ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ার আফরিনে ‘কিছু গ্রাম দখল করেছে’ তুর্কি বাহিনী

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

সিরিয়ার আফরিনে ‘কিছু গ্রাম দখল করেছে’ তুর্কি বাহিনী

অনলাইন ডেস্ক ॥ কুর্দি যোদ্ধাদের বিতাড়িত করতে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আফরিনে অভিযানের তৃতীয় দিন সোমবার বেশ কিছু গ্রাম দখল করেছে তুরস্কের স্থলবাহিনী। তুরস্কের সঙ্গে ঘনিষ্ট সিরীয় বিদ্রোহী যোদ্ধারা এই অভিযানে তুর্কি বাহিনীকে সহযোগিতা করছে। সোমবার তারা আফরিনের বেশ কিছু এলাকা দখল করেছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক। তবে কুর্দি যোদ্ধারা পরে দাবি করেছে, দুটি গ্রাম তারা পুনর্দখল করেছে। আফরিনের শক্তিশালী কুর্দি মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াইপিজে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে তুরস্ক। এই অঞ্চল থেকে ওয়াইপিজের যোদ্ধাদের বিতাড়িত করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় তুর্কি সরকার। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াইপিজে। তুরস্ক মনে করে, এই বাহিনী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) শাখা। তুরস্কে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তানের জন্য তিন দশক ধরে লড়াই করছে পিকেকে। তবে পিকেকের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে ওয়াইপিজে। সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই ওয়াইপিজে। ওয়াইপিজে-কে সমর্থন করায় যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করে থাকে তুরস্ক। তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে যুক্ত হওয়া সবশেষ এই ঘটনাপ্রবাহ তুরস্ককে ন্যাটোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে সুযোগ করে দিতে পারে। সবশেষ খবরে কী বলা হচ্ছে? তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর খবরানুযায়ী, সোমবার আফরিনের শানকাল, কোরনি, বালি ও আদাহ মানলি নামের গ্রামগুলো দখল করেছে তুর্কি বাহিনী। এর পাশাপাশি কিটা, কোরদো ও বিবনোসহ আফরিনের বেশ কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, ব্যাপক যুদ্ধের পর দখল করা দুটি গ্রাম থেকে তুর্কি সেনাদের হটিয়ে দিয়েছে ওয়াইপিজের যোদ্ধারা। এদিকে, ওয়াইপিজে জানিয়েছে, তুরস্কের সীমান্তে রকেট হামলা চালিয়ে তুর্কি বাহিনীর স্থল আক্রমণের জবাব দিয়েছে তারা। সিরিয়া সরকার, ইরান ও মিশর তুরস্কের এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সোমবার এক জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এই আক্রমণের নেপথ্যে কী আছে? পিপল’স প্রটেকশন ইউনিট নামে পরিচিত ওয়াইপিজে-কে বিতাড়িত করতে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির তুরস্কপন্থি বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক আক্রমণের অংশ হিসেবে রোববার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করে তুরস্কের স্থলবাহিনী। তুরস্ক এই আক্রমণের নাম দিয়েছে ‘অলিভ ব্রাঞ্চ’। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান খুব শিগগিরই ওয়াইপিজে-কে নির্মূল করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে বেসামরিক লোকজন যেন হতাহত না হয়, সে জন্য অভিযান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেন, সিরিয়ার অভ্যন্তরে ৩০ কিলোমিটারব্যাপী ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার জন্য এই অভিযান চালানো হচ্ছে। জিহাদিরা যাতে সিরিয়ায় ফিরতে না পারে, সে জন্য কুর্দি ও স্থানীয় আরব মিলিশিয়াদের সমন্বয়ে গঠিত আইএস-বিরোধী জোটকে সহযোগিতা করে তাদের নিয়ে একটি নতুন ‘সীমান্ত রক্ষী বাহিনী’ গঠনের বিষয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র যে ঘোষণা দেয়, তার পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক ওয়াপিজে-কে বিতাড়িত করার অভিযান জোরদার করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যপুষ্ট ওয়াপিজে ও তাদের মিত্রদের নিয়ে গঠিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস কোনো ধরনের সন্ত্রাসী যোগসূত্র থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে এবং তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তুরস্ক তা মানছে না। তুরস্কপন্থি সিরীয় বিদ্রোহী বাহিনীর কমান্ডার মেজর ইয়াসির আবদুল রহিম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, কুর্দিদের বিরুদ্ধে এই অভিযানে তাদের ২৫ হাজার যোদ্ধা অংশ নিয়েছে। তবে তুরস্কের কতসংখ্যক স্থলসেনা এই অভিযানে অংশ নিয়েছে, তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি। তুরস্কের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অভিযানের অংশ হিসেবে রোববার তারা ৪৫টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এর আগে তারা জানিয়েছিল, কুর্দি মিলিশিয়াদের ১৫৩টি অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হতাহতের অবস্থা কী? এসওএইচআর সোমবার জানিয়েছে, যত দূর জানা গেছে, তাতে আফরিন অঞ্চলে ১৮ জন বেসামরিক লোক মারা গেছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, রোববার তুরস্কের বিমান হামলায় তাদের অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে। ওয়াইপিজে দাবি করেছে, রোববার সকালে যুদ্ধের সময় চার তুর্কি সেনা ও তাদের সাহায্যকারী ১০ জন সিরীয় বিদ্রোহী যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তবে তুরস্কের কাছ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রোববার তুরস্কের সীমান্তবর্তী শহর কিলিস ও রেহানলিতে রকেট হামলা চালায় কুর্দিরা এবং এতে হতাহতের খবর পাওয়া গেলেও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার থেকে আফরিনে রকেট হামলা চালাচ্ছে তুরস্কের স্থলবাহিনী। কার কী প্রতিক্রিয়া? যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো এই সংঘাত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিমান হামলার আগে তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাট্টিস এবং তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছেন। হামলার নিন্দা করে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেছেন, সিরিয়ায় সন্ত্রাসে সমর্থন দেওয়ার নীতির অংশ হিসেবে আফরিনে এই বর্বর আগ্রাসন চালাচ্ছে তুরস্ক। সিরিয়ার মিত্র রাশিয়াও হামলার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ওই এলাকা থেকে তাদের কিছু সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অভিযান বন্ধের জন্য তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানাবে রাশিয়া। সিরিয়া সংকট যেন আরো ঘনীভূত না হয়, সেই তাগিদ থেকে দ্রুত অভিযান বন্ধে তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিরিয়ার আরেক মিত্র ইরান। তথ্যসূত্র : বিবিসি অনলাইন
×