ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাতুরাসিংহের দলকে ১৬৩ রানে হারাল মাশরাফিবাহিনী

শ্রীলঙ্কাকে পাত্তাই দিল না বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

শ্রীলঙ্কাকে পাত্তাই দিল না বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ‘মর্যাদা’র ম্যাচ ছিল। এই ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কাকে পাত্তাই দিল না বাংলাদেশ। ‘মর্যাদা’র ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ। হাতুরাসিংহের শ্রীলঙ্কাকে ১৬৩ রানে হারিয়ে দিল মাশরাফিবাহিনী। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সাবেক কোচ ও শ্রীলঙ্কার বর্তমান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেকেও একটা জবাব দেয়া গেল। রানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টিই পেয়ে গেল মাশরাফির দল। বাংলাদেশের কোচ এখন নন চন্দিকা হাতুরাসিংহে। তিনি শ্রীলঙ্কার কোচ। ত্রিদেশীয় সিরিজের আগেই বাংলাদেশ কোচের দায়িত্ব ছেড়ে শ্রীলঙ্কার কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন। হঠাৎ করেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। তাতে শ্রীলঙ্কার ‘নতুন’ শুরু হচ্ছে ভাবা হয়েছিল। হাতুরাসিংহের ছোঁয়াতে শ্রীলঙ্কা বদলে যাবে। যেমন করে বদলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এমন ভাবা হয়েছিল। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা যদি জিততো তাহলে সবার মুখে শোনা যেত হাতুরাসিংহে নেই, তাই বাংলাদেশ দলের এমন দশা। এই কারণগুলোর জন্যই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য ‘মর্যাদা’র ম্যাচে পরিণত হয়েছিল। সেই ‘মর্যাদা’ ক্রিকেটাররা রাখল। শুক্রবার হয়েছে ম্যাচটি। আবার খেলাটি হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০১৪ সালের শেষদিক থেকে যে ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে’ দেখার মিলেছে, সেই বাংলাদেশের বিপক্ষে দেশের মাটিতে এতদিন খেলেনি শ্রীলঙ্কা। অবশেষে খেলল। দেখেও নিল বাংলাদেশ দেশের মাটিতে কতটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল হয়ে উঠেছে। এই দলটি এমন পর্যায়ে গেছে ক্রিকেটারদের নৈপুণ্যের কল্যাণেই। সঙ্গে কোচ হাতুরাসিংহের মেধাও ছিল। তবে মাঠে ক্রিকেটাররাই খেলেছে। এই বিষয়টিও প্রমাণের ব্যাপার ছিল। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সেই কথা বলেছেনও। ক্রিকেটাররাই যে মাঠে খেলে দলকে সাফল্য এনে দিয়েছে তা বুঝিয়েছেনও। ক্রিকেটাররা তা প্রমাণও করল। কোচ মেধা দিয়ে দলকে পরিচালনা করেছেন ঠিক। কিন্তু খেলতে হয়েছে ক্রিকেটারদেরই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তো অসাধারণ খেলেছেন ক্রিকেটাররা। যেন সবার ভেতরই শ্রীলঙ্কাকে হারানোর ‘জেদ’ কাজ করেছে। সেই ‘জেদ’ কাজেও দিয়েছে। দর্শকে ভরা ছিল স্টেডিয়াম। দর্শকরাও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মনোমুগ্ধকর ব্যাটিংয়ে আনন্দ পেয়েছেন। এনামুল হক বিজয় যে শুরু থেকেই দর্শক মাতানোর মতো খেলতে থাকেন তা প্রশংসনীয় ছিল। নতুন জীবন পেয়েছেন ঠিক। তবে ওয়ানডেতে এক হাজার রান পূরণ করা বিজয় ৩৭ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় যে ৩৫ রান করেছেন তা খেলার গতি বাড়িয়ে দেয়। এরপর তামিম ইকবাল ঝড় তোলেন। তামিমের ব্যাটিং স্টাইলটাই এখন এ রকম হয়ে গেছে। শুরুতে একটু ধীরে ধীরে এগিয়ে যান, এরপর ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে বড় স্কোর গড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হয়েই সেই ইনিংস যেন ধরা দেয়। কারণ শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও আর তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি তামিম। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলা শেষ হয়ে যায়, তাই ৮৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুযোগ থাকলেও সেই ৮৪ রানেই আউট হয়ে যান। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব ফরমেট মিলিয়ে এগারো হাজার রান পূরণ করা তামিম যখন আউট হন ততক্ষণে দলের স্কোর ১৭০ রানে গিয়ে দাঁড়ায়। ৩০ ওভারে থাকে ম্যাচ। তখনই বোঝা হয়ে যায় তিন ’শ রান তো অনায়াসে অতিক্রম করবে বাংলাদেশ। এরপর সাকিব আল হাসান (৬৭) হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যান। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব ফরমেট মিলিয়ে দশ হাজার রান করেন। দশ হাজার রান ও চার ’শ উইকেট নেয়ার কীর্তিও গড়েন সাকিব। বিশ্ব ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস, পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি ও শ্রীলঙ্কার সনত জয়সুরিয়ার পর সাকিবই সব ফরমেট মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন রেকর্ড গড়েন। এ মুহূর্তে খেলোয়াড় ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিবই এমন কৃতিত্ব গড়েন। সাকিবের পর মুশফিকুর রহীমও দেখান ব্যাটিং ঝলক। ৬২ রানের ইনিংস খেলেন। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ৩০০তম ম্যাচে খেলতে নেমে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দেখান মুশফিকও। তাতেই ৩০০ রানের কাছে চলে যায় বাংলাদেশ। মাঝপথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২৪) ও শেষে ওয়ানডেতে এক হাজার রান করা সাব্বির রহমান রুম্মন (২৪*) যে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করেন তাতে দলের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৩২০ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ৩০০ রান বা তার বেশি রান করেছে বাংলাদেশ। এই রান করার পরই বাংলাদেশ যে জিতবে সেই আশা সবার ভেতরই জেগে যায়। শেষ পর্যন্ত জিতেও বাংলাদেশ। সহজ জয়ই তুলে নেয়। ম্যাচটির আগে মাশরাফি বলেছিলেন, একটা ব্র্যান্ড হিসেবে খেলতে চান। শুরুতেই পাঁচ ব্যাটসম্যানকে রাখা হয়। ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এর মধ্যে দুইজন ব্যাটসম্যান যদি বড় ইনিংস গড়তে পারেন তাহলেই ভাল ফল মিলে যাবে। ঝুঁকি ভালভাবে কাজেও লেগেছে। ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্যই দেখাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা। তাতে করেই জিম্বাবুইয়ের পর শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। এমনই বোলিং করেন বাংলাদেশ বোলাররা, যিনি বল করতে আসেন, উইকেট শিকার করেন। একদিকে স্পিন ঘূর্ণি, আরেকদিকে গতির ঝড় মিলে তছনছ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস। একজন ব্যাটসম্যানও ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। চান্দিমাল চেষ্টা করে ২৮ রানের বেশি করতে পারেননি। শুরুতে উপুল থারাঙ্গা ২৫ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারেননি। শেষে গিয়ে সাকিবের ৪ বলে ২ ছক্কা ও ২ চার হাঁকিয়ে ২০ রান মুহূর্তেই যোগ করে সাকিবের বলেই আউট হয়ে যান ২৯ রান করা থিসারা পেরেরা। দেখতে দেখতে ১৫৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। এমনই বাজে হাল হয়েছে লঙ্কান দলের, হাতুরাসিংহে এবং শ্রীলঙ্কাকে যেন লজ্জাই দিল বাংলাদেশ। রানে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়টিই পেয়ে গেল বাংলাদেশ। ২০১২ সালে খুলনায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যে ১৬০ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই ইতিহাসকেও হার মানাল। মর্যাদার ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে পাত্তাই দিল না বাংলাদেশ।
×