ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের হত্যা মামলা ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

জুবায়ের হত্যা মামলা ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

অনলাইন রিপোর্টার ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন সাজার রায় পাওয়া ছয় আসামির মধ্যে বাকি চারজন আপিল করে খালাস পেয়েছেন। আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির পর বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই রায় দেয়। সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া পাঁচজন হলেন- প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের আশিকুল ইসলাম আশিক, খান মোহাম্মদ রইছ ও জাহিদ হাসান, দর্শন বিভাগের রাশেদুল ইসলাম রাজু এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাহবুব আকরাম। তাদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম রাজু ছাড়া বাকি চারজন পলাতক। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজু যে আপিল করেছিলেন, তা খারিজ করে একই সাজা বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। আর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ছয়জনের মধ্যে অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাজমুস সাকিব তপু ও দর্শন বিভাগের ইশতিয়াক মেহবুব অরূপের সাজা হাই কোর্টেও বহাল রাখা হয়েছে। পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র শফিউল আলম সেতু ও অভিনন্দন কুণ্ডু অভি, দর্শন বিভাগের কামরুজ্জামান সোহাগ এবং ইতিহাস বিভাগের মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন। এই ছয়জনের মধ্যে অরূপ পলাতক, বাকি সবাই কারাগারে আছেন। এ মামলার আসামিদের সবাই ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরোয়ার কাজল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী রানা কাউসার। ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র জুবায়ের ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের কোন্দলে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হন। জুবায়ের নিহত হওয়ার পর ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে পদত্যাগে বাধ্য হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সময়কার উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির। হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন নিবন্ধক হামিদুর রহমান আশুলিয়া থানায় যে মামলা করেন, তাতে ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মীর শাহীন শাহ পারভেজ। হত্যাকাণ্ডের দেড়বছর পর মামলাটি অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে এলে তা হাকিম আদালত থেকে পাঠানো হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুজন খালাস পান। বিচারক রায়ে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিণতি হল জুবায়ের হত্যাকাণ্ড। অনুরূপ অহেতুক হত্যাকাণ্ড মানবতা ও নৈতিকতাকে বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করে। এতে ভুক্তভোগীর পরিবারের ওপর নেমে আসে শোকের ছায়া। এমনকি পারিবারিক, সামাজিকও আর্থিক নানারকম সমস্যাও পরিবারগুলোকে গ্রাস করে। “বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশি শক্তির জোরে কোনো ধরনের সহিংসতা, নৃশংসতা, অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা শিক্ষার অনূকূল পরিবেশের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যা কারও কাম্য হতে পারে না।” পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত কোনো হত্যাকাণ্ড বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার সাম্প্রতিক অতীতে না হওয়ায় আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে পর্যবেক্ষণ দেয় আদালত। নিম্ন আদালতে দণ্ডিতদের মধ্যে কারাগারে থাকা ফাঁসির আসামি রাশেদুল ইসলাম রাজু এবং যাবজ্জীবনের পাঁচজন হাই কোর্টে আপিল করেন। সেই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথি আসে হাই কোর্টে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে মোট আট দিন শুনানি করে হাই কোর্ট। এরপর ৯ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
×