ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলা ভাষার ইতিহাস, ঐতিহ্য হাজার বছরের। যুগে যুগে বহু মনীষী এ ভাষাতে রচনা করেছেন সাহিত্য, কবিতা, গান, উপন্যাস ও গল্পগাথা। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বাঙালী জাতি এই ভাষা চর্চা করে এসেছে। ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। এই ভাষায় রচিত গান ও কবিতা বিশ্ব দরবারে স্থান পেয়েছে। বাংলায় ভাষায় রচিত সাহিত্য বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিয়েছে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। অপরদিকে এই ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে অবদান রেখেছেন জাতীয কবি নজরুল ইসলামও। পল্লী জননীর সুঁই, সুতো প্রতি পরতে গ্রাম বাংলার দুঃখ-বেদনার কাব্যও রচিত হয়েছে এই ভাষাতেই। ষোল-সতেরো শতকেও বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় কাজে এবং সরকারী কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, তুর্কী শাসনামল থেকেই বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে বাংলাকে প্রথম রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দেন একজন ব্রিটিশ লেখক ন্যাথালিয়েন ব্রাসি হেলহেড। তিনি ১৭৭৮ সালে প্রথম বাংলার ভাষার ওপর গ্রামার রচনা করেন। কোম্পানি সরকারের পক্ষ থেকে বাঙালীদের ইংরেজী শেখার জন্য এটি রচনা করেন। বাংলা হরফে রচিত প্রথম পুস্তক ছিল এটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলা ভাষার মর্যাদা একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিমও ওই সময়ে বাংলায় জন্মে যারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করেন তাদের সমালোচনা করেছেন। তিনি তার কবিতায় উল্লেখ করেন, ‘যেসব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী/ সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’। সতেরো শতকের এই কবি আব্দুল হাকিমকে তাই বাংলা ভাষা আন্দোলনের ওপর বাংলায় ভাষা লেখা প্রথম কবি বলা যায়। তার বঙ্গবাণী কবিতাটি তাই সুস্পষ্টভাবে মাতৃভাষা বাংলার ওপর বাংলা ভাষাকে অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধের প্রথম কবিতা। তার এই কবিতা ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও জাতিকে প্রেরণ যুগিয়েছিল নিঃসন্দেহে। আজ ৪ ফেব্রুয়ারি। ’৫২ সালের এই দিনেই ছাত্র জনতা প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ডাকে এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সমর্থনে এদিন ঢাকা শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকায় প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীর মিছিল বের হয়। ছাত্রছাত্রীরা এ সময় স্লোগান দেন ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, আরবী হরফে বাংলা শেখ চলবে না। এদিনই গাজীউল হকের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন প্রাঙ্গণে বিরাট ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা থেকেই ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন কর্মসূচীতে সাফল্যম-িত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
×