ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামালপুরে ৩ কোটি টাকার নতুন রেল অকেজো দেখিয়ে হরিলুট

প্রকাশিত: ০১:০৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

জামালপুরে ৩ কোটি টাকার নতুন রেল অকেজো দেখিয়ে হরিলুট

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরে আমদানিকৃত নতুন রেল লাইনের প্রায় তিন কোটি টাকার রেল পরিত্যক্ত অকেজো দেখিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও খোদ রেলওয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, জামালপুর রেলওয়ের কিছু সংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকাদারের যোগসাজসে রেলওয়ের জাতীয় সম্পদ নতুন রেল টুকরো টুকুরো করে কেটে দিন-রাত ট্রাকে ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের নতুন রেল লাইনের রেল বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু সংখ্যক রেলওয়ে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ নিয়ে স্থানীয় সুধী ও সুশীল সমাজসহ রেলওয়ের ক্ষতি চায় না, রেলওয়ের এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই হরিলুট বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বছর তিনেক আগে সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে যমুনা সেতু পূর্বপাড় রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল লাইন নির্মাণের জন্য প্রায় ৩ হাজার মেট্টিক টন নতুন রেললাইন আমদানি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এসব নতুন রেল লাইন জামালপুর স্টেশন সংলগ্ন প্রকৌশলীর (রেলপথ) কার্যালয়ের সামনে, জামালপুর-সরিষাবাড়ী রেলপথের কালিবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন ও সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের প্লাট ফর্মের সামনে বিশাল স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই রেল লাইন অকেজো দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়ায় হয়েছে। ওই রেললাইনের স্তূপের সন্ধানে গিয়ে সেখানকার জায়গা ফাঁকা দেখা গেছে। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্রগ্রাম সহকারী ট্র্যাক সাপ্লাই কর্মকর্তা জিয়া উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত ২০১৬ সালে ১ হাজার ১৬৩ দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন অকেজো (পরিত্যক্ত) রেল লাইনের রেল বিক্রির জন্য দরপত্র আহব্বান করা হয়। ওই দরপত্রের সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মের্সাস এস এ কর্পোরেশনের কাছে পরিত্যক্ত রেল লাইনগুলো হস্তান্তর করতে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর রেলওয়ে স্টেশন চট্টগ্রাম কর্তপক্ষ বিক্রয় আদেশ জারি করে। ওই আদেশে উল্লেখ রয়েছে, শুধু মাত্র ১ হাজার ১৬৩ দশমিক ৩৫ মেট্রিক টন অকেজো রেল লাইন বুঝিয়ে দিতে। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অকেজো রেল লাইনসহ জামালপুর, কালিবাড়ী ও সরিষাবাড়ী স্টেশনে স্তূপীকৃত ভালো নতুন রেল লাইনের রেল তড়িঘড়ি করে কেটে অকেজো করে ট্রাক ভর্তি করে দিন রাত নিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, নিলামে দেওয়া অকেজো রেল লাইনগুলো পরিমাপ অনুসরণ না করেই তড়িঘড়ি করে ট্রাক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামালপুর ও সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, রেল লাইনের রেলগুলো ব্যবহারই করা হয়নি, সেগুলো অকেজো হয় কি ভাবে। এই রেল ব্যবহার না করলে ২০ বছর মাটিতে পড়ে থাকলেও অকেজো হয় না। তারা আরও বলেন, এই নতুন রেল এখানে ডাবল লাইন করার জন্য আনা হয়েছে। ব্যবহারের আগেই অকেজো বানিয়ে লোপাট করা হলো বলে জানিয়েছেন তারা। অপর দিকে মের্সাস এস এ কর্পোরেশনের প্রতিনিধি আজম উদ্দিন বলেন, দরপত্র মোতাবেক সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে টাকা জমা দিয়ে আমরা অকেজো রেল কিনছি। এ ব্যাপারে জামালপুর রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেলওয়ে অকেজো রেল বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান নিলামে পেয়েছে তারাই অকেজে রেল নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে জামালপুর রেলওয়ের এসভি (স্টক ভেরিফিকেশন) কর্মকর্তা শাহিন আলম খান বলেন, নিলামে বিক্রয় করা অকেজো রেলগুলো জামালপুর ও সরিষাবাড়ী স্টেশনে স্তূপ করে রাখা রেলগুলোই বিক্রি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত কত মেট্রিক টন বিক্রি করা হয়েছে এবং ওজন দেওয়া হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে রাজি হননি। জামালপুর রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) কবির হোসেন রানা বলেন, জামালপুর থেকে ১ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন রেল বিক্রি করা হয়েছে। তার মধ্যে ১ হাজার ১৬৩ মেট্রিক টন মেসার্স এস এ কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রেল বিক্রির বিষয়ে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। যেগুলো বিক্রি করা হয়েছে সেগুলো অকেজো রেল।
×