ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেডিক্যালে শিক্ষার মান

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

মেডিক্যালে শিক্ষার মান

মানহীন মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে যেসব চিকিৎসক ভবিষ্যতে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত হবেন তাদের হাতে কতটা নিরাপদ থাকবেন রোগীসমাজ! এমন শঙ্কা মোটেই অমূলক নয়। রোগের সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগীর দুর্ভোগ বাড়ে, এমনকি তার জীবনও বিপদাপন্ন হয়। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষায় সামান্যতম গাফিলতি থাকা সম্পূর্ণরূপে অনুচিত। অথচ দেশে মানহীন মেডিক্যাল শিক্ষার বাস্তবতা বিরাজ করছে। উচ্চ আদালতে গিয়ে কিছু মানহীন বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ অনৈতিকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন নিয়ে আসায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে তিনি মেডিক্যাল শিক্ষার যে পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন তা উদ্বেগজনক। এটা ঠিক যে, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মেনেই বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের অনুমতি দেয়া হয়। অনুমোদন পাওয়া এসব কলেজের সামগ্রিক কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিংও করা হয়। তবে কয়েকটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে যাদের কোন নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই, শিক্ষক, পাঠাগার, ল্যাব কিছুই নেই। এজন্য গত তিন বছর ধরে এসব মানহীন মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র ভর্তি অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে একশ’টির মতো। এর মধ্যে ৬৯টিই বেসরকারী, বাকি ৩১টি সরকারী। সরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলোয় প্রতি বছর ৩ হাজার ৩২০ জন ও বেসরকারীতে ৬ হাজার ২০৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। এছাড়া সরকারী ছয়টি ও বেসরকারী ২৬টি ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় যথাক্রমে ৫৩২ ও ১ হাজার ৪০০ জন। এদিক থেকে দেশে বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ থেকেই সবচেয়ে বেশি চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে। বিশিষ্ট চিকিৎসকরা নানা সময়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করতে গিয়ে বলছেন, স্বাস্থ্য শিক্ষায় গুণগত মান যাচাই করলে দেশের ৭৫ শতাংশ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার মান নেই। নেই যোগ্যতার সঠিক পরিমাপও। স্বাস্থ্য শিক্ষা নয়, তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাণিজ্য করা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের মেডিক্যালে ভর্তি করানো। উল্লেখ্য, ৫০ আসনের একটি বেসরকারী মেডিকেল কলেজে ২৫০ বেডের আধুনিক হাসপাতাল থাকা বাধ্যতামূলক। হাসপাতালের ৭০ শতাংশ বেডে আবার সার্বক্ষণিক রোগী ভর্তি থাকতে হয়। যদিও বেসরকারী অনেক মেডিকেল কলেজেই শর্ত মেনে হাসপাতাল নেই। থাকলেও রোগী অনুপস্থিত। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের নিয়মও লঙ্ঘিত হচ্ছে। অভাব রয়েছে আধুনিক শিক্ষা সরঞ্জামের। এসব অপ্রতুলতার মধ্যেই বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকে প্রতি বছর বের হচ্ছে ছয় হাজারের বেশি চিকিৎসক। গত বছর প্রকাশিত আইন কমিশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বেসরকারী মেডিকেল কলেজের শিক্ষা মানসম্মত নয় বলে উল্লেখ করা হয়। ওই গবেষণায় বলা হয়, বেশির ভাগ মেডিক্যাল কলেজ প্রকারান্তরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও কোন নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিপরীতে রোগীসহ অন্তত ৫টি বেড থাকা আবশ্যক, কিন্তু বেশির ভাগ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে পর্যাপ্ত বেড নেই। কিংবা বেড থাকলেও রোগী নেই, ফলে শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশা করব, অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে আসা মানহীন মেডিক্যাল কলেজ যাতে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য সরকার যথাযথ আগাম ভূমিকা রাখবে। মানুষের জীবন নিয়ে কোনরকম ছিনিমিনি খেলা চলতে দেয়া উচিত নয়।
×