ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর হকার পুনর্বাসনে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

রাজধানীর হকার পুনর্বাসনে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাথ থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনের জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রকল্পের আওতায় হকারদের বিদেশ পাঠানো, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেয়া, ব্যবসার জন্য মোবাইল ভ্যান সরবরাহ, হলিডে মার্কেট স্থাপন ও সহজ সুবিধায় ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি। হকার্স ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, প্রকল্পে দুর্নীতি না হলে হকারদের সমস্যার সমাধান হবে। ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হকারদের পুনর্বাসনের জন্য গত ২৭ নবেম্বর স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠান ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোঃ বিল্লাল। প্রকল্পে ডিএসসিসির বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাথ থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের পুনর্বাসনের জন্য ৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার কর্মসূচী অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে তা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে হকারদের ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া; হকারদের বিদেশ পাঠানো; জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেয়া; ভ্যানগাড়ি সরবরাহ; হলিডে মার্কেট চালু ও হকার রেজিস্ট্রেশন এবং তাদের আইডিকার্ড দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে উল্লেখ করা হয় প্রকল্পে। ডিএসসিসি বলছে, হকাররা নির্ধারিত স্থানেই থাকবেন। তাদের ব্যবসা করতে দেয়া ভ্যানগাড়ি রাখার জন্য আলাদা স্থানও দেয়া হবে। ব্যবসা শেষে নির্দিষ্ট সময় পর তারা ভ্যানগাড়ি চালিয়ে আবার ফিরে যাবেন। এক্ষেত্রে হকারদের কাছ থেকে কোনও ট্যাক্স নেয়া হবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে প্রকল্প পাস হওয়ার পর। তবে অফিস চলাকালে হকাররা রাস্তায় থাকবে না। এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে কম সুদে ঋণ নেয়ার ব্যবস্থা করে দেবে সিটি কর্পোরেশন। পাশাপাশি হকার ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রকল্পের টাকায় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণেরও প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। প্রকল্পের পুরো টাকা বিভিন্ন খাত থেকে জোগান দেবে মন্ত্রণালয়। হকারদের পুনর্বাসনের এই প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘হকারদের পুনর্বাসনের জন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প পাঠিয়েছি। সেখান থেকে প্রকল্পটি যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এরপর যাবে একনেকে। প্রকল্প পাস হলে এর মাধ্যমে হকারদের পুনর্বাসন করা হবে।’ ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হকারদের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হলেও নির্ধারিত নিয়মের মধ্যেই তাদের ব্যবসা করতে হবে। অফিস চলাকালে তারা রাস্তায় বসতে পারবেন না। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তারা রাস্তায় বসতে পারবেন। এছাড়া, আগ্রহীদের বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। তাদের দক্ষতা তৈরি করে দিতে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। মোবাইল ভ্যানসহ আরও কিছু উপকরণও দেয়া হবে।’ প্রবল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে প্রকল্পে যেন কোনও দুর্নীতি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি না হলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে হকারদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’ তবে প্রকৃত হকাররা এসব প্রকল্পের উপকার ভোগ করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন অনেক হকারই। জানতে চাইলে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের ফুটপাথের কাপড় বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘অনেকদিন ধরে আমরা সিটি কর্পোরেশনের অনেক কথাই শুনে আসছি। আমাদের তালিকা করা হয়েছে বলেও শুনেছি। কিন্তু আমি এর সম্পর্কে জানি না।’ গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, ‘গত ছয় বছর ধরে গুলিস্তানে হকারি করে আসছি। কিন্তু শেষ এক বছর ধরে ফুটপাথে বসতে দেয়া হয় না। ছুটির দিন আর রাতের বেলায় যা একটু বসতে পারি। প্রকল্প হলেও আমাদের লাভ নেই। আমরা হকাররা হকারই থেকে যাব। লাভ হবে নেতা আর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের।’ সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ২০০১ সালে ফুটপাথ পরিচ্ছন্ন এবং উন্মুক্ত রাখতে বিচারপতি আবু সাঈদ আহাম্মেদ ও বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্দেশ দেন। ২০১০ ও ২০১২ সালে সদরঘাট ও মৎস্য ভবন থেকে সেগুনবাগিচা এলাকার ফুটপাথ দখলমুক্ত করতেও আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এছাড়া ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল ১৯৮২ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অধ্যাদেশ ১৯৭৬-এও ফুটপাত দখলমুক্ত ও পথচারীদের হাঁটার উপযোগী রাখার কথা বলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। হকার উচ্ছেদে ডিএসসিসি অভিযান চালানোর পাশাপাশি ফুটপাথকে হকারমুক্ত রাখতে নিয়োগ দেয়া হয় স্বেচ্ছাসেবক। এই উচ্ছেদের তীব্র বিরোধিতার পর হকাররা নিজেদের পুনর্বাসনের দাবিতে দফায় দফায় সভা সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। পরে হকারদের বিদেশ পাঠানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা ডিএসসিসি বললেও প্রায় এক বছরে কোনও উদ্যোগই দৃশ্যমান হয়নি।
×