ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবির ভুল স্বীকার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

ঢাবির ভুল স্বীকার

বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বীকার করতে বাধ্য হলো যে, তড়িঘড়ি করে ৭টি সরকারী কলেজ অধিভুক্ত করা ভুল হয়েছে। তবে এতদিনে জল অনেক ঘোলা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বিস্তর। দফায় দফায় যথাসময়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও ফল প্রকাশ, সনদ প্রদান, সর্বোপরি সেশনজট থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ, মিছিল-সমাবেশ, সড়ক অবরোধ, ভিসির কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচী দিয়ে শিক্ষাজীবন ও জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রুখে দাঁড়িয়েছে অধিগ্রহণের প্রতিবাদে। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যাও কম নয়। এ নিয়ে পুলিশী নির্যাতনে, টিয়ার গ্যাস শেল নিক্ষেপে সাধারণ শিক্ষার্থীর অন্ধত্ববরণসহ ঢাবি শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রহৃত হওয়ার অভিযোগও আছে। মামলাসহ নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। অবশেষে পরাজয় তথা ব্যর্থ হয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করেছে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। ৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে ৭টি কলেজের দুর্ভাগা শিক্ষার্থীদের প্রতি। প্রকৃতপক্ষে এটি ঢাবি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত ব্যর্থতার নজির হয়ে থাকল। অন্যদিকে অনিশ্চিত ঝুলে থাকল ইতোপূর্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ৭টি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভাগ্য। এই যদি হয় উচ্চ শিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের পরিণতি তথা ভাগ্য, তাহলে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অবস্থা যে কতটা শোচনীয় তা সহজেই অনুমেয়। সত্য বটে, ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজের অধীনে অনেক নামী-দামী কলেজ রয়েছে। ঢাবিরও হয়ত উদ্দেশ্য ছিল অনুরূপ। তবে অধিগ্রহণ শুধু করলেই হবে না, অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ, ফল প্রকাশ, প্রশাসন পরিচালনাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে দেখাশোনার জন্য স্বতন্ত্র জনবল ও ব্যবস্থাপনা যে অপরিহার্য তা ঢাবি কর্তৃপক্ষ অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর অনিবার্য পরিণতিতে ঘটেছে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান, বিপর্যস্ত শিক্ষাজীবনসহ অনিশ্চিত ভবিষ্যত। বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে এরকম পরিবেশ-পরিস্থিতি কোন অবস্থাতেই প্রত্যাশিত নয়। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ অন্বেষণ করতে হবে ঢাবি কর্তৃপক্ষকেই। তবে শান্তি ও সমন্বয়ের জন্য উভয়পক্ষকে অবিলম্বে বসতে হবে আলাপ-আলোচনায়। বের করতে হবে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ। সরকার যদি প্রকৃত অর্থেই শিক্ষার সংস্কার ও উন্নয়ন চায় তবে তাকে আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, ২০১০ সালে ঘোষিত শিক্ষানীতি সরকার ২০১৭ সালেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। শিক্ষার প্রায় অবাধ বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে, শিক্ষার মান নিশ্চিত হয়নি। লাখ লাখ শিক্ষার্থী প্রতিবছর জিপিএ-৫ পাচ্ছে বটে; কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না, উচ্চশিক্ষা তো দূর অস্্ত্্! প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের নড়বড়ে ভিতের অনিবার্য প্রভাব পড়েছে উচ্চশিক্ষা স্তরেও। বছর তিনেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় মোট আসন সংখ্যার বিপরীতে মাত্র দু’জন শিক্ষার্থীর কোন রকমে উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিশ্বের খ্যাতনামা হাজারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বুয়েট, ঢামেকের তো প্রশ্নই ওঠে না। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে ঘিরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঘটছে ক্রমশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তো কথাই নেই। হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অধিকাংশের নিজস্ব ব্যবস্থাসহ মাঠ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন এমনটি হচ্ছে তা দেখারও কেউ নেই। শিক্ষা ও গষেণার ক্ষেত্রে সরকারী অনুদানের পরিমাণও নগণ্য। শিক্ষা খাতে বার্ষিক সরকারী বরাদ্দের অধিকাংশই চলে যায় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অবকাঠামো উন্নয়নে। শিক্ষাক্ষেত্রে নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও গবেষকের সংখ্যাও খুব কম। প্রকৃত মেধাবীরা বৃত্তি নিয়ে চলে যান বাইরে। উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে থাকে বিদেশে। সুতরাং দেশের অবনতিশীল শিক্ষা এবং তার মান নিয়ে কেউই মাথা ঘামাচ্ছেন নাÑ না সরকার, না সংশ্লিষ্টরা। এই অমানিশার অবসান কবে ঘটবে কে জানে!
×