ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে জাহাজ কিনেছে সরকার, ফিনল্যান্ড থেকে আগামী মাসে আসবে

নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে জাহাজ কিনেছে সরকার

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২১ জানুয়ারি ২০১৮

নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে জাহাজ কিনেছে সরকার

রশিদ মামুন ॥ নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে ফিনল্যান্ড থেকে জাহাজ কিনেছে সরকার। তিন বছর আগে বাগেরহাটের শ্যালা নদীতে তেলবাহী একটি জাহাজ ডুবে যায়। এ সময় সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। তাৎক্ষণিকভাবে ওই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের হাতে উপযুক্ত জাহাজ ছিল না। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জাহাজটি কাজে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী মাসেই জাহাজটি বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্দরে যেসব জাহাজ নোঙ্গর করে তারাও পোড়া তেল নদীতে ফেলে দেয়। বিশেষ করে মংলাবন্দরের জাহাজ যে তেল ফেলে যায়, তা সুন্দরবনের পরিবেশ বিনষ্ট করে। এতদিন ধরে ক্রমাগতভাবে পরিবেশ নষ্ট করা হলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই জাহাজ দিয়ে ওই বর্জ্য জ¦ালানি পরিষ্কার করা হবে। মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর এ কে এম ফারুক হাসান শনিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে ফিনল্যান্ড থেকে তারা জাহাজটি সংগ্রহ করেছে। আগামী মাসেই জাহাজটি বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। বন্দরে জাহাজ থেকে নিঃসৃত তেল অপসারণের জন্য এই জাহাজ কাজে লাগানো হবে। একই সঙ্গে তেলবাহী ট্যাঙ্কার দুর্ঘটনায় পড়ে নদীতে তেল নিঃসরণ করলে তাও অপসারণ করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, আমরা বন্দর এলাকায় একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করছি। তবে পশুর নদীর আয়তন বড় হওয়ায় এ ধরনের আরও দুটি জাহাজ প্রয়োজন বলে জানান তিনি। শ্যালা নদীতে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর তলা ফেটে ডুবে যায় ‘এমভি ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন’ নামের একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার। এতে সুন্দরবনে প্রায় তিন লাখ টন তেল ছড়িয়ে পড়ে। সুন্দরবনের যে এলাকায় জাহাজটি ডুবে যায় সেখানে বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ছয় প্রজাতির ডলফিনের অভয়াশ্রম রয়েছে। পানিতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে। এছাড়া পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্র্জাতিক পরিবেশবিদরাও বেশ শঙ্কা প্রকাশ করে। জাতিসংঘও এ সময় প্রতিনিধি দল পাঠায়। ভবিষ্যতে এ ধরনের সঙ্কট এড়াতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলে। তবে এই ঘটনার তিন বছর পর এসে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৪ সালে তেলবাহী জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সুপারিশে ভবিষ্যত সুন্দরবনের সুরক্ষায় এ ধরনের জাহাজ ক্রয়ের সুপারিশ ছিল। এছাড়াও অন্যান্য সুপারিশও বাস্তবায়ন করছে সরকার। ওই সময় দেখা গেছে বনের আশপাশের সাধারণ বাসিন্দা ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের কাছে বিক্রি করেছে। তেলবাহী জাহাজটিতে ফার্নেস অয়েল ছিল যা অন্য তেলের তুলনায় বেশ ভারি। সহজে এই তেল পানিতে মিশে যায় না। পানির উপরে স্তর আকারে জমে থাকা তেলের কিছু অংশ সংগ্রহ করে স্থানীয়রা। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সম্প্রতি সংসদীয় কমিটিকে জানান, এ ধরনের জাহাজের অভাবেই তখন তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যায়নি। দুর্ঘটনার পর তেল অপসারণের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বা মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত ছিলো না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সদস্য এম আবদুল লতিফ বলেন, দেশে বিদ্যমান ক্লিনার ভেসেল শ্যালা নদীতে ভাসমান তেল অপসরণ করতে সক্ষম হয়নি। এ সময় মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনে তেলবাহী জাহাজের নিঃসরিত তেল নদীতে ভাসমান অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিদ্যমান ক্লিনার দিয়ে তা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। নদীর ভাসমান তেল অপসারণ সাধারণ ক্লিনার জাহাজ দিয়ে সম্ভব নয়। বিদ্যুত, জ¦ালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রামপালে নির্মাণ করা হচ্ছে কয়লা চালিত এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র।
×