ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরসা-আইএসআই এবং বিএনপি-জামায়াত

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

আরসা-আইএসআই এবং বিএনপি-জামায়াত

মমতাজ লতিফ ॥ প্রিয় দেশের প্রিয় দেশপ্রেমিক ভাইবোনেরা, একটি বিশাল ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সাবধান, নির্বাচন এগিয়ে এলে বিএনপি নেত্রীর নানারকম খেলা শুরু হয়ে যায়, এ বিষয়ে আপনারা ভালভাবে অবগত আছেন, সে কথা স্মরণে রাখবেন। অনেকেই স্বজন হারিয়েছেন এই নেত্রীর বারংবার অগণতান্ত্রিক, সহিংস মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য। আশ্চর্য হলেও সত্য এই যে- জিয়া যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলহত্যা, হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত ছিল, তেমনি এর বিপরীতে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত ও জামায়াতের খুনী নেতা, কর্মীদের খুনের অপরাধ থেকে মুক্তি দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছিল! একইভাবে খালেদা-তারেক জিয়ার পথ অনুসরণ করে তাদের পারিবারিক মিত্র জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠন করে জামায়াত নেতাদের সরকারের মন্ত্রী করেছিল। আবার অপরদিকে বাংলাভাইগংসহ জেএমবি, হরকাতুল জেহাদ, হিজবুত তাহরীর ইত্যাদি জঙ্গী দল গঠন করে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী দলের নেতা-কর্মী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল, সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপরও ’৭১-এর পাকি বাহিনীর মতো ধর্ষণ, লুট, বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে ভূমি-সম্পদ ধ্বংস ও দখল করেছিল! এই তিনজনের লক্ষ্যই ছিল- বাঙালী সংস্কৃতি-ভাষা-সাহিত্যকে পাকিস্তানীদের অনুকরণে হিন্দুয়ানী গণ্য করে বাংলাদেশের ইসলামীকরণ বা পাকিস্তানীকরণের লক্ষ্যে এ দেশকে হিন্দু শূন্য করা। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির চর্চাকারী আওয়ামীলীগ শূন্য করা। প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ দল, ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবী-শূন্য করা। এই লক্ষ্য যে বিএনপি ও জামায়াতের একমাত্র লক্ষ্য তা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আমরা আগেই শঙ্কিত বোধ করছিলাম যে, এবারের পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়ের বিএনপিপন্থী আমলাদের নিষ্ক্রিয়তার পরিণতিতে হাওড়াঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে কয়েক লাখ টন ধান, হাওড়ের একমাত্র শস্য ধ্বংস হয়ে গেলে সরকার ও জনগণ কতখানি খাদ্য সঙ্কটে পড়ে! এর পর পরই খুবই পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে বার্মার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রবেশের ঢল নামে! সরকারের খাদ্য সঙ্কট সামাল দেয়ার ক্রান্তিকালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল সরকারকে নাজুক অবস্থায় ফেলার পরিকল্পনাটা আইএসআই-এর পুতুল আরসা নেতাদের এবং আইএসআই-এর আরেক পুতুল খালেদা-তারেক-জামায়াতের যৌথ উদ্যোগে প্রণীত বলে অনেকে সন্দেহ পোষণ করছেন, যা নিয়ে জনগণকে দুইবার ভাবতে হবে বলে অনেকেই মনে করেন। জনগণের আশঙ্কা ছিল, সরকার যদি সংলাপ, বিশ্বচাপ তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসে, তাহলে তখনই আইএসআই-আরসা-বর্মী সেনা মিলে এমন একটি প্ল্যান তৈরি হতে পারে যার ফলে আরসা জঙ্গীগোষ্ঠী আবারও কিছু বর্মি সেনা চৌকিতে হামলা চালাবে যার ফলে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বার্মা সরকার-সেনাবাহিনী ফেরত নিতে অস্বীকার করে এবং রোহিঙ্গারাও নতুনভাবে বর্মী সেনাদের হামলার আশঙ্কায় ফেরত যেতে অনিচ্ছুক হয়। উপরন্তু, এর ফলে, বর্তমান সরকারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আন্তরিক পদক্ষেপটি ব্যর্থ হবে। পরিণতিতে সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা-স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিপুল চাপ সরকার ও স্থানীয় জনগণের পক্ষে দীর্ঘদিন সহ্য করা কঠিন হয়ে উঠবে। ফলে, স্থানীয় জনগণ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ-সংঘাত বিপজ্জনক মাত্রায় চলে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে আরসা তেমন একটি হালকা অপারেশন বর্মী সেনা চৌকিতে সংঘটিত করেছে! আরসা জঙ্গী দলের সঙ্গে বর্মী সেনাদের একটি গোপন সম্পর্ক আছে বলে অনেকে সন্দেহ করে এবং অর্থের বিনিময়ে এ দলটি বর্মী সেনাদের স্বার্থে কাজ করতেই পারে। কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা জোরেশোরেই তথ্য সংগ্রহকারীদের বলেছিল যে বর্মী সেনাদের রোহিঙ্গা দালালেরা ওখানে ভালো আছে। প্রশ্ন ওঠে- আরসা যদি রোহিঙ্গাদের স্বার্থে আন্তরিক হতো তাহলে ওরা বহু আগেই রোহিঙ্গাদের নাগরিক ও মানবাধিকারগুলোর জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম করত। যেমন কারেন, কাচিনরা লড়াই করেছে ও সফল হয়েছে। এমন কি ’৮২ সালের পর সেনা শাসনের কঠোর একযুগকে বাদ দিলেও সূচির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হলে তখনও রোহিঙ্গা নেতারা সূচির সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করে এ আন্দোলনে যুক্ত থেকে পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারের দাবীও চালিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দেখা গেছে তাদের মধ্যে ধর্মীয় জঙ্গীবাদ, এ দেশের জেএমবি নেতা বাংলা ভাই, আবদুর রহমান গং এবং জামাতের কট্টর চিন্তাধারা বিস্তার লাভ করেছে। এদের যৌথ উদ্যোগে বিএনপি-জামাত জোট আমলে চট্টগ্রাম-আরাকান মিলে একটি রাজ্য গঠনের অলীক স্বপ্নে তারা বর্মী সেনাবাহিনীর সঙ্গে একত্রে যুদ্ধও করেছিল! কক্সবাজার, বান্দরবনের গহীন অরণ্যে জঙ্গী আস্তানা, অস্ত্র গোলা আবিষ্কার হয় খালেদা-নিজামী-তারেক জমানার শেষদিকে! এদের এই প্ল্যানে অবশ্যই আইএসআই-এর বড় স্বার্থ ছিল, আছে। তারা বাংলাদেশকে আরেকবার আরসা-বর্মী বাহিনীর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দু’টুকরো করতে চেয়েছিল, না হয় চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে অস্থিতিশীলতার বীজ বপন করা হতো, যাতে মুক্তিযুদ্ধপন্থীরা সরকার গঠনে অ-সফল হয়! জঙ্গীমাতা খালেদা জিয়া হতো এ কর্মকা-ের সুফলভোগকারী, এতে কি কোন সন্দেহ আছে? ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারির ২৪, ২৫ এ সংঘটিত রক্তাক্ত বি.ডি.আর বিদ্রোহের সাফল্য যদি আসত তাহলে সুফলভোগী কে হত, তা তো সে সময়েই বহুল আলোচিত হয়েছিল। যাহোক, জনগণকে এবার, শেষবার দৃঢ়ভাবে হত্যার অপ-রাজনীতিক খালেদা জিয়াকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। বিএনপি’র গণতন্ত্রমনা গোষ্ঠী, হত্যা, গুম, পেট্রোলবোমা, গ্রেনেড-বোমা মেরে মুক্তিযুদ্ধপন্থী রাজনীতি ও রাজনীতিক হত্যাকে যারা সমর্থন করে না, দেশ ধ্বংসের নেতিবাচক কার্যক্রমে যারা অংশগ্রহণ করেনি, যারা দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে সংবিধান মেনে নির্বাচন ও ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, তারা খালেদা জিয়ার অঙ্গুলি হেলনে না চলে নিজের ওপর, নির্বাচন কমিশনের ওপর এবং জনগণের ওপর আস্থা রেখে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশ গঠনে নির্বাচন করতে পারে। নির্বাচনের পর তারা নতুনভাবে দলটিকে পুনর্গঠন করতে পারে। এবার তাদের জন্যও সে সুযোগটি এসেছে, যার সদ্ব্যবহারটিকে তাদের দূরদৃষ্টি ও দেশপ্রেমের ওপর নির্ভর করবে। একটি প্রশ্ন, খালেদা জিয়ার বিএনপির দলনেত্রী হওয়া বিদেশী গোয়েন্দাচক্রের নির্দেশ না থাকলে কি সম্ভব হতো? কেন? কারণ তাদের স্বার্থ উদ্ধারের কাজে তাদেরকে প্রথমেই কি মুক্তিযোদ্ধা, প্রগতিশীল নেতাদের বাদ দেবার প্রয়োজন ছিল না? তাদের জন্য পরীক্ষিত ’৭১-এ ঢাকা সেনানিবাসে তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য খালেদা জিয়া নিশ্চয় এমন কিছু প্রমাণ দিয়েছিল যে জিয়ার পর তাদের আস্থাভাজন নিশ্চয় খালেদা জিয়াই ছিল! আসলেই, পেছন থেকে আজ পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে একটা অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ে- একজন দেশ ও জাতি অন্তঃপ্রাণ, বার বার দখল হয়ে যাওয়া গণতন্ত্র উদ্ধারে ব্রতী, জাতির উন্নয়ন ও কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা এক মেধা ও ধী-সম্পন্ন নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতিটি কাজকে ধ্বংস করে, জাতির উন্নয়ন ও কল্যাণের সমস্ত চিহ্ন মুছে দিতে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোটার তালিকাকে বার বার নিজের দখলে নিতে, পেশীশক্তি, অর্থশক্তিকে দিয়ে, নিরাপত্তা বাহিনীকে দুর্বৃত্তে পরিণত করে সব ক্ষমতার মালিক হতে চাওয়া এক নেত্রী খালেদা জিয়া! বাংলাদেশের এবং বাঙালীর দুর্ভাগ্য যে তার মুক্তিযুদ্ধের মহান নায়ক বঙ্গবন্ধুর বিপরীতে একই সঙ্গে জন্ম নিয়েছিল এক খলনায়ক জিয়াউর রহমান! তার মৃত্যুর পরও জাতি রেহাই পায়নি। আইএসআই নেপথ্যে থেকে খালেদা জিয়াকে তার উত্তরাধিকারী করে বাঙালীকে শান্তি, গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন- সব কিছুকে গড়ে ওঠার পরপরই সে সবকে ভাঙার জন্য এক দানবীর জন্ম দিল! সৃষ্টি এবং ধ্বংস মুখোমুখি, পাশাপাশি চলছে। পুরাণে এ লড়াইকেই সম্ভবত বলেছে সুর-অসুরের লড়াই। পৃথিবীকে অসুরের শাসন থেকে রক্ষা করতে দেবতাদের সাহায্য করতে হয়েছিল স্বয়ং ব্রহ্মাকে! আজ বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘদিন বিচার না হওয়া ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী খুনী-দল তাদের স্বজন, তাদের একই লক্ষ্য-বাংলাদেশ, বাঙালী জাতির ধ্বংস বাস্তবায়নের জন্য একজনই আছে, সে তাদের পরম মিত্র বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সুতরাং যা হবার তাই হয়েছে। এই অসুর-দানবেরা সংখ্যায় এত বেড়েছে যে প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাচ্চা দানবেরা বর্তমানে অবস্থান করছে। তাদের চেষ্টা খালেদার নির্দেশে সবরকম উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা, সময়ে বন্যারোধী বাঁধ না দেওয়া, বিদ্যুৎ বিতরণকে বাধাগ্রস্ত করা, টেলিফোন নষ্ট করে রাখা, চালসহ, সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সি-িকেট করে দাম বাড়িয়ে জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে এ দলের ভাবমূর্তি ধ্বংস করার কাজ করা-ধর্ষণ, প্রশ্নফাঁস, অহেতুক মারপিট, হত্যা করা, ব্যাংক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা-আরও কত কি! এরই ধারাবাহিকতায় কিছুকাল আগে জামায়াত অধ্যুষিত, অল্প শিক্ষিত বিএনপি নেত্রীর অঙ্গুলিহেলনে উচ্চ ডিগ্রীধারী প্রকৌশলীরা কোন যুক্তিপূর্ণ কারণ ছাড়া বুয়েটে দিনের পর দিন পাঠদান বন্ধ রেখে মুক্তিযুদ্ধপন্থী সরকারকে বিপদে ফেলতে চেয়েছিল। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে, হিন্দু শিক্ষার্থীদের খাসির মাংস বলে গরুর মাংস খাইয়েছে! অনুষ্ঠানের উপহারের ব্যাগের ভেতর কোরান ও জায়নামাজ দিয়েছে! তারা কি প্রকৌশলী? আমার মতে, তারা মাদ্রাসা শিক্ষক অথবা জঙ্গী গোষ্ঠীর মতো কোরান-হাদিসের প্রকৃত মর্ম না জেনে অতি নিচু মানের, অশিক্ষিতের মতো কাজ করেছে যে কাজ তাদেরকেই বুমেরাং হয়ে হেয় করেছে যা বোঝার ক্ষমতাও তাদের নেই! ধর্ম সম্পর্কে এই সব উচ্চ শিক্ষিতের অতিপ্রেম যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষকে আশ্চর্যান্বিত করে এই কারণে যে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে তার পারিবারিক ধর্ম লাভ করে এবং সেটি পালন করে। অর্থাৎ মা, বাবার ধর্মই সন্তানেরা বাবা-মার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে। যেমন বাড়ি, জমি, সম্পত্তি লাভ করে। খুব কমসংখ্যক মানুষ পরিণত বয়সে পড়াশোনা করে অন্য ধর্মের বাণীতে আকৃষ্ট হয়ে সে ধর্ম গ্রহণ করে। কেউ কেউ জাত, পাত, ধর্মীয় কঠোর বিধি-বিধান থেকে মুক্তি পেতেও ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করেছে। খ্রীস্টান মিশনারিরা অনুন্নত উপনিবেশগুলোতে দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে শিক্ষা দিয়ে ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে আগ্রহী করেছে। আরব অঞ্চল থেকে আগত মুসলিম পীর-সুফী আলেমদের ভারত উপমহাদেশে আগমনের ফলে এখানে উদার ইসলাম প্রচার লাভ করে। প্রধানত: পারস্য দেশীয় সুফীধারার আলেম-ওলামাদের দ্বারাই সুফী ধারার ইসলাম ভারতে দ্রুত নিম্নবর্ণের নিগৃহীত হিন্দুদের মধ্যে প্রসার লাভ করে। স্মরণ রাখতে হবে, আরবী ভাষা উপমহাদেশের মানুষের কাছে বিদেশী ভাষা। যদিও প্রথমদিকে উচ্চবিত্ত ও উচ্চশিক্ষিত মুসলিম পরিবারে কোরান-হাদিস চর্চা জোরেশোরে শুরু হয় এবং বাঙালী মুসলমানরা তখনও বাংলা ভাষার চর্চা করত না। বাংলা ভাষাকে এরা ম্লেচ্ছদের, নিচু জাতের মানুষের ভাষা বলে তাচ্ছিল্য করত! বাঙালী মুসলিম উচ্চশ্রেণী তখনও উর্দু ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত ছিল। এদেরকে উদ্দেশ্য করে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম লিখেছিলেন, ‘যে জন হিংসে বঙ্গবাণী, তাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’। বাংলাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল আউল, বাউল, লোকসঙ্গীতসাধক, যাত্রা পালা লেখক এবং বাংলার কৃষক-শ্রমজীবী নিম্নবিত্তের মানুষেরা। তাহলে বলতে হয়, এই একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিত বুয়েটের শিক্ষকেরা বিজ্ঞান, বাংলা সাহিত্য, সঙ্গীত, সংস্কৃতির ওপরে স্থান দেন ধর্মীয় উপকরণকে হিন্দুকে ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মতো গরুর মাংস খাইয়ে তাদের হিন্দুত্বে আঘাত করাকে এখনও কূটকৌশল মনে করে! কি বলা যায় এদেরকে? এরা জ্ঞানপাপী, তবু বলছি, আমাদের সবার পূর্বপুরুষ হিন্দু বা বৌদ্ধ ছিল। কেননা ইসলাম ধর্ম প্রচারকরা এসেছে অনেক পরে, মধ্যযুগে। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান- আমরা সবাই কিন্তু আমাদের ধর্মগুলো বাবা-মার কাছ থেকেই পেয়েছি। এটা নিয়ে গর্ব করার কিছুই নেই। অন্য ধর্মকে আঘাত করার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা তো কোরানেই দেওয়া আছে! উপরোক্ত কাজগুলো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা নয় কি? এ অপরাধে বুয়েটের জামাত-বিএনপি পন্থী মহাধার্মিক ‘ঘৃণা প্রচারক’দের শাস্তি হবার কথা নয়? ভাগ্যে আমাদের দেশে লালন, শাহ আবদুল করিম, হাসন রাজাসহ অসংখ্য ধর্মনিরপেক্ষ সঙ্গীত সাধকেরা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তারও আগে কবি আবদুল হাকিম, আলাওল, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, পরে কবি নজরুল, বেগম রোকেয়া, ড. এনামুল হক, কবি জসীমউদ্দীন, আবদুল কাদির, আবদুল হক, আবুল ফজল প্রমুখ পুরোপুরি ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবধারায় জীবনাচারণ ও সাহিত্য শিল্পচর্চা করেছেন বলে আজ বাঙালী মুসলিম অন্য যে কোন দেশের মুসলমানদের চাইতে অনেক উদার, অসাম্প্রদায়িক, ধর্ম নিরপেক্ষ এবং সহনশীল হতে পেরেছেন। একইভাবে আমাদের প্রধান রাজনীতির ধারাও ধর্মনিরপেক্ষতাকে জোর দিয়েছে। অকল্পনীয় দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে যেমন ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে গুরুত্ব সহকারে স্থান দেন- এ কথা গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করতে হবে। যাই হোক, আরসা বা খালেদার নেপথ্যে যেমন রয়েছে আইএসআই, তেমনি আরসা বর্মী বাহিনীরও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবার প্রমাণ দিচ্ছে। এদের পাশে আছে জঙ্গী দলগুলোর জন্মদাতা জামায়াত-বিএনপি এবং বুয়েটের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইসলামপ্রেমী ধর্মান্ধ শিক্ষকরাও। এইসব কিছুর যোগফল- একটি রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র। যার লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধের আদর্শও। এ আদর্শে বিশ্বাসী দল, নেতা, ব্যক্তিদের ধ্বংসসাধন। সুতরাং দেশবাসীকে সাবধান হতে হবে, দেশ ও মুক্তিযুদ্ধকে রক্ষা করতে মুক্তিযুদ্ধের চিরশত্রু- জামায়াত-বিএনপি, জঙ্গী মাতা খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মাঠ থেকে বহিষ্কার করতে হবে চিরতরে। তাহলেই আইএসআই, জামায়াত, জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর প্রাণভোমরা চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। লেখক : শিক্ষাবিদ
×