ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষা সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ॥ চাপ দিয়ে কিছু আদায় করা যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শিক্ষা সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ॥ চাপ দিয়ে কিছু আদায় করা যাবে না

বিডিনিউজ ॥ দাবি আদায়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারকে চাপ দিয়ে কোন দাবি আদায় করা যাবে না। রবিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শিক্ষা সমাবেশে’ প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এটুকু আমি বলব, চাপ দিয়ে কিন্তু কেউ কিছু আদায় করতে পারবে না’। ‘কেউ যদি মনে করেন সরকারের এটা শেষ বছর... অমনি দাবি করলেই আমরা সব শুনে ফেলব... আমি কিন্তু ক্ষমতার পরোয়া করি না। ক্ষমতায় থাকি, না থাকি আমার কিন্তু আসে যায় না।’ সম্প্রতি এমপিওভুক্তির দাবিতে ছয়দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশন চালিয়ে আসার পর বেসরকারী প্রাথমিকের শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচী প্রত্যাহার করেন। সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে সরকার। এরপর থেকে এমপিওভুক্তি বন্ধ আছে। রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘কিছু দিলেই, আরও দাও, আরও দাও করলে বললাম আমরা দিতে অপরাগ হব।’ সরকারের তার পরিকল্পনার বাইরে বেরিয়ে কিছু করা সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা বাজেট নিয়ে, পরিকল্পিতভাবে চলতে হয়। সেটা মাথায় রাখতে হবে কতটুকু আমরা করতে পারি।’ কোথায় কোনটা সরকারী করতে হবে, কোনটা করতে হবে না, কোন নীতিমালার ভিত্তিতে করতে হবে, সেটা তো একটা নীতিমালার ভিত্তিতে করতে হবে। যখন তখন যে কেউ দাবি করলে সেটা তো পূরণ করা সম্ভব নয়। এটা তো সকলকে অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে। শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সেবা বাড়িয়ে যাচ্ছি। আমরা কখনও কাউকে বঞ্চিত করছি না।’ শিক্ষকদের ‘সর্বাত্মক সহযোগিতা’ দিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তারপরও আমরা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষাকে আমরা সব সময় গুরুত্ব দেই। এটুকু ভরসা রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগ যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে কাউকে বঞ্চিত করে নাই, বঞ্চিত করবে না। শিক্ষকদের মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কী ধরনের মানুষ আপনারা তৈরি করে দিয়ে গেলেন? আপনাদের কাছে যারা শিক্ষা নিচ্ছে, তারা দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে সেটাই হচ্ছে বড় কথা। আপনাদের ওপর এই জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করে।’ শিক্ষার মান নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের কথার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানটা কীভাবে নির্ধারণ করবেন? শিক্ষার মানোন্নয়ন এটা একটা ধারাবাহিক বিষয়। আজকে যেটা মনে হবে আধুনিক, কালকে সেটা পুরনো হয়ে যাবে। শিক্ষা যেহেতু একটা ধারাবাহিক বিষয়, কাজেই সময়ের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার বিষয় বাছাই করতে হবে, নির্দিষ্ট করতে হবে এবং শিক্ষা প্রদান করতে হবে। আজকে যেটা উন্নত মনে হচ্ছে, আধুনিক ও সময়োচিত মনে হচ্ছে, সেটা আগামীতে কয়েক বছরের মধ্যে পুরাতন হয়ে গেল। আবার নতুনভাবে, নতুন কিছু আবিষ্কার হল... তার সঙ্গেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা গ্রহণের ওপরে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কার্যক্রম এখন তথ্য প্রযুক্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী ভর্তি, নম্বরপত্র গ্রহণ, শিক্ষকদের সম্মানীর চেক প্রদান অন-লাইনে সম্পন্ন হয়। ই-ফাইলিং, ই-টেন্ডারিং, ই-লাইব্রেরি চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন সেশনজট নেই। ২০২১ সাল পর্যন্ত একাডেমিক ক্যালেন্ডার দেয়া হয়েছে। এবার কলেজ র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধ্যক্ষদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। এবার জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হয়েছে রাজশাহী কলেজ, দ্বিতীয় পাবনার সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ, তৃতীয় রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, চতুর্থ বরিশালের সরকারী ব্রজমোহন কলেজ, পঞ্চম বগুড়ার সরকারী আজিজুল হক কলেজ, সেরা মহিলা কলেজ সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ এবং সেরা বেসরকারী কলেজ ঢাকা কমার্স কলেজ। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্বাধীনতা ম্যুরাল, কলেজ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের ডরমেটরি ভবন, আইসিটি ভবন, সিনেট ভবন, কর্মকর্তা ভবন, কর্মচারী ভবন, বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র, রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্র, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং কলেজ শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদ বক্তব্য রাখেন।
×