ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একটি ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

একটি ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ

ঢাকার গোপীবাগের আর কে মিশন রোডের একটি বহুতল আবাসিক ভবনের ছাদে উচ্চশব্দে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদকারী এক বৃদ্ধ খুন হয়েছেন। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ওই ভবনের ছাদে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত মাইক বাজানো হচ্ছিল। নিহত বৃদ্ধ আওয়াজ কমানোর অনুরোধ করেছিলেন। তারই জেরে শুক্রবার সকালে বর ও তার সঙ্গীরা বৃদ্ধকে মারধর করে। সামান্য বিবেক, মানবিক বোধ যদি থাকতো তাহলে এমনটি করা কি সম্ভব? কা-জ্ঞান, নৈতিক মুল্যবোধের অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছুলে এমন নিন্দনীয় ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে পারে। গান বা সঙ্গীত মানুষের মনকে সুন্দর ও শুদ্ধ করে- এটা চিরন্তন সত্য। কিন্তু আমরা যা দেখলাম তা সম্পূর্ণ বিপরীত। গোপীবাগের আর কে মিশন রোডের সেই সত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করল। উচ্চৈঃস্বরে সঙ্গীত বাজানোর আপত্তি করায় অভিযুক্তরা ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধকে হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ভাতিজার গায়ে হলুদ উপলক্ষে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাড়ির ছাদের ওপর কমিউনিটি হলে উচ্চৈঃস্বরে গান বাজাতে থাকলে সেই ভবনেরই আরেক বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারী কর্মকর্তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছিল। তার ছেলে বিষয়টি বাড়ির কেয়ারটেকারকে জানালে সাধারণ সম্পাদক তার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। পরদিন সাধারণ সম্পাদক প্রতিবাদকারীকে ডেকে পাঠান। বিপদ আঁচ করতে পেরে তার সঙ্গে অসুস্থ বাবা, মা, বোন ও স্ত্রীও নিচে নেমে আসেন। সেখানে পৌঁছাতেই দলবল নিয়ে প্রথমে ছেলের ওপর হামলা চালায় সাধারণ সম্পাদকের লোকেরা। এ সময় বৃদ্ধ বাবা ছেলেকে রক্ষায় এগিয়ে এলে আক্রমণকারীরা তাকেও প্রচ- মারধর করে। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। ঘটনাটি ঘৃণ্য এবং নিন্দনীয়। সমাজে মনুষ্যত্ব, ভ্রাতৃত্ববোধ লোপ পেয়েছে যেন। একজন অসুস্থ মানুষের ঘুমের সমস্যা হলে প্রতিকার চাওয়া যাবে না এটা কেমন সমাজ! যেখানে একজন প্রবীণের ঘুমের ব্যাঘাত হওয়ার কথা জেনে লজ্জিত হওয়ার কথা সেখানে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া- এটা কোন্্ সংস্কৃতি। ঘটনা যে কারণে হোক, এই ঘটনার পরিণতিতে একজনের মৃত্যু ঘটেছে। এর যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এই দায়িত্ব প্রশাসনের। শব্দ দূষণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সম্পর্কে ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা প্রায়শই বলে থাকেন বা সতর্ক করে থাকেন। অন্য অনেক বিষয়ের মতো এক্ষেত্রেও আমরা তেমন সচেতন হচ্ছি না। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না। শব্দ দূষণ আইন এক্ষেত্রে কতটুকু লঙ্ঘন হয়েছে সেটাও বিবেচনা করা জরুরী। এক্ষেত্রে লঙ্ঘিত আইনের শাস্তিও নিশ্চিত করা জরুরী। আমরা চাই গোপীবাগের নিষ্ঠুর এই মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন সমাজে আর না ঘটে এবং হত্যাকারীদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। হত্যাকারীদের মনে যাতে এই ধারণা না জন্মে যে, অন্যায়-অপরাধ করে সহজেই পার পাওয়া যায়। অন্যায়কারীর শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
×