ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ একনেকে উঠছে

১৭শ’ কর্মকর্তার দক্ষতা বাড়াতে ২৪০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

১৭শ’ কর্মকর্তার দক্ষতা বাড়াতে ২৪০ কোটি টাকার প্রকল্প

আনোয়ার রোজেন ॥ কর্মক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তাদের (বিসিএস ক্যাডার) দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা সময়। অভিযোগ রয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে প্রায় ৪০ গুণ বেতন বেড়েছে, কিন্তু কাজের গুণগত মান সেই হারে বাড়েনি আমলাদের। বরং কমেছে ক্ষেত্রবিশেষে। এদিকে ২০৩০ সাল মেয়াদী টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারী কর্মকর্তাদের পারফর্মেন্সের ওপর। তাই এসব কর্মকর্তার সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আওতায় উপসচিব হতে সিনিয়র সচিব পর্যায়ে ১ হাজার ৭০০ কর্মকর্তা বিদেশে মাস্টার্স কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স, রিফ্রেশার্স কোর্স ও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। এছাড়াও প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকবে প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট ৩০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় হবে ২৪০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কর্মকর্তার পেছনে সরকারের প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ সংক্রান্ত ‘বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় বিদেশে মাস্টার্স কোর্সের জন্য ৩০০ জন, বিদেশে ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য ৭৫ জন, সিনিয়র সচিব ও সচিবদের জন্য রিফ্রেশার্স কোর্স (৭৫ জন), অতিরিক্ত সচিবদের জন্য প্রশিক্ষণ সর্বোচ্চ ১৫ দিন (২৫০ জন), যুগ্ম সচিবদের প্রশিক্ষণ (৫০০ জন), উপসচিবদের প্রশিক্ষণ (৫০০ জন) ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ (৩০ জন)। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় ১০টি ফিডব্যাক সেমিনার, দেশে-বিদেশে সুপারভিশন ও মনিটরিং এবং যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হবে। ইতিমধ্যে জাপানের তহবিলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জনপ্রশাসনে কর্মরত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের জ্ঞানের পরিধি ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রকল্পটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। জানা গেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে সব কর্মকর্তাকে সুশাসন থেকে শুরু করে উন্নয়ন প্রশাসন, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, নবায়নযোগ্য শক্তি, টেকসই উন্নয়ন, উন্নয়ন অর্থনীতি, উন্নয়ন পরিকল্পনা, প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ, অর্থ-ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী ও ডিপ্লোমা কোর্সের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য জনপ্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনপ্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দক্ষ ও উপযুক্ত মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। জ্ঞানভিত্তিক ও গবেষণাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য ও বৈশি^ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রস্তুত করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন রূপকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারী কর্মচারীগণ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রে মধ্য মেয়াদী বৈদেশিক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন সরকারী কর্মচারীগণ পেশাগত বিষয়ে অন্যান্য দেশের অনুসরণীয় কার্যক্রম সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন, অন্যদিকে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে উন্নত জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। এ কারণে সরকারী কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে বর্তমান সরকার অত্যন্ত উদার ও উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনা দিয়েছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ভিসা প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে ॥ প্রথম দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ৫ বছর হলেও এখন সময় লাগছে ৯ বছর। একই সঙ্গে বাড়ছে প্রকল্পের খরচও। আজ একনেক সভায় প্রকল্পটির তৃতীয় দফা সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন হতে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, ইলেকট্রনিক সিগনেচার প্যাড, পাসপোর্ট, ভিসা রিডার, সার্ভার, কম্পিউটার, বারকোড রিডার, কাস্টমাইজড সফটওয়্যার, সাইট রিনোভেশন, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা সফর এবং যানবাহন সংগ্রহ করাসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ছে এই প্রকল্পের খরচ। প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রকল্পটি ২০০৯ সালের ১৯ মার্চ একনেকে অনুমোদন পায়। তখন মোট ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৯ সালের জুলাই হতে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। মেয়াদ অপরিবর্তিত রেখে প্রথম ও দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ও ৭১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। এরপর পরিকল্পনা কমিশন ব্যয় বাড়ানো ছাড়া ৪ দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর ৬ মাস বাড়ায়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রকল্পের আওতায় ৬৭টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ৬৫টি বাংলাদেশ মিশন, ৭০টি এসবি/ ডিএসবি অফিস, একটি ডাটা সেন্টার, একটি পার্সোনালইজেশন সেন্টার, একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাসপোর্ট অফিস কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ৩৩টি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের মধ্যে ২৭টি এবং ১৬টি আইসিপি ভিসা সেলের মধ্যে ৪টি চালু করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পে নতুনভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৬টি বাংলাদেশ মিশনে এমআরপি ও এমআরভি চালুর প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত করা হচ্ছে।
×