ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রান ও ৪ শতাধিক উইকেট; তামিমের ১১ হাজার রান, ৩০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচের মাইলফলক মুশফিকের, সাব্বির-বিজয়ের ওয়ানডেতে ;###;১ হাজার

সাকিবের আরও এক কীর্তি

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

 সাকিবের আরও  এক কীর্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একইদিনে অনেকগুলো অর্জনের সাক্ষী হয়েছে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম। ছুটিরদিন শুক্রবার ‘হোম অব ক্রিকেটে’ ছিল উপচেপড়া ভিড়। কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহের অধীনে নতুন দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ। সেই ম্যাচে নতুন তিনটি দেশীয় রেকর্ডের মালিক হয়েছেন তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম। তিনজনই হাঁকিয়েছেন অর্ধশতক। তামিম প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (তিন ফরমেটে) ১১ হাজার রান পূর্ণ করে ৮৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন। সাকিব দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেন ৬৭ রানের ইনিংস খেলার পথে। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনি চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রান ও ৪ শতাধিক উইকেট শিকারের বিরল কীর্তিরও জন্ম দিয়েছেন। এই ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (তিন ফরমেটে) ৩০০ ম্যাচ খেলার গৌরব অর্জন করেছেন মুশফিক। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে দর্শক খুঁজতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন পড়েছিল। কিন্তু টাইগারদের ম্যাচ দেখার জন্য আবার প্রাণস্পন্দনে ভরে ওঠে শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। এমন একটি দিনে মাত্র ৭ রান প্রয়োজন ছিল তামিমের একটি অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়তে। শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। আর শুরুতেই সেই রানটা করে নতুন এক নজিরের কীর্তি গড়েন তামিম। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিন ফরমেটের ক্রিকেটে ১১ হাজার রান করার গৌরব অর্জন করেন এ বাঁহাতি ওপেনার। তার সঙ্গী এনামুল হক বিজয় পূর্ণ করেন ওয়ানডেতে ১ হাজার রান। বিজয় ৩৭ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৩৫ রান করে আউট হওয়ার পথে এ গৌরব অর্জন করলেন ক্যারিয়ারের ৩২তম ম্যাচে। আর তামিম আবার অর্ধশতক হাঁকান। শুরুতে কিছুটা ধীরস্থির থাকলেও তিনি পরের দিকে বেশ দ্রুতগতিতে ব্যাট চালিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ১০২ বলে ৭ চার, ২ ছক্কায় ৮৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেও অপরাজিত ৮৪ রানের একটি ইনিংস খেলেন তামিম। সেদিনই হতে পারতো ১১ হাজার আন্তর্জাতিক রানের কীর্তি। কিন্তু বাংলাদেশ দল জয় তুলে নেয়াতে সেটি হয়নি। না হলে যাদের বিপক্ষে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তাদের বিপক্ষেই এ মাইলফলক ছোঁয়া হতো। অবশ্য ১১ হাজার রান করতে তামিমের সময় লেগেছে ১১ বছরেরও কম সময়। বিশ্বের ৬৭তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মর্যাদা অর্জন করেছেন তিনি। তবে ম্যাচ শেষে তিনি তালিকায় উঠে এসেছেন ৬৫ নম্বরে। তার নিচে চলে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার মার্ক টেইলর (১১,০৩৯) ও শ্রীলঙ্কার এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (১১,০৭৬)। এখন তামিমের রান ২৮৭ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৩৪.৪০ গড়ে ১১ হাজার ৭৭। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হারারেতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল। সেটাই ছিল তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এরপর থেকেই দলের অপরিহার্য ব্যাটসম্যান হিসেবে নিয়মিত খেলেছেন টাইগারদের জার্সি গায়ে। তামিম দেশের হয়ে ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০ এই তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই সর্বাধিক রানের মালিক। এই তিন ফরমেটেই সর্বাধিক সেঞ্চুরির রেকর্ডও তার বাংলাদেশের পক্ষে। ১৭৬ ওয়ানডেতে ৩৫.১১ গড়ে ৫৯৩৪ রান করেছেন ৯ সেঞ্চুরি ও ৪০ হাফ সেঞ্চুরিসহ। এছাড়া ৫২ টেস্টে ৮ সেঞ্চুরি ও ২৪টি হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩ হাজার ৮৮৬ রান। এছাড়া ৫৯ টি২০ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিসহ ১ হাজার ২৫৭ রানের মালিক তামিম। এখন তামিমের নিচেই অবস্থান সাকিবের। তামিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেছেন তিনি। ৬৬ রানের প্রয়োজন ছিল এই কীর্তির জন্য। তিনি ৬৩ বলে ৭ চারে ৬৭ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন। ২৯৪ ম্যাচে এখন সাকিবের রান ১০ হাজার ১। ক্রিকেট ইতিহাসের ৭৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। আর ৪২ রান করতে পারলে তামিম একই ভেন্যুতে সর্বাধিক রান করার ক্ষেত্রে সনথ জয়সুরিয়ার (২৫১৪) রানকে টপকে বিশ্বরেকর্ড গড়তেন। সেটি হয়নি, তবে ইনজামাম উল হককে টপকে (২৪৬৪) এখন দুই নম্বরে উঠে এসেছেন। এর সঙ্গে আরেকটি বিরল রেকর্ডেরও মালিক হয়েছেন সাকিব। সবমিলিয়ে ২৯৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ক্যারিয়ারে তার ঝুলিতে আছে ৪৯০ উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসের চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে একই সঙ্গে ব্যাট হাতে ১০ হাজার রান এবং বল হাতে ৪ শতাধিক উইকেটের কীর্তি গড়ার গৌরব অর্জন করেছেন। সেদিক থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস সবার ওপরে। তিনি ৫১৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ২৫ হাজার ৫৩৪ রান করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছেন ৫৭৭ উইকেট। পাকিস্তানী অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি ৫২৩ ম্যাচে ১১১৮৫ রান ও ৫৪০ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয়। তিন নম্বরে আছেন সনথ জয়সুরিয়া। এ লঙ্কান ৫৮৬ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ২১ হাজার ৩২ রান করেছেন এবং ৪৪০ উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু অলরাউন্ডার হিসেবে যে কীর্তি গড়েছেন সাকিব সেটা করে দেখাতে পারেননি গ্যারি সোবার্স, ওয়াসিম আকরাম, কপিল দেব, ইয়ান বোথাম ও ইমরান খানের মতো অলরাউন্ডারদের ক্যারিয়ারে দেখা যায়নি। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে হারারেতে অভিষেক হয়েছিল সাকিবের। একই বছর টি২০ ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া সাকিব এ ফরমেটে ৬১ মাচ খেলে ২৩.০৭ গড়ে ১২২৩ রান করেছেন ৬ অর্ধশতকসহ। ২০০৭ সালে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর ৫১ ম্যাচে ৪০.৩৮ গড়ে করেছেন ৩৫৯৪ রান। ৫ সেঞ্চুরি ও ২২ হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে এ ফরমেটে তার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও দুরন্ত সাকিব একসময় তিন ফরমেটেই আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন। এখনও টেস্ট ও টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিনি। আরেকটি অর্জন যোগ হয়েছে এদিন। অপরিহার্য ব্যাটসম্যান মুশফিক প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৩০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এদিন। ২০০৫ সালের মে মাসে লর্ডসে টেস্ট অভিষেক দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিলেন মুশফিক। পরের বছর ওয়ানডে ও টি২০ অভিষেক ঘটে তার। এরপর মিডলঅর্ডার ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ হয়ে ওঠেন নিয়মিত নৈপুণ্য দেখিয়ে। দলের উইকেটরক্ষক হিসেবেও অপরিহার্য হয়ে ওঠেন। সে কারণে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শুক্রবার নামার আগে ১৮০ ওয়ানডে, ৫৮ টেস্ট এবং ৬১ টি২০ অর্থাৎ ২৯৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছিল তার। বাংলাদেশের হয়ে তারচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি আর কোন ক্রিকেটার। এদিন ৫২ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৬২ রানের একটি দ্রুতগতির ইনিংস খেলেন মুশফিক। সবমিলিয়ে ৩০০ ম্যাচ খেলে ৩১.৩৬ গড়ে ৮ হাজার ৯০৯ রান করেছেন তিনি ৩০০ ম্যাচ খেলে। ৩০ বছর বয়সী মুশফিকের পরে আছেন সাকিব ২৯৪ ম্যাচ খেলে। এরপর তামিম ২৮৬, মাশরাফি ২৭২ এবং মোহাম্মদ আশরাফুল ২৫৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের মধ্যে সেরা পাঁচে আছেন। আর পরে সাব্বির রহমান রুম্মন ২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দিয়ে ওয়ানডেতে ১ হাজার রান পেরিয়ে যান। এ জন্য ৪৮ ম্যাচ খেলতে হয়েছে এ মারকুটে ব্যাটসম্যানকে।
×