নাজিম মাহমুদ ॥ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্ষপূর্তির দিনেই আমেরিকাজুড়ে নজিরবিহীন অচলাবস্থা শুরু হয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় রাতে মার্কিন সিনেটে সরকারী ব্যয় সংক্রান্ত বিল পাস না হওয়ায় শনিবার থেকে হোয়াইট হাউসসহ সকল সরকারী অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাম্পের রিপাবলিকান শিবির এ ঘটনার পেছনে ডেমোক্র্যাটদের কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ তুলেছে। তারা বলেছে, ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকানদের জিম্মি করছে। দলটির নেতারা সহজেই একটা সমঝোতায় আসতে পারত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্ষেপ করে বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা মার্কিন নাগরিকদের স্বার্থ নিয়ে রাজনীতি করছে। শনিবার সকালে এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটরা সমঝোতায় না এসে দেশকে অচল করার রাজনীতি বেছে নিল।
ডেমোক্র্যাটরাও ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর। দলটির সিনেট প্রধান চাক শুমার বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প সিনেটে উভয়দলকে প্রভাবিত করতে স্রেফ ব্যর্থ হয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা সরকারী ব্যয় বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে এর বিরোধিতা করেছে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের ব্যয় প্রস্তাবিত বিলে অন্তর্ভুক্ত ছিল। খবর বিবিসি, এএফপি, আলজাজিরা ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। ‘টেম্পোরারি স্পেন্ডিং’ নামের এ বিল পাসের শেষ সময়সীমা ছিল স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত পর্যন্ত। বিলটি পাস না হওয়ায় এরই মধ্যে লাখ লাখ সরকারী কর্মচারীর জীবনে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সিনেটে বিলটি পাসের জন্য ৬০ ভোটের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বিলের পক্ষে ৫০ ভোট পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে বিলটি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে পাস হলেও শুক্রবার সিনেটে আটকে যায়। প্রতিনিধি পরিষদে এ বিলের পক্ষে ২৩০ ও বিপক্ষে ১৯৭ ভোট পড়ে। তবে আগামী সোমবারের মধ্যে অচলাবস্থা কেটে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবির মনে করছে, আগামী সোমবার অফিস খোলার আগেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।
মার্কিন ব্যবস্থাপনা ও বাজেট বিষয়ক প্রধান মিক মুলভ্যানে বলেন, চলতি সপ্তাহান্তে আমরা এ সমস্যা সমাধানের আশা করছি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেস একই দলের নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও সরকারের বাজেট বাড়ানোর বিল অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হলো। এজন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা তাদের বেপরোয়া দাবি আদায় করতে বৈধ নাগরিকদের জিম্মি করে রেখেছে।
দলটির মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেন, তারা রাজনীতিকে সব কিছুর ওপরে রাখছে। তারা জাতীয় নিরাপত্তা, সামরিক ব্যবস্থা, অরক্ষিত শিশু এবং দেশকে, তার সব নাগরিকের সেবা করতে সক্ষম রাখার বিষয়গুলো অবহেলা করেছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এ বাজেট পাস না হওয়ায় শনিবার স্থানীয় সময় ১২টা ১ মিনিট পর্যন্ত অনেক সরকারী অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানের জরুরী সেবাকার্যক্রম অব্যাহত ছিল। গৃহায়ণ, আবহাওয়া, শিক্ষা ও বাণিজ্য বিভাগের অনেক কর্মী শনিবার ঘরের মধ্যে অলস সময় কাটায়। আগামী সোমবার পর্যন্ত মার্কিন কোষাগার, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা ও পরিবহন দফতরের প্রায় অর্ধেক কর্মী কাজ থেকে বিরত থাকবে। এ ঘটনায় ভিসা ও পাসপোর্ট প্রসেসিংয়েও বিলম্ব ঘটবে। তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন অনেক দফতর বন্ধ হয়ে যাবে বলে খবরে বলা হয়েছে। তবে জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ চলবে। যার মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা, ডাক, বিমান ওঠা-নামার, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সেবা, হাসপাতালে জরুরী বিভাগের সেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কারাগার, কর বিভাগ এবং বিদ্যুত উৎপাদন অন্যতম। তবে জাতীয় উদ্যান এবং স্মৃতিস্তম্ভগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে। ওবামার আমলে এ ঘটনা নিয়ে জনরোষ দেখা দেয়। শুক্রবার রাতে সিনেটে ভোট শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে নিজের হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, এটা আমাদের দক্ষিণের বিপজ্জনক সীমান্তের সামরিক, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য একদমই ভাল কিছু মনে হচ্ছে না। এর আগে ২০১৩ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে সিনেটরদের মতবিরোধে সরকারের তহবিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৬ দিন পর্যন্ত ওই অচলাবস্থা চলে। ওই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক কর্মী ছুটি নিতে বাধ্য হয়। বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ১৯৯৫ ও ৯৬ সালে দুইবার এমন হয়েছিল। সরকারী কর্মচারীরা এ সময়টাকে বিনাবেতনে ছুটি হিসেবে ভোগ করেন।
এই সমস্যার কারণ ॥ বিলটি আটকে দেয়ার পেছনে ডেমোক্র্যাটদের যুক্তি হচ্ছে, ৭ লাখের বেশি অনিবন্ধিত অভিবাসী শিশু বয়সে আমেরিকায় ঢুকেছে তাদের বহিষ্কার করা যাবে না। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা এক কর্মসূচীর মাধ্যমে তাদের সাময়িক আইনী বৈধতা দেন। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন -তিনি এ কর্মসূচী বন্ধ করে দেবেন এবং কংগ্রেসকে একটা নতুন পদক্ষেপ চূড়ান্ত করতে মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এরপর উভয় দলের মধ্যে দর কষাকষি শুরু হয়। ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানরা চাইছিলেন ডেমোক্র্যাটদের এ প্রস্তাব মেনে নেয়ার বিনিময়ে তাদের আবার রিপাবলিকানদের দুটি প্রকল্প মেনে নিতে হবে। এগুলো হচ্ছে- মেক্সিকো সীমান্তের দেয়াল নির্মাণ এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের স্বাস্থ্যবীমা কর্মসূচীর মেয়াদ বৃদ্ধি, যা ডেমোক্র্যাটরা বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে।
কিন্তু উভয়দলের সম্মতি আছে এমন দুটি আপোসরফার প্রস্তাবকে ট্রাম্প প্রত্যাখ্যান করেন। কিছু অভিবাসীর দেশকে নিয়ে বাজে মন্তব্যে সারা দুনিয়ায় আলোচনার বিষয় হন ট্রাম্প।