ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিদেশীয় সিরিজ;###;অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির রেকর্ড

বাংলাদেশের টানা তিন জয় ॥ জিম্বাবুইয়ে ৯১ রানে হারল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশের টানা তিন জয় ॥ জিম্বাবুইয়ে ৯১ রানে হারল

মিথুন আশরাফ ॥ জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে টানা তিন জয় পেয়ে গেল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার জিম্বাবুইয়েকে ৯১ রানে হারাল মাশরাফিবাহিনী। সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল মাশরাফিবাহিনী। এরপর শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। আবার জিম্বাবুইয়েকে হারাল মাশরাফি, সাকিব, তামিমরা। ব্যাট-বল হাতে এদিন দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান সাকিব আল হাসান। তার ৫১ রানের ইনিংসের সঙ্গে ৩ উইকেট শিকারে সহজ জয় পায় বাংলাদেশ। তবে ব্যাট হাতে যে তামিম ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন তাতে ম্যাচসেরা হন বাংলাদেশ ওপেনার। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু এদিন খুব ভাল ব্যাটিং করতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। তামিম ইকবাল (৭৬) ও সাকিব আল হাসান (৫১) ছাড়া নির্ভরশীল ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে সানজামুল ইসলাম (১৯), মুস্তাফিজুর রহমান (১৮*) ও রুবেল হোসেন (৮*) যদি ব্যাট হাতে দুর্দান্ত কিছু করে দেখাতে না পারতেন তাহলে ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২১৬ রান যে করেছে বাংলাদেশ তা করা সম্ভব ছিল না। এই রান নিয়ে জয় পাওয়া কঠিন। তবে যেভাবে বল ঘুরেছে। স্পিনারদের সুবিধা দিয়েছে। গ্রায়েম ক্রেমারও ৪ উইকেট নিতে পেরেছেন। তাতে সাকিব ও সানজামুলের ওপর ভরসা থাকে। সেই ভরসা নিয়েই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ভরসার প্রতিদানও দেন দুই স্পিনার। সাকিব ৩টি ও সানজামুল ২টি উইকেট তুলে নেন। তবে দুই স্পিনারের সঙ্গে পেসারদের ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। মুস্তাফিজ তো অসাধারণ বোলিং করেন। ৬.৩ ওভারে ৩ মেডেনসহ ১৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। মাশরাফিও ২ উইকেট শিকার করেন। যিনি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিয়ে সর্বাধিক ৩০টি ওয়ানডে জেতেন। বাংলাদেশ বোলারদের ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্যে ৩৬.৩ ওভারে ১২৫ রান করতেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে যেভাবে বোলিংটা শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ বোলাররা। এবারও একই ধারা বজায় থাকে। শুরুতেই জিম্বাবুইয়ের ইনিংসের বারোটা বাজিয়ে দেন। এবার শুরুটা করেন মাশরাফি। তার সঙ্গে সাকিবের ঘূর্ণিঝড় যোগ হয়ে ৩৪ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে জিম্বাবুইয়ে। সানজামুলের ভেল্কির আশা থাকে। সেই স্পিন ভেল্কি যথাসময়ে মিলেও যায়। ৬৮ রান হতেই নিজের ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুই উইকেট নিয়ে নেন সানজামুল। হ্যাটট্রিকের আশা তৈরি করেও হয়নি। কিন্তু জিম্বাবুইয়ের বারোটা ঠিকই বাজিয়ে দেন। ৯৫ রানে গিয়ে গ্রায়েম ক্রেমার (২৩) ও ১০৭ রানে গিয়ে সিকান্দার রাজা (৩৯) যখন আউট হয়ে যান জিম্বাবুইয়ের হার যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত ১২৫ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। আবার বাংলাদেশ বোনাস পয়েন্ট নিয়ে জেতে। এই ম্যাচ হারলেও সিরিজে ফাইনালে খেলার আশা বেঁচে আছে জিম্বাবুইয়ের। বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কা হারলেই ফাইনালে খেলবে জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশ দুই ম্যাচ হাতে রেখেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে। তাই একটু নির্ভারই থাকে দল। এরপরও জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই ক্রিকেটারদের আসল লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ব্যাটিংটাও তো দুর্দান্ত হওয়া উচিত ছিল। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা ভাল ব্যাটিং করেন। তাই মাঝে ও নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ তৈরি হয়নি। এদিনও দ্রুতই এনামুল হক বিজয় আউট হয়ে যাওয়ার পর তামিম ও সাকিব মিলে নিজেদের খেলাটাই খেলে দেন। ১০৬ রানের জুটি গড়ার সঙ্গে দলকেও ১১২ রানে নিয়ে যান। কোনভাবেই এ দুই ব্যাটসম্যানকে আটকাতে পারছিলেন না জিম্বাবুইয়ে বোলাররা। কিন্তু সাকিব যেন অহেতুক উইকেট দিয়ে আসলেন। সিকান্দার রাজার করা অফ সাইডের বাইরের বলটিকে এগিয়ে গিয়ে খেলতে যান। তাতে ব্যাটে বল না হওয়াতে স্টাম্পিং হয়ে যান। হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৫১ রানের ইনিংসও খেলেন। কিন্তু ইনিংসটি আরও বড় করার সুযোগ যেন নিজেই হাতছাড়া করেন। তাতে যেন দলও বিপাকে পড়ে। সেই বিপাক শুরুতে বোঝা যায়নি। কারণ সাকিব আউটের পরও যে একগাদা ব্যাটসম্যান লাইনআপে ছিলেন। কিন্তু যেই ১৪৭ রানে মুশফিকুর রহীম আউট হওয়ার পর দেখতে দেখতে ১৭০ রানে ৮ উইকেটের পতন ঘটে যায়। স্পিনার গ্রায়েম ক্রেমারের ঘূর্ণি বলে ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থতার পরিচয় দিতে থাকেন। তখনই সেই বিপাক বোঝা যায়। মুশফিকের পর ১৫৬ রানে মাহমুদুল্লাহও ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর ১৬৩ রানে গিয়ে ধীরে ধীরে ইনিংস বড় করার ভাবনা করা তামিম ১০৫ বলে ৭৬ রান করে আউট হয়ে যান। এখান থেকে ৭ রানের মধ্যে সাব্বির রহমান রুম্মন, নাসির হোসেন ও মাশরাফি বিন মর্তুজাও আউট হয়ে যান। চার রানের মধ্যে এ তিন ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর ২০০ রানও স্কোরবোর্ডে হবে না এমনই মনে করা হয়। কিন্তু শেষদিকে সানজামুল, মুস্তাফিজ ও রুবেল মিলে যে অসাধারণ ব্যাটিংটা করেন তাতেই দল ২০০ রান ছাড়ায়। সানজামুল-মুস্তাফিজ মিলে ২৬ রানের জুটি গড়েন। যাদের কাছ থেকে তেমন কিছুই আশা ছিল না, সেখানে তারাই কিনা বোলার হয়েও ব্যাটসম্যানরূপে আবির্ভাব হন। মুস্তাফিজ-রুবেল তো ২০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিও গড়েন। মুস্তাফিজ আবার যে অপরাজিত ১৮ রানের ইনিংস খেলেন সেটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও। শেষদিকে সানজামুল, মুস্তাফিজ ও রুবেল মিলে ৪৬ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন। এই রান বাংলাদেশের স্কোরকে মজবুত করার সঙ্গে জয়ের ভিতও গড়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত জয়ও মিলে। টানা তিন ম্যাচেও জিতে বাংলাদেশ।
×