ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আনন্দের সঙ্গে সারাদেশে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

আনন্দের সঙ্গে সারাদেশে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছোট্ট শিশুদের হাতেঘড়ি আর ভক্তদের দেবী বন্দনায় সারা দেশে উদযাপিত হলো সরস্বতী পূজা। ভাল বিদ্যার আশায় দেবীর পায়ে বই সমর্পণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাই অলিখিতভাবে অনেকেরই পড়াশোনা থেকে ছুটি অন্তত ২৪ ঘণ্টা। আজ দেবীর কাছে রাখা বই ফের টেবিলে ফিরবে। বেলপাতায় লিখা হবে দেবতাদের নাম। ফুলসহ পাতা থাকবে বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে। শুরু হবে নতুন উদ্যমে শিক্ষার যাত্রা। বিদ্যা ও জ্ঞান বৃদ্ধির আশায় প্রতি বছরের মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমীতে এই পূজা করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তাদের কাছে শ্বেত পদ্মে আসীনা সরস্বতী হলেন বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, যার হাতে আছে বীণা আর বই। সারা দেশে বিভিন্ন মন্দিরের পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ঐতিহ্যগতভাবে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয় এবারও। তবে সবচেয়ে সব পরিসরে এবারের আয়োজনটিও হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মাঠে। সকাল থেকে ভক্তদের ঢল নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনসহ বিভিন্ন মন্দিরে দেখা গেছে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড়। সন্ধ্যায় বিভিন্ন ম-পে সন্ধ্যা আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ম-পে-ম-পে ছিল বর্ণিল আলোকসজ্জা। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আয়োজনে মোট ৬৬টি ম-পে সরস্বতীর আরাধনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, কুয়েত মৈত্রী হল, শামসুন্নাহার হল ও কবি সুফিয়া কামাল হলেও আলাদা ম-পে বিদ্যাদেবীর অর্চনা হয়েছে। বরাবরের মতই জগন্নাথ হলের পুকুরের মাঝে বিশাল আকারের সরস্বতী প্রতিমা গড়েছে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। রবিবার মধ্যরাতে ম-পে দেবীর প্রতিমা স্থাপন থেকে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সকালে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি, কর্পূর ও চন্দন দিয়ে স্নান করানো হয়। জগন্নাথ হল মাঠে সকাল ৯টার দিকে শুরু বাণী অর্চনা। পুরোহিত ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যা কমল লোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাংদেহী নমোহস্তত’ মন্ত্রপাঠ করে দেবীর আশীর্বাদ কামনা করেন। এরপর ভক্তরা দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেন। পূজা শেষে ভক্তদের মাঝে অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করিয়ে শিশুদের হাতে কাশ ফুলের কলম ও রূপক দোয়াত তুলে দেন। ওই কলম দিয়ে একটি মাটির সরায় (পাত্র) লেখার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু করে অনেক শিশু। একেই বলা হয় ‘হাতে খড়ি’। জগন্নাথ হলের পুরোহিত সাধন চক্রবর্তী বলেন, মহা সাড়ম্বরে আজ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যারা আজ শিশু, তারা মায়ের কাছে বিদ্যার জন্য, স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য আশীর্বাদ চাইছে। যারা আজ সুর ও সংগীতের জন্য সাধনা করে, তারাও মায়ের কাছে প্রার্থনা করছেন। জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার বলেন, জগন্নাথ হল ঐতিহ্যবাহী হল। এই ঐতিহ্যের একটি নমুনা হল সরস্বতী পূজা। জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সব স্তরের মানুষ এখানে আসে। সবার উপস্থিতিতে এটা সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। উপস্থিত সবাইকে সরস্বতী পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, মায়ের কাছে একটাই প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের সকলের জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দেন। সেই আলোয় যেন আমরা আলোকিত হই। সমস্ত অনাচার-অবিচার-অন্ধকার যেন দূর হয়, এ কামনা করি। বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন বালুর মাঠে অস্থায়ী মঞ্চ করে প্রতি বছরের মতো এবারও সরস্বতী পূজার আয়োজন আয়োজন করা হয়। ভোর থেকে ভক্তদের ভিড় নামে সেখানে। মাইকে দেয়া হয় পুষ্পাঞ্জলি। অঞ্জলি দিতে আসা পূর্বাশা ভট্টাচার্য জানান, প্রতি বছরই আমরা এখানে অঞ্জলি নেই। এবারও এসেছি। সারা বছর যেন পড়াশোনা ভাল হয়, অমরা সবাই ভাল থাকি মায়ের কাছেই এটাই চাইব। রামকৃষ্ণ মিশনেও উপচেপড়া মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে।
×