল ২৪৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকার রফতানি আদেশ। এছাড়াও সমাপনী অনুষ্ঠানে ১৩টি ক্যাটাগরিতে ৪৪টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টলকে পুরস্কার দেয়া হয়। এছাড়াও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৩৮টি ক্রেস্ট দেয়া হয়। এদিকে, মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় ছিল অবিশ্বাস্য। আর ক্রেতারাও নানা ছাড়ে পণ্য লুফে নিয়েছেন। মেলা শেষ তাই ক্রেতারাও তাদের পণ্য নিয়ে দর কষাকষি করেনি। কোন পণ্যে লোকসান হলেও বিক্রেতা তা আটকে রাখেনি। সর্বোত্তম চেষ্টা করেছেন পণ্য বিক্রির জন্য। একাধিক বিক্রেতা জানান, মেলার শেষ দিন হওয়ার কারণে পণ্য ধরে রাখলে আরও বেশি লোকসান। তাই যে ক্রেতার নিকট যেমন দামে বিক্রি করা যায়। মেলার শেষ দিনেও বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিক্রেতারা। রবিবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাণিজ্যমেলার শেষদিন বেশি আগ্রহ গৃহস্থালি বিভিন্ন পণ্যের প্রতি। কেউ কেউ কিনে নিচ্ছেন সংসারের প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক পণ্যও। জুয়েলারি স্টলগুলোতে ভিড় যেন একটু বেশিই। পাঁচশ টাকার কানের দুল দুই শ’ টাকায় নেমে এসেছে। কেউ আবার আরও কমেও কিনেছেন। ৭০০-১২০০ টাকায় মিলেছে ব্লেজারও। তরুণরা কেউ কেউ কিনে নিলেন যদিও শীত নেই। তবুও সস্তা পেয়ে যেন না কিনে উপায় নেই! এদিন শুকনো খাবরের বিভিন্ন স্টলে দেখা যায় তাদের বান্ডেল অফার পেতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিন শিশুপার্কে বা খাবারে স্টলগুলোতে খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি। যারাই এসেছেন সবাই নিজেদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে দ্রুতই ভিড় এড়িয়ে মেলা ছেড়েছেন। এদিকে, মেলায় বিভিন্ন স্টলের বিক্রয়কর্মীরাও এদিন বিক্রয়ের ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মেতে উঠে। ‘পার্ট টাইম’ কাজ করতে অনেক বিক্রয়কর্মী এক মাসের চুক্তিতে কাজ করেছেন বিভিন্ন স্টল বা প্যাভিলিয়নগুলোতে। যাদের অনেকেই বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কাজ এবং আনন্দ দুই উপভোগ করেছেন তারা। আর এক মাসে অর্জন করেছেন অভিজ্ঞতাও। এই কয়েক দিনে অনেক অচেনা মানুষও কাজের সুবাধে হয়ে গেছে কাছের বন্ধু। অথচ কাজ শেষ হওয়ার কারণে সবাই সবার গন্তব্যে ছুটবে। তবে সম্পর্কটা যেন অটুট থাকে সে চেষ্টাও ছিল বিক্রয়কর্মীদের মধ্যে। মেলায় ভ্রাম্যমাণ হকাররা দর্শনার্থীদের বেশ বিরক্ত করলেও হকারদের কাছ থেকেও পণ্য কিনতে দেখা গেছে। বিভিন্ন সেলফি স্টিক বিক্রি করেছে ১০০-১৫০ টাকায়। এছাড়াও বাচ্চাদের খেলনা তো আছেই। যারা মেলা থেকে বের হয়েছেন কেউ খালি হাতে দেখা যায়নি। কোন না কোন পণ্য কিনছেন মেলা থেকে। কেউ আবার একাধিক পণ্য কিনেছেন ফলে ব্যাগের ঝুলি নিয়ে হাটতে গিয়ে পরতে হয়েছে বিড়ম্বনার মধ্যে। সবার এমন কেনাকাটার আগ্রহ বিষয়ে জানা গেল অল্প মূল্য পেয়ে কেউ ছাড়তে নারাজ। সস্তায় বস্তা ভরার মতো অবস্থা! আগামী এক বছরের জন্য এই মেলার ইতি টানলেও মেলার স্মৃতিগুলো রয়ে যাবে অনেক দিন। আবার নতুন বছরে নতুন কিছু নিয়ে আসবে বাণিজ্যমেলা সে অপেক্ষায় থাকল ক্রেতা বিক্রেতারাও। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, এবারের ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় মেলা আয়োজক কমিটির ভাষ্যমতে, এবারের বাণিজ্যমেলায় ছোট বড় মিলিয়ে সর্বমোট ৫৮৯টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ ছাড়াও ১৮৭টি দেশের ৪৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এক মাসেরও বেশি সময় চলা বাণিজ্যমেলা আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণার সঙ্গে ভাঙ্গলো মানুষের মিলনমেলাও। মেলার সমাপ্তি হলেও রয়ে গেল মাসব্যাপী বিনোদনের স্মৃতিটুকু।
×