ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনভিপ্রেত কদর্য কোন্দল

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

অনভিপ্রেত কদর্য কোন্দল

নারায়ণগঞ্জ শহরে ফুটপাথে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সিটি মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত লজ্জাকর এবং গভীর উদ্বেগজনক। ডাঃ আইভী অভিযোগ করেছেন তাকে হত্যা করার জন্যই হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনা তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অপরদিকে শামীম ওসমান বলেছেন, এটা শামীম ওসমান বনাম আইভীর লড়াই না। এটা হকারদের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের ঝামেলা। তিনি অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিএনপি যুবদলের ক্যাডার দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে চাষাঢ়া আসেন। সেই মিছিল থেকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা গুলি করেছে। নিজ দলেরই একজন জনপ্রিয় মেয়র সম্পর্কে কী ভয়ঙ্কর কথা! আমরা জানি না এই বাদানুবাদ শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। মানুষকে কোথায় নিয়ে যাবে! প্রতিটি সিটি করপোরেশনের দায়িত্বভার নির্দিষ্ট করা রয়েছে। তারা ফুটপাথে হকার বসানোর অনুমোদন দেবেন কি দেবেন না, দিলে কতটুকু ও কোন সময়ের জন্য দেবেনÑ এটা সম্পূর্ণ তাদেরই এখতিয়ার। তাই সেই কাজে করপোরেশনকে বাধা দেয়া অনুচিত। এখানে গায়ের জোর খাটানো বা মস্তানি চলে না। যদি সিটি করপোরেশন অগ্রহণযোগ্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে তার প্রতিবাদে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা প্রতিবাদী আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু তাই বলে প্রকাশ্য জনপথে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। শুধু এলাকাবাসী নয়, গোটা দেশের মানুষ জানেন শামীম ওসমান বনাম ডা. আইভীর নানামুখী বিবাদের কথা। একটি প্রাইভেট চ্যানেলের টক শোয়ে দুজনে যে সুরে কথা বলেছেন পরস্পরকে লক্ষ্যবস্তু করে এবং সেইসঙ্গে উভয়ের শারীরিক ভাষায় যা ফুটে উঠেছিলÑ তা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছিলেন। মানুষ সে সময় ছি ছি করেছিলেন। চরম পরিতাপের বিষয় হলো যথেষ্ট সিনিয়র ওই দুই রাজনীতিক এরপরও আত্মসংবরণ করেননি। ইতোমধ্যে এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বুধবার ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জনসমক্ষে সহিংসতা করে যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করি, এটি শুধু কথার কথা হয়ে থাকবে না। বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে যে একটি জনপদ এভাবে আর কতকাল সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে? হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা দরকার কালক্ষেপণ না করেই। সংঘর্ষের সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল বলে আক্রান্তরা যে অভিযোগ করেছেন, তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে। অভিযোগ সত্য হলে এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া চলবে না। বলা দরকার, এইসব অনভিপ্রেত কলহ-কোন্দল দেশের উন্নয়নকে যেমন বাধাগ্রস্ত করে, তেমনি রাজনীতিবিদ সম্পর্কেও সমাজে নেতিবাচক বার্তা দেয়। সবচেয়ে বড় কথা রাজনৈতিক দলটির ক্ষতির আশঙ্কা ঘটায়।
×