ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সক্ষমতা অনুযায়ী দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০২:১১, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

সক্ষমতা অনুযায়ী দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সক্ষমতা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে অবকাঠামোখাতে ব্যাপক সংস্কারের তাগিদ দেয়া হয়েছে। বর্তমান ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হলেও এটা নিয়ে আত্মততুষ্টির কিছু নয়। বরং সক্ষমতা অনুযায়ী এখনও দেশে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না। শনিবার ঢাকার বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ডুয়িং বিজনেস’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আলোচকরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম। এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি ফারুক সোবহান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নিহাদ কবির প্রমুখ। বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হচ্ছে। এটা নিয়ে সুখী হওয়া যায়, কিন্তু এতে আত্মতুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। যে দেশে মোট জনগোষ্ঠীর বয়স ৫০ শতাংশ ২৫ বছরের মধ্যে, যে দেশে মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কম, সেখানে আমরা কীভাবে বলি, সক্ষমতা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ট্রেড লজিস্টিকে আমরা প্রতিবছর ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা হারাচ্ছি। এখন গড়ে ১০ দিন পণ্যবাহী জাহাজকে বহির্নোঙ্গরে থাকতে হয়, যা নিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব না। উন্নয়নের জন্য দেশের আইন, প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোসহ সামগ্রিক ব্যবস্থায় সংস্কার আনার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক অবকাঠামো দিয়ে আমরা আগাতে পারব না। পরের ধাপে যাওয়ার জন্য আরও বৃহৎভাবে সংস্কার প্রয়োজন। বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশের তালিকায় অবস্থান নেয়ার যে লক্ষ্য সরকার ঠিক করেছে, তা অর্জনে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার এখনকার চেয়ে ১গ থেকে ১২ গুণ বাড়াতে হবে শুধু তাই নয়, বর্তমানে আমাদের মাথা পিছু আয় এক হাজার ৬০০ ডলারের কাছাকাছি। অর্থাৎ দেশের মোট আয় ২৫৬ বিলিয়ন ডলারের মতো। কিন্তু ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে ২৪ বছরের মধ্যে দেশের মোট আয় তিন ট্রিলিয়নে উন্নীত করতে হবে। অর্থাৎ ২৪ বছরের মধ্যে আজকের বাংলাদেশকে ১০ থেকে ১২ গুণ করতে হবে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের আন্তর্জাতিক মূল্যায়নে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্চাকাঙ্খা পোষণ করা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত সিটি গ্রুপের বিবেচনায় গত ২০১০ হতে ২০৫০ এই কালপর্বে বিশ্বের যে ১১টি দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে জেপি মরগান এর ফ্রন্টিয়ার ফাইভ তালিকাতেও স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া প্রাইচওয়াটারহাউস কোপারস তাদের এক প্রতিবেদনমতে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। যদিও বর্তমানে এ অবস্থান ৩৮তম। অর্থমন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, মোট দেশজ উৎপাদন বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। প্রতিশ্রুত অনুযায়ী বিদেশী বিনিয়োগ আনার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশী বিনিয়োগও যাতে বাড়ে সে বিষয়টির উপরও খেয়াল রাখা হচ্ছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটেও এর প্রতিফলন থাকবে। চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে সরবরাহের দিক থেকে শিল্প ও সেবাখাত এবং চাহিদার দিক থেকে ব্যক্তিখাতের ভোগ ব্যয় এবং ব্যক্তি ও সরকারী খাতের বিনিয়োগ ব্যয় হবে এই প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি। এছাড়া রাজস্ব ও মুদ্রা নীতির সুসমন্বয় এ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। এদিকে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে সরকারের আরো বেশি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ দ্রুত শেষ করা জরুরি। এছাড়া বিদ্যুৎখাতের টেকসই উন্নয়নের কথা বলেছে বিশ্বব্যাংক। কারণ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় এখনো বেশ ত্রুটি-বিচ্যুত রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে (২০১৬-২০) জিডিপি গড় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ লক্ষ্য নির্ধারণ করছে সরকার। কাঙ্খিত হারে দারিদ্র্য হ্রাস ও মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
×