ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুশ সামরিক শক্তির সমকক্ষ হতে হবে ॥ ব্রিটিশ সেনাপ্রধান

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮

রুশ সামরিক শক্তির সমকক্ষ হতে হবে ॥ ব্রিটিশ সেনাপ্রধান

ব্রিটেনের সেনাপ্রধান জেনারেল স্যার নিক কার্টার বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া এমন শক্তিশালী এক সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছে যে, আমরা যদি তাদের সমান সক্ষমতা অর্জন করতে না পারি, তবে আঘাত এলে বানের তোড়ে ভেসে যাব। খবর বিবিসি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট। জেনারেল কার্টার সোমবার রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে দেয়া তার মূল ভাষণে এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। নিক কার্টারের এই বক্তৃতা প্রদানের আগে তার লিখিত অনুলিপি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যাভিন উইলিয়ামসন অনুমোদন করেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে ব্রিটিশ প্রশাসন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যাপক ব্যয় সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে- এই পূর্বাভাসের মধ্যে জেনারেল কার্টার তার সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেন। জেনারেল কার্টারের এই সতর্কবাণী যে ভিত্তিহীন নয় তা প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি সাম্প্রতিক রুশ সামরিক তৎপরতা ও তাদের সমর শক্তির উৎকর্ষতার বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি গত বছর রাশিয়া ক্যালিনিংগ্রাভ থেকে লিথুয়ানিয়া পর্যন্ত সমগ্র উত্তর ইউরোপে সম্মিলিত হামলার যে মহড়া চালিয়েছিল তার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়াও রাশিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তারা যে নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এটি প্রমাণ করে দিয়েছে। সম্প্রতি সিরিয়া যুদ্ধে আসাদ বাহিনীর পক্ষ অবলম্বন করে বিদ্রোহী ও আইএস জঙ্গী বাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে রুশ বাহিনী দেড় হাজার কিলোমিটার (৯৩০ মাইল) দূর থেকে ২৬টি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানে। জেনারেল কার্টার বলেন, রাশিয়া দ্রুত আক্রমণে সক্ষম এমন একটি বাহিনী গড়ে তুলছে যা ইতোমধ্যেই ব্রিটিশ বাহিনীকে মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা অর্জন করেছে। তাই ব্রিটেনের প্রতি সম্ভাব্য সামরিক হুমকি এখন ইউরোপের দ্বারপ্রান্তে। শুধু প্রচলিত সামরিক হামলা নয়- ইউরোপ বিশেষ করে ব্রিটেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে মারাত্মক সাইবার হামলার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইতোমধ্যেই তারা ইউরোপসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার মাধ্যমে বিপুল অর্থের ক্ষতি সাধন করেছে। রুশ ও উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের কবল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল পর্যন্ত রেহাই পায়নি। এখন ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, ইউরোপীয় জোট থেকে ব্রিটেনকে বিচ্ছিন্ন করার অভিপ্রায়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো ব্রেক্সিট গণভোটেও রুশ হ্যাকাররা কারসাজি করেছিল। এ ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে পছন্দমতো দলকে জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে রাশিয়া নিত্যনতুন সাইবার হামলার পন্থা উদ্ভাবন করছে। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে গত বছর বলেছিলেন যে, রাশিয়া অব্যাহতভাবে সাইবার হামলার মাধ্যমে গুপ্তচর বৃত্তি ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কাজ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সে দেশের বিমান বাহিনী প্রধান স্যার স্টুয়ার্ট পিচ গত মাসে এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে ইন্টারনেটের যে সূক্ষ্ম তারগুলো জালের মতো ছড়িয়ে আছে তার আশপাশে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনগুলো রহস্যজনকভাবে ঘোরাফেরা করে। তারা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ইন্টারনেটে প্রবাহিত তথ্য সংগ্রহ করে অন্য দেশের গুপ্ত সংবাদ ও ব্যবসা -বাণিজ্যের চরম ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হবে। তাই এই মুহূর্তে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় সঙ্কোচন হবে আত্মঘাতী কর্মকা-ের সমার্থক। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী থেকে ১৪ হাজার সেনা, ৯টি যুদ্ধজাহাজ ও একশ’টি হেলিকপ্টার কমিয়ে এনে ব্যয় সঙ্কোচনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ নিয়ে সাবেক সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা ও বর্তমানে রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্য জনি মেরসের অব্যাহত রুশ হুমকির সম্মুখীন হওয়ার পরও সামরিক বাহিনীতে এ ধরনের কৃচ্ছ্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
×