ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরস্বতী পূজা আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

সরস্বতী পূজা আজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিদ্যার দেবী শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা আজ। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসবে পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন অগণিত ভক্ত। মর্তের ভক্তকুল শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী দেবী সরস্বতীর আবাহন করবে। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর পাদপদ্মে প্রণতি জানাবেন তারা। ঢাক-ঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে দেশের বিভিন্ন পূজামন্ডপ। শাস্ত্র মতে, প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর বন্দনা করা হয়। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসেবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী দেবীর আরাধনা করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতে কল্যাণময়ী দেবীর চরণে ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/ বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাংদেহী নমোহস্তুতে’ এই মন্ত্র উচ্চারণ করে বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রণতি জানাবেন তারা। সরস্বতী দেবী শ্বেতশুভ্র বসনা। দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপানিও বলা হয়। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তার আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতি বছর আবির্ভূত হন ভক্তদের মাঝে। শিক্ষার্থীরাই এই পূজায় মনোযোগী হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঘরে ঘরে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে জ্ঞানলোকে উদ্ভাসিত হয়ে দেশের প্রতিটি মানুষ অসাম্প্রদায়িকতা, অজ্ঞানতার অন্ধকার, কূপমন্ডূকতা আর অকল্যাণকর সকল বাধা পেরিয়ে একটি উন্নত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে জ্ঞানার্জনে ব্রতী হয়ে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ এবং মহিলা ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার বাণী অর্চনাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পূজা ছাড়াও অন্য অনুষ্ঠানমালায় আছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জা ইত্যাদি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলে মহাসাড়ম্বরে বিদ্যা ও আরাধনার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর পূজার আয়োজন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় উপাসনালয় ও চারুকলার মন্ডপসহ এ বছর হলের মাঠে প্রায় ৬৩টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শুধু হিন্দু শিক্ষার্থীরাই নয় অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীরাও এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে। জগন্নাথ হলে পূজা মন্ডপগুলের মূল আকর্ষণ চারুকলার শিক্ষার্থীদের নির্মিত প্রতিমা। এ বছর হলের পুকুরের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন প্রতিমা। এছাড়াও হলজুড়ে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের বিদ্যার্থীরা তৈরি করেছে বিভিন্ন মোটিফের ওপর ভিত্তি করে প্রতিমা ও বিভিন্ন মেটাফোরিক্যাল মন্ডপ। দৃষ্টিনন্দন এই মহোৎসবে প্রতিফলিত হয়েছে চিরায়ত বাঙালী সংস্কৃতির শাশ্বত মহিমা এবং একই সময় রয়েছে বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির কলাকৌশল ও বিজ্ঞানের সমন্বিত শিল্পরূপ। গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এখানে সকালে পূজা ছাড়াও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনেও আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য পূজার। ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে আজ সকাল সাড়ে ৭টায় পূজা আরম্ভ হবে। ৯টায় হাতে খড়ি, সাড়ে ১২টায় পুষ্পাঞ্জলি, ১২টা ১৫ মিনিটে হোম, ১টায় ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। সন্ধ্যায় আরাত্রিক ও ভজন সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শিল্পীরা। জগন্নাথ হলের পূজা শুরু হবে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। ১০টায় অঞ্জলি প্রদান, সন্ধ্যায় আরতি অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেও রয়েছে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যায় আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×