ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে ৮ শতাংশ ভোটও পাবে না আওয়ামী লীগ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে ৮ শতাংশ ভোটও পাবে না আওয়ামী লীগ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শতকরা ৮ ভাগ ভোটও পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার বিকেলে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বই প্রদর্শনী, পাঠক পরিচয়পত্র বিতরণ এবং বই সংগ্রহ কর্মসূচী অনুষ্ঠান উদ্ধোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নিরপেক্ষ ভোটে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের আহ্বান ফখরুলের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট করে দুই দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তাহলে আপনারা ভোট দিচ্ছেন না কেন তা জনগণ বুঝতে পারবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা ভোট দেন, দেখা যাক কে কত ভোট পায়। আপনারা নির্বাচিত হলে আপনারাই ক্ষমতায় থাকবেন, আর আমরা নির্বাচিত হলে আমরা থাকব। কিন্তু সেটাও দিবেন না। কারণ, আপনারা জানেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট দিলে আপনারা ৮ ভাগ ভোটও পাবেন না। দেশের জনগনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আজ আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে, আপনাদের সন্তানদের বাঁচাতে, আপনাদেরকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে দেশের ভবিষ্যত অন্ধকার। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করলেন আপনাদের প্রিয় মানুষদের দিয়ে। আমরা বারবার বলেছি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ মানুষদের দিয়ে গঠন করুন। সেটা না করে আপনাদের প্রিয় মানুষদের দিয়ে গঠন করলেন। তারা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেন নতুন ইউনিয়নগুলোর সীমানা নির্ধারণ না করেই। এতেই বোঝা যায় তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবেন না। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে ভরাডুবি জেনেই ভোট স্থগিতের ব্যবস্থা করেছে আওয়ামী লীগ। তারা সহজে উত্তর সিটি নির্বাচন দেবে না। কারণ, তারা জানে নির্বাচন দিলেও আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে আর বিএনপির বিজয় হবে। সংবিধানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান ছিল তা আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন করলেন কেন এমন প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেছিলেন যে, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। কই খায়রুল হকের সেই কথা তো নেননি। রায়ের যেটুকু নিজেদের কাজে লাগে সেটুকু তারা মানে আর যেটুকু মানলে নিজেদের ক্ষতি হবে সেটুকু তারা মানে না। বিএনপির পক্ষ থেকে সময়মতো সহায়ক সরকারের রুপরেখা দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যখন রাজনৈতিক সুবিধা হবে তখন আমরা সহায়ক সরকারের রুপরেখা দেব। সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে কোন নির্বাচন হবে না। ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে সরকার ভুল করবে। সরকারের ৪ বছরের উন্নয়নের রোল মডেল প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা উন্নয়ন উদযাপন করেছেন। কিসের উন্নয়ন। এরশাদ সরকারও উন্নয়ন উদযাপন করেছিল তাদেরও বিদায় নিতে হয়েছে। শেখ মুজিবও যখন জনগণের মাঝে বাকশাল চাপিয়ে দিয়েছেন তখন জনগণও তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি একটি অবোধ দল বলে অর্থমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি অবোধ দল আর আপনি বোধসম্পন্ন মানুষ।’ শেয়ারবাজারে হাজার কোটি টাকা লুট হলো আপনি বললেন ৪ হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই না। বেসিক ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়, আপনি বলেন, এটা কিছুই না। এটা আপনার খুব বোধের কাজ হয়েছে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর কাজ একটাই। তা হলো, বিএনপির মিটিং বন্ধ করা। শীতার্তদের মাঝে কম্বল দিলেও নাকি অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি করতে তারা দেশকে শেষ করে ফেলেছে। শুধু একজন থাকবে যার কোন অনুমতি লাগবে না। একটা দল থাকবে যাদের কোন অনুমতি লাগবে না। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের অনুমতির দিন শেষ করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ট্রাস্টের মামলা কখনও দুদকে হতে পারে না। শুধু রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে হয়রানি করা হচ্ছে। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন তাকে কোর্টে যেতে হচ্ছে। এটি নজিরবিহীন নির্যাতন। এর জবাব একদিন জনগণ দেবে। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্য কথায় নয়, যখন আমাদের রাজনৈতিক সুবিধা হবে আমরা অবশ্যই সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেব। খুব স্পষ্ট কথা বলছি, কৌশলগতভাবে যখন আমরা মনে করব এটা আমাদের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, সেই সময় আমরা রূপরেখা দেব। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এবং পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জহির দীপ্তির সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
×