ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিদেশীয় সিরিজ ॥ ব্যাটিং অর্ডারে প্রথম পাঁচ সেরা ব্যাটসম্যানকেই রাখা হয়েছে, পরে গিয়ে কোন ব্যাটসম্যান হাল ধরবেন, সেই হিসাব করা হয়নি

ঝুঁকিতেই সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

ঝুঁকিতেই সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কথায় আছে, ‘নো রিস্ক, নো গেইন।’ সাফল্য পেতে হলে ঝুঁকি নিতেই হয়। বাংলাদেশ দল সেই ঝুঁকি নিয়েছে। ঝুঁকিতে সাফল্যও মিলছে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রথম পাঁচ সেরা ব্যাটসম্যানকেই রাখা হয়েছে। পরে গিয়ে কোন ব্যাটসম্যান হাল ধরবেন, সেই হিসেব করা হয়নি। কোনভাবে যদি ব্যাটিং ব্যর্থতা হয় তাহলে দলের বারোটা বাজবে। কিন্তু যদি প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুইজন অন্তত বড় ইনিংস খেলে দিতে পারেন তাহলে দলের ভাল করার সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ সেই দিকেই এগিয়েছে। ঝুঁকি নিয়েছে। তাতে সাফল্য পুরোদমেই মিলছে। ত্রিদেশীয় সিরিজেই যেমন টানা দুই ম্যাচে দাপটের সঙ্গেই জিতেছে। জিম্বাবুইয়েকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারানোর পর শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে হারিয়েছে। রানের দিক দিয়ে যেই জয়টি বাংলাদেশ ইতিহাসের সেরা জয়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে তামিম একাই খেলে দিয়েছেন। সঙ্গে বিজয়, সাকিবও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তো তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীমও ভাল ব্যাটিং করেছেন। তাতেই তো রান উঠেছে আকাশচুম্বী। তাতে বড় জয়ও মিলেছে। এমন চলতে থাকলে ঝুঁকিতে সাফল্য মিলতেই থাকবে। গত বছর বাংলাদেশের সময়টা ওয়ানডেতে খুব একটা ভাল যায়নি। শুরু হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে। বছর শেষ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হার দিয়ে। মাঝপথে শ্রীলঙ্কার মাটিতে একটি ওয়ানডে জয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে সেমিফাইনালে ওঠা ছাড়া ওয়ানডেতে সাফল্য নেই। নতুন বছরের শুরুটা দুর্দান্তভাবেই করেছে বাংলাদেশ। দুটি জয় পেয়ে গেছে। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছে বাংলাদেশ তাতে দেশের মাটিতে ১৫ মাস পর খেলে কেমন করে মাশরাফিরা তা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু ঝুঁকি নিয়েই দল সাফল্য পেতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ঝুঁকিটা হয়েছে সাকিবের মতো ব্যাটসম্যানকে তিন নম্বরে খেলানো। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য ঝুঁকির বিষয়টি বলেই দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘সাকিবকে তিনে ব্যাটিং করানোর পিছনে আমার যুক্তিতা এটাই যে গত তিন চার বছরে অনেক খেলয়াড়কেই বদল করা হয়েছে। সাকিব গত ১০/১২ বছর ধরে পারফর্মেন্স করেছেন। আমি নিশ্চিত যে ওরচেয়ে বেশি ওর পারফর্মেন্স নিয়ে কনসার্ন আর কেউ হবে না। ও যদি একটা দুইটা তিনটা ম্যাচ ফেইল করে আমি নিশ্চিত ওই একমাত্র খেলোয়াড় যে কামব্যাক করতে পারবে। কারণ তার নিজস্ব একটা ভাবমূর্তি বিশ্ব ক্রিকেটে আছে। আমার কাছে মনে হয় ওর সেই সামর্থ্য আছে আর যদি টপে সাকিব তামিম মুশফিক বিজয় আছে রিয়াদ ব্যাটিং করছে। এই পাঁচজন যদি, আমি বলছি এটা পজিটিভ চিন্তা। রিস্ক থাকলেও এটা পজিটিভ চিন্তা। পাঁচজনের মধ্যে যদি দুইজন ৪০ বা ৪৫ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে পারে আমরা যে কোন উইকেটে জয়ের রানের কাছাকাছি পৌঁছে যাব। পাশাপাশি সাব্বির রহমান রুম্মন আছে ওর ভাল কিছু ইনিংস আছে। ওই সময় যে ইনিংস খেলতে হয় সে সামর্থ্য ওর আছে। ৭/৮-এ কি করতে পারি আমার কাছে যেটা মনে হয় ওই জায়গাটা ওপেন আছে। যারা অলরাউন্ডার আছে যারা দলে সুযোগ পেয়েছে তাদের জন্য বড় সুযোগ এবং আমি এটা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।’ সাকিবও দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৩৭ রান করার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৭ রান করেছেন। বল হাতেও দেখিয়েছেন ঝলক। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৩ উইকেট নেয়ার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ৩ উইকেট নিয়েছেন। দুই ম্যাচেই ম্যাচসেরাও হয়েছেন। নৈপুণ্যের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান সাকিব, ‘শেষ দুইদিন ধরে ভাল পারফর্মেন্স হচ্ছে ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগেই। আলহামদুলিল্লাহ চেষ্টা থাকবে এটা যেন ধারাবাহিকভাবে করতে পারি।’ তিন নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করা নিয়ে সাকিব জানান, ‘আমাদের ব্যাটিংটা আরও অনেক বেশি নিখুঁত হবে এখন। আমাদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর একটা প্রতিযোগিতা সবসময় কাজ করে। দলের মধ্যে কে বেশি রান করছে, কে বেশি উইকেট পাচ্ছে। এটা দলের মধ্যে সবসময়ই আমরা ইতিবাচকভাবে আলোচনা করি। আমার কাছে মনে হয় প্রতিযোগিতাটা আরও ভাল হবে। এখন আমরা স্বাধীনভাবে খেলার পাশাপাশি সিদ্ধান্তও নিতে পারি।’ ঝুঁকি নিয়ে যে সাফল্য মিলেছে এখন সেই ধারা বজায় রাখতে পারলেই হয়।
×