ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বতন্ত্র পরীক্ষা বোর্ডসহ নৌ নিরাপত্তায় নয় দফা সুপারিশ জাতীয় কমিটির

প্রকাশিত: ০১:৪১, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

স্বতন্ত্র পরীক্ষা বোর্ডসহ নৌ নিরাপত্তায় নয় দফা সুপারিশ জাতীয় কমিটির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলাচলের অযোগ্য ঘোষিত জাহাজ ‘এলসিটি কাজল’কে ব্যক্তিনামে নিবন্ধন, ফিটনেস, বে-ক্রসিংয়ের (সমুদ্রউপকূল অতিক্রম) অনুমতি ও ভয়েস ডিক্লারেশন প্রদানের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। পাশাপাশি নৌ-সেক্টরের উন্নয়নে নয় দফা সুপারিশমালাও তুলে ধরা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের কমরেড মণি সিংহ সড়কের মুক্তি ভবনে ‘নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে কতিপয় সুপারিশ উত্থাপন’ অনুষ্ঠানে সংগঠনটির নেতারা এই দাবি জানান। জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যসহ সুপারিশমালা তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক পরিচালক এমদাদুল হক বাদশা, কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সঞ্জীব বিশ্বাস, অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন মিলন, জাতীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক পূষ্পেন রায়, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জসি সিকদার, জাতীয় পরিষদ সদস্য লিয়াকত আলী, আব্দুস সাত্তার ও আখতার হোসেন বক্তব্য রাখেন। আলোচকেরা বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি বিকালে দুটি ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় ২৫০ জন পর্যটকবাহী এলসিটি কাজল দীর্ঘ চার ঘন্টা বঙ্গোপসাগরে ভেসে বেড়ায়। অন্য একটি জাহাজ ঘটনাস্থল থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পরিত্যক্ত জাহাজটি নিলামে বিক্রি করা হয়। এরপর নৌবাণিজ্য অধ্যাদেশ (এমএসও) ১৯৮৩ লঙ্ঘন করে নৌবাণিজ্য দপ্তর ব্যক্তিনামে জাহাজটির পুন:নিবন্ধন ও ফিটনেস এবং নৌ পরিবহন অধিদপ্তর বে-ক্রসিংয়ের অনুমতি ও সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌপথে চলাচলের জন্য ভয়েস ডিক্লারেশন দেয় বলে বক্তারা অভিযোগ করেন। এছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌযান চালকদের জন্য স্বতন্ত্র পরীক্ষা বোর্ড ও দুর্ঘটনা তদন্তে একটি জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি তোলেন তারা। অনুষ্ঠানে নৌ নিরাপত্তায় ৯টি জরুরি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। সুপারিশসমূহ হলো- সরকারি স্ক্র্যাপ জাহাজ এলসিটি কাজলকে ব্যক্তিনামে নিবন্ধন দেয়ায় নৌবাণিজ্য দপ্তরের মূখ্য কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার ও তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন, দুর্ঘটনাকবলিত ও চলাচল-অযোগ্য এলসিটি কাজলকে ফিটনেস, বে-ক্রসিংয়ের অনুমতি ও ভয়েস ডিক্লারেশন প্রদানকারী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত ও তাঁদের বিরুদ্ধে নৌ আদালতে মামলা দায়ের, দক্ষ চালক তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ পরিবহন কর্তৃপক্ষের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অভ্যন্তরীণ নৌযানের মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা কমিটি গঠন। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ নৌযানের মাস্টার ও ড্রাইভারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এইচএসসি পাস, ত্রুটিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধে অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্রগামী নৌযানের ফিটনেস যথাযথভাবে পরীক্ষার জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ও নৌবাণিজ্য দপ্তরে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিপ সার্ভেয়ার নিয়োগ, নৌ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন, দায়ীদের শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের জন্য জাতীয় তদন্ত কমিটি গঠন, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও নৌনিরাপত্তার স্বার্থে অর্ধলক্ষাধিক অবৈধ নৌযানকে আইনের আওতায় আনতে অবিলম্বে সারা দেশে নৌশুমারি শুরু। শুধু দুই ঈদে নয়, জাতীয় স্বার্থে সারা বছর সকল নদীবন্দর ও নৌপথে ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা, নৌনিরাপত্তার স্বার্থে উপকূলীয়, হাওর ও পাহাড়ী জনপদের জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিমদের ভ্রাম্যমান আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান এবং জেলা পুলিশ প্রশাসনকে সম্পৃক্তকরণ।
×