ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধনীতে রাষ্ট্রপতি

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কাজে লাগানোর চেষ্টা চালান

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কাজে লাগানোর চেষ্টা চালান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কৃষিবিদ, বিজ্ঞানী, কৃষক ও উদ্যোক্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, প্রাণী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি)-২০৩০ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। শনিবার বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) এর অডিটরিয়ামে রাষ্ট্রপতি প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত মেলার শুভ উদ্বোধনকালে এ আহ্বান করেন। ‘বাড়াবো প্রাণিজ আমিষ গড়বো দেশ, স্বাস্থ্য মেধা সমৃদ্ধির বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উদ্যোগে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ২০১৮’ উদযাপন শুরু হয়েছে। এর উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মৎস্য ও গবাদিপশু পালন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগের জন্য একটি বড় ও সম্ভাবনাময় খাত।’ রফতানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে উৎপাদনের গুণগতমান নিশ্চিত করুন।’ রাষ্ট্রপতি সকল স্তরে উৎপাদনের যথাযথ মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, পরীক্ষাগার গড়ে তোলা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও আইনী কাঠামো কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পণ্যের চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যের কারণে ভোক্তারা এখন বাজারে যৌক্তিক দামে ডিম, দুধ, মাংস পাচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, ‘শুধু ভোক্তাদের সুযোগ-সুবিধার কথা ভাববেন না। একই সঙ্গে উৎপাদকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিন।’ পণ্যের ন্যায্যমূল্য বজায় রাখার পাশাপাশি এই খাতের রফতানি আয়ের ব্যাপারেও নজর দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী যারা অতীতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেয়ার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের কর্মকা-ের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তাদের কর্মকা- দেশের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে এবং বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বৈশ্বিক রফতানি বাজারকে খুবই প্রতিযোগিতামূলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের পণ্যকে অবশ্যই সেরা হতে হবে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও রাষ্ট্রপতি সতর্ক করে দেন।’ খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনকারী বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য ২০৩০ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে প্রাণিসম্পদ খাতে ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনে আরও উন্নত সেবা দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ সামগ্রিক কৃষির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে প্রাণিসম্পদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। প্রাণিজ আমিষের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশীয় উৎস থেকেই তরল দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মানুষ ও পণ্য পরিবহন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং অত্যধিক বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে প্রাণী থেকে প্রাণী এবং প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগব্যাধির বিস্তার ঘটছে। রাষ্ট্রপতি এ সময় বিজ্ঞানসম্মত পশুপালন ব্যবস্থা অনুসরণের মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তা এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ নির্ভর কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত। এ খাত এখন আর শুধু বেকারত্ব রোধের খাত নয়, বরং ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি এ খাতকে শিল্পেরও মর্যাদা দিয়েছে। তিনি আশা করেন, গুণগত সেবা, ই-সার্ভিস, নিরাপদ প্রাণিজাত খাদ্য উৎপাদন এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি আরও উন্নত প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এসডিজি অভীষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। নিরাপদ প্রাণিজাত আমিষ উৎপাদন, বিপণন ও প্রক্রিয়াকরণসহ জনগণকে সার্বিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর আয়োজিত ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ২০১৮’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও রাষ্ট্রপতি প্রত্যাশা করেন। এর আগে সকাল ৯টায় সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি, হাতি, ব্যান্ড ও বাউল দলের সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালির মাধ্যমে শুরু হয় ৬ দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ-২০১৮। র‌্যালিটি শনিবার সকাল ৯টায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউ প্রদক্ষিণ করে অধিদফতর প্রাঙ্গণে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আইনুল হক জানান, ‘সুস্থ ও মেধাবী জাতি গড়তে প্রোটিনের প্রয়োজন, আর এ প্রোটিনের প্রধান উৎস হলো প্রাণিসম্পদ। প্রাণিসম্পদ সেক্টরের উন্নয়ন তুলে ধরা, উন্নত জাতের পশু প্রদর্শন এবং জনগণকে প্রাণিজ আমিষের গুরুত্ব সম্পর্কে জানানোই হলো প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের মূল লক্ষ্য। তিনি জানান, ২০২১ সালের মধ্যে মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর’। এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ। এ উপলক্ষে ২০-২২ জানুয়ারি রাজধানীর কৃষি খামার সড়ক সংলগ্ন কেআইবি চত্বরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা চলবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত, ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি। এছাড়াও ২৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে খামারি সমাবেশ। ২৫ জানুয়ারি সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সেবা সপ্তাহের আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রাণিসম্পদ-সংক্রান্ত রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে সমাপনী অনুষ্ঠানে। এছাড়াও স্কুল, কলেজ ও এতিমখানাগুলোতে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস খাওয়ানো হবে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এম মাকসুদুল হাসান খান, প্রাণিসম্পদ সেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আইনুল হকও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পেশাজীবী, বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, উর্ধতন বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
×