ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লালপুরে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা

প্রকাশিত: ০১:৩৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

লালপুরে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা

সংবাদদাতা,লালপুর ॥ নাটোরের লালপুরে কুজিপুকুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী রানা আলীর বিরুদ্ধে। নৈশ প্রহরী রানা আলী ঐ গ্রামের প্রাক্তন ইউপি সদস্য কিশোরী মেম্বরের পুত্র ও বর্তমান ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান নান্টুর শ্যালক। আর সে কারণেই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি। থানায় মামলা করতে যেতে চাইলে এলাকার মাতবররা বিষয়টি মীমাংসার কথা বলে নাম মাত্র শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যালয়ের অভিভাবক মহলে চলছে নানা রকম শঙ্কা। পাড়া মহল্লায় চলছে নানা সমালোচোনা। ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুজিপুকুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ঐ শিক্ষার্থীকে প্রায়ই বিরক্ত করতো বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী রানা আলী। তারই ধারাবাহিকতায় ৮ জানুয়ারী ঐ ছাত্রী খাতায় স্টেপলার করতে বিদ্যালয়ের অফিসে গেলে কোন শিক্ষক না থাকায় নৈশপ্রহরী রানা আলী তাকে জাপটে ধরে ধর্ষন করার চেষ্টা করে। ঐ ছাত্রীর চিৎকারে অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা অফিস কক্ষে ঢুকে পড়লে রানা তাকে ছেড়ে দেয়। গত ১১ জানুয়ারী ঐ ছাত্রীর অভিভাবক ও এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে লম্পট রানা এবং তার লোকজন উল্টো তাদেরকেই দেশী অস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেখালে সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ৬নং দুয়ারিয়া ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি রুহুল আমিন সেখানে উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে সেখানকার পরিবেশ শান্ত হয়। রুহুল আমিনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষীতে গত ১৬ জানুয়ারী গ্রামে একটি শালিস বসে। শালিস প্রধানরা অজ্ঞাত কারনে নামমাত্র শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। উক্ত শালিসে চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম লাভলু লম্পট রানার বিচার করা বাদ দিয়ে উল্টো ভুক্তভুগি পরিবারের কাছে ধর্ষন চেষ্টা হয়েছে এর সঠিক প্রমাণ চেয়ে বসেন। কিন্তু ভুক্তভুগি পরিবার প্রমাণ দিতে না পারায় লম্পট রানার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন চেয়ারম্যান। গ্রাম্য শালিসে পরবর্তীতে ভুক্তভুগি পরিবার যদি আর কখনো এমন কান্ড করে তবে তাদের স্বেচ্ছায় এলাকা ছাড়তে হবে বলে হুশিয়ারী দেন চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম লাভলু। এ বিষয়ে কুজিপুকুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকবর আলী বলেন, এটি একটি সাজানো ঘটনা। মেয়েটি আমাদের সেদিন(৮ জানুয়ারী) কিছুই বলেনি। অথচ পরের দিন পরিবারের লোকজন এসে বিচার চাইছেন। কিন্তু পরে চেয়ারম্যানের শালিসে মেয়ে পক্ষই হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছেন। এ বিষয়কে নিয়ে আর লেখালেখি না করাই ভালো। এদিকে সরেজমিনে কুজিপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় আধা ভাঙা এক ঝুপড়ি ঘরে দরিদ্র ভুক্তভুগির বসবাস। কথা হয় পরিবারের কয়েকজনের সাথে। ভুক্তভুগি শিশুটির দাদী বলেন, গরীবের বিচার আল্লাই করবে বাবা। গরীবের ইজ্জতের দাম নাই। আল্লাই করবো তাগো বিচার। চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম লাভলু বলেন, আপনারা যে কথা শুনছেন সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি শালিস করছি। শালিসে কোনরকম সাক্ষী প্রমাণ নাই। মেয়েটি শালিসে বলছে একদিন আমার পকেটে হাত দিয়ে রানা বলেছে দেখি তোর পকেটে কয় টাকা। মেয়েটির বাড়ির কাছেই ছেলেটির বাড়ি। সম্পর্কে প্রতিবেশী বোন হয়। এছাড়াও মেয়েটি বলছে তার কোমরে হাত দিয়ে রানা ঘুরিয়েছে। তাদের অভিযোগে আছে অন্য দুজন মেয়ে এসময় দেখছিলো। কিন্তু শালিসে ঐ মেয়েরা স্বীকার করেনি। কোন স্বাক্ষী প্রমান না থাকায় কমপক্ষে ৫০ জন প্রধানের উপস্থিতিতে ঐ ছেলেকে মাফ করে দিয়েছি। এছাড়াও মেয়ের পরিবার খুবই গরিব মানুষ। তাই তাদের বলছি আপনাদের মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন। আমি আপনাদের বিশ হাজার পারি আর ত্রিশ হাজার পারি টাকা দেব।
×