ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফারমার্স ব্যাংক জলবায়ু ফান্ডের টাকা ফেরত না দেয়ায় সংসদে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

ফারমার্স ব্যাংক জলবায়ু ফান্ডের টাকা ফেরত না দেয়ায় সংসদে তোলপাড়

সংসদ রিপোর্টার ॥ আলোচিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফারমার্স ব্যাংক জলবায়ু ফান্ডের ৫০৮ কোটি টাকা ফেরত না দেয়ার কারণ নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে এই অর্থ ফেরত পেতে ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পিির্ট (জাপা) সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন। জবাবে মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ব্যাংকটির তারল্যের সঙ্কটের কথা জানান। এরই জেরে এক অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের ব্যাংক খাতের দুরবস্থা নিয়ে ফের সংসদ উত্তপ্ত হয়। এর আগে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী জানান, সর্বোচ্চ সুদের হার প্রদান করায় দ্য ফারমার্স ব্যাংকের ঢাকার বিভিন্ন শাখায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের ৫০৮ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ১ বছর মেয়াদে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫ কোটি ৩২ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, যা নগদায়নের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরে কয়েকবার চাহিদাপত্র পাঠিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকের তারল্য সঙ্কটের কারণে এফডিআরগুলো নগদায়ন করা যাচ্ছে না। মন্ত্রী বলেন, ‘এফডিআরগুলো নগদায়ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গবর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফরমার্স ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে ওই প্রশ্নের জবাবের কথা উল্লেখ করে এক অনির্ধারিত আলোচনা শুরু করেন বিরোধীদলের আরেক সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু। ফারমার্স ব্যাংকের পাশাপাশি সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকোসহ মোট ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ‘বিশ^াসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে তিনি ব্যাংক খাতের নৈরাজ্যের তীব্র সমালোচনা করে এ বিষয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন। অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বাবলু আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতকে বাঁচান। একই দলের সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামও আলোচনায় অংশ নিয়ে বাবলুকে সমর্থন করেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ^ব্যাংকে আটকে থাকা ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিষয়েও সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর আলোচনায় অংশ নেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিরোধীদলের সমালোচনাকে ‘গঠনমূলক’ উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক খাতের বিষয়ে আমারও ধারণা জন্মেছে, এ ব্যাপারে আমাদের আরও যতœবান ও সতর্ক হতে হবে। কারণ ব্যাংকিং খাত আমাদের অর্থনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে।’ তিনি উল্লেখ করেন, সরকার এসব বিষয়ে নীরবে নেই। ফারমার্স ব্যাংকে নতুন চেয়ারম্যান দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বরের বৈঠকের পর অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জানিয়েছিল ফারমার্স ব্যাংক দায় পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়েছে। এই ব্যাংকটির কারণে দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ১৬ জানুয়ারি সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের তীব্র বিরোধিতা, তুমুল হট্টগোল আর অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউটের মুখে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনে আনীত বিল পাসের দিনও ফারমার্স ব্যাংক আলোচনায় আসে। এর দুই দিন পর ১৮ জানুয়ারিও দেশের ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছেন সরকার ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তাদের ক্ষুব্ধ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিতে বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ জাতীয় সংসদের সামনে তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, আমি স্বীকার করি ব্যাকিং খাতকে পূর্ণাঙ্গভাবে ত্রুটিমুক্ত করা যায়নি। ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখনও সম্পূর্ণ ক্রুটিমুক্ত নয়। তবে আমাদের চেষ্টার কমতি আছে বলে মনে করি না। সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতেও একটু সময় লাগে।
×