ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

তারেকের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

তারেকের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় পলাতক আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। পলাতক আসামি তারেক রহমানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এ কে এম আখতার হোসেন যুক্তিতর্কে বলেন, মামলার এজাহার প্রথম অভিযোগপত্র, বিভিন্ন জিডিতে আসামি তারেক রহমানের নাম ছিল না। ’২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় তারেক রহমান কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন না। ওই সময় তারেক রহমান বিএনপি এবং চার দলীয় জোট সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তিনি আসামিদের প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এ মামলার কোন সাক্ষীই আশ্বাসের কথা বলেননি। কোন সাক্ষীই নিজেদের সাক্ষ্যে তার নাম বলেননি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তারেক রহমান জড়িত রাষ্ট্রপক্ষ তার সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তারেক রহমান তার তৎকালীন কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবনে ষড়যন্ত্র বৈঠক করেছেন তাও প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি। ওই বৈঠকের আলোকে হামলাকারীদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ মামলায় কাউকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হয়নি। অপরাধের সম্পৃক্ততার ভিত্তিতেই ঘটনায় জড়িতরা মামলার আসামি হয়েছেন। মামলার কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ আদেশ প্রদান করেছেন। সোমবার ছিল এ মামলার যুক্তিতর্কের ৩৪তম দিন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট মোঃ আমিনুর রহমান, এ্যাডভোকেট আবু আব্দুল্লাহ ভুঞা, এ্যাডভোকেট আবুল হাসান জিহাদ। গত ১৭ জানুয়ারি মামলার আসামি মাওলানা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বিরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী মঈদুদ্দিন মিয়া। তিনি সোমবারও সাব্বিরের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। এ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তার খালাসের আর্জি পেশ করা হয়। অন্যদিকে মামলার পলাতক আসামি বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এ কে এম আখতার হোসেন যুক্তিতর্কে বলেন, মামলাটির বিচারের সময় ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার পুনর্তদন্তের আদেশ হয়। পুনর্তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল কাহ্্হার আখন্দের দাখিল করা সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করা হয়। যেখানে বলা হয়, ২১ আগস্ট হামলাকারীদের ঘটনা বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারেক রহমান। আইনজীবী যুক্তিতর্কে দাবি করেন, ওই সময় তারেক রহমান বিএনপি এবং চার দলীয় জোট সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ ছিলেন না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল জানান, আসামি আবদুল হান্নান ওরফে মাওলানা সাব্বির রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত। এর আগে গত ১ জানুয়ারি মামলার আসামিদের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা দাবি করে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করা হয়। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্কে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনায় আনা মামলার তারেক-বাবরসহ ৪৯ আসামির সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছেন। মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে আনীত অপরাধ স্বতন্ত্র, নিঃস্বার্থ, দালিলিক ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষীদের দ্বারা দেয়া সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচার প্রার্থী মানুষের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে আইনের বিধানের আলোকে আসামিদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ সাজা প্রার্থনা করছি। এর আগে চার কার্যদিবসে পলাতক আসামি মাওলানা লিটন ওরফে জুবায়েরের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মোঃ আবদুল বাতেন, পলাতক আসামি মুফতি সফিকুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী মাজহারুল কুদ্দুস, পলাতক আসামি মোঃ ইকবালের পক্ষে আইনজীবী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনের পক্ষে আইনজীবী আশরাফুল আলম, পলাতক আসামি জাহাঙ্গির আলম বদরের পক্ষে আইনজীবী সাইদুল হক, রাতুল আহমদ বাবুর পক্ষে এ্যাডভোকেট মশিউর রহমান, মহিবুল মোত্তাকিনের পক্ষে এ্যাডভোকেট হালিমা আক্তার, হানিফ পরিবহনের মালিক মোঃ হানিফের পক্ষে আইনজীবী চৈতন্য চন্দ্র হালদার, পলাতক মোঃ খলিলের পক্ষে এ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান খান, বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের পক্ষে এ্যাডভোকেট আশরাফ-উল আলম, বিএনপি নেতা পলাতক হারিছ চৌধুরীর পক্ষে এ্যাডভোকেট আবু তৈয়ব ও পলাতক আনিসুল মোরসালিনের পক্ষে এ্যাডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন, আসামি মুন্সি মুহিবুল্লাহ ওরফে অভির পক্ষে তার আইনজীবী সাইফুর রশিদ সবুজ ও পলাতক আসামি মুফতি আবদুল হাইয়ের পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল কালাম। আসামিপক্ষের এ আইনজীবীরা তাদের মোয়াক্কেলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি দাবি করে আসামিদের খালাসের আর্জি পেশ করেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। ২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে.কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনও পলাতক। এছাড়া ৩ জন আসামি জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
×