ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

থিয়েটার স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোকশিখা জ্বলুক প্রাণে

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

থিয়েটার স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোকশিখা জ্বলুক প্রাণে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিনয় শেখার তাগিদে গড়ে ওঠে নতুন এক বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে নাট্যশিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত থিয়েটার স্কুল নামের সে বিদ্যাপীঠের যাত্রাটা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। সূচনালগ্নে অধ্যক্ষ ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছিলেন আবদুল্লাহ আল-মামুন। ২০০৮ সালে আবদুল্লাহ আল-মামুনের প্রয়াণের পর প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হয় আবদুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুল। সময়ের স্রোতধারায় প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পূর্ণ করলো মঞ্চনাটকে নিবেদিতপ্রাণ অজস্র নাট্যকর্মী তৈরি করা সেই স্কুলটি। ‘আলোকশিখা জ্বলুক প্রাণে’ প্রতিপাদ্যে শুক্রবার আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদ্যযাপিত হলো ২৭তম বর্ষপূর্তি। সমকালীন নাট্যধারা বিষয়ক সেমিনার আয়োজনের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বের হলো বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শিল্পকলায় বসেছিল থিয়েটার স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের আড্ডা। শীতের সন্ধ্যায় নাট্যশালায় পরিবেশিত হয়েছে নৃত্য-গীতে সজ্জিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটকের কোলাজ পরিবেশনা। সব মিলিয়ে সকাল থেকে রাত অবধি জমাটবাধা এক মুখরিত আয়োজন। সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের সূচনা হয়। অনুষ্ঠিত হয় ‘চিরায়ত নাট্যরীতি ও সমকালীন প্রযোজনা নিরীক্ষা’ শীর্ষক সেমিনার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন আবদুল্লাহ আল-মামুন থিয়েটার স্কুলের বর্তমান অধ্যক্ষ নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ই¯্রাফিল শাহীন, বাচিকশিল্পী ও নাট্যনির্দেশক গোলাম সারোয়ার, অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার, স্বপ্নদলের প্রধান জাহিদ রিপন প্রমুখ। সকালে সেমিনারের পরে বিকেলে বের হয় বর্ণিল আনন্দ শোভাযাত্রা। শিল্পকলা একাডেমির নন্দনমঞ্চ থেকে শুরু হয়ে এ শোভাযাত্রা জাতীয় প্রেসক্লাব ঘুরে পুনরায় নন্দন মঞ্চ এসে শেষ হয়। থিয়েটার স্কুলের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা হাতে বেলুন নিয়ে আর হর্ষধ্বনিতে মুখর করে তোলে পুরো শোভাযাত্রা। এতে নেতৃত্ব দেন রামেন্দু মজুমদার। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ছিল উৎসব আনুষ্ঠানিকতা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বক্তব্য রাখেন রামেন্দু মজুমদার এবং থিয়েটার স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক সৈয়দ আপন আহসান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বীকৃতি-স্মারক প্রদান করা হয় স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক খুরশীদ আলমকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বাচিকশিল্পী ড. ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় এবং স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের মেয়ে দীবা নার্গিস। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যারা এ প্রতিষ্ঠান থেকে মঞ্চের পাঠ নিচ্ছেন তারা সৌভাগ্যবান। কারণ, আমাদের সময়ে এমনটা ছিল না। স্কুলের ভাল ভাল শিক্ষকের কাছ থেকে তারা অনেক কিছু শিখতে পারছেন। তবে আসল কথা হলো প্রচুর শ্রম ও সময় দিতে হবে মঞ্চের জন্য। আর নাটকের ভেতরে সারাক্ষণ বসবাস থাকতে হবে। আরও বড় কথা হচ্ছে, যত বেশি সংস্কৃতিবান মানুষ আমরা পাব, ততবেশি রুচিশীল সমাজের সৃষ্টি হবে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, এই স্কুল সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল, নাটক সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়ে মঞ্চে কাজ শুরুর জন্য। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা এতগুলো বছর পার করেছি। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । এরপর ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানের সুরে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন থিয়েটারের স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী রবিন বসাক, এন কে মাসুক, তানভীর সামদানী, কৌশিক মহান্ত, লিটা খান, জনিকা বৃষ্টি, হাকিমুন নাহার জয়া, আসাদুজ্জামান জয় ও প্রান্তিক সৌরভ। নাচ শেষে যন্ত্রসঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় শ্রোতার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেন থিয়েটার স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী দীপন সরকার। এরপর উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবারও শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজনের। প্রথমেই ছিল নাটকের গান। এ পর্বে পরিবেশনায় অংশ নেন রাশেদুল আউয়াল শাওন, তানজুম আরা পল্লী, সাইফ জোয়ার্দার, কল্যাণ, তানভীর সামদানী, মোহাম্মদ আতিক, মেহেলী রোজ ও শামীমা শওকত লাভলী। এর পর ছিল পূজা সেনগুপ্ত ও তার দলের পরিবেশনায় নৃত্য পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক আয়োজনের সবশেষে ছিল বিভিন্ন নাটকের অংশবিশেষ মঞ্চায়ন। অংশ নেন শেকানুল ইসলাম শাহী, তানজুম আরা পল্লী, হাশিম মাসুদ, লায়লা বিলকিস ছবি, ফখরুজ্জামান, লিটা খান, গৌরাঙ্গ বিশ্বাস স্বাধীন, এরশাদ হাসান ও তানভীর সামদানী। এ পরিবেশনাটি পরিচালনায় ছিলেন শামীমা শওকত লাভলী। হরিশংকর জলদাসের কানিজ ফাতেমা মোহসিন স্মারক বক্তৃতা ॥ ব্রিটিশ ও জমিদারবিরোধী জাতীয়তাবাদী নেতা সৈয়দ নওশের আলীর মেয়ে কানিজ ফাতেমা মোহসিনা। নিজেও ছিলেন বিপ্লবী রাজনৈতিক কর্মীদের ভরসাস্থল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত হওয়া এ নারী ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যায়। এর পর থেকেই তার দুই ছেলে হায়দার আকবর আলী খান রনো ও হায়দার আনোয়ার খান জুনো আয়োজন করে আসছে স্মারক বক্তৃতা। যার দ্বিতীয় পর্বে শুক্রবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস ‘বর্ণাশ্রম প্রথা : শ্রেণীশোষণেরই অপর নাম’ শিরোনামে স্মারক বক্তৃতা দেন। যার আয়োজন করে সমাজ-রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র। কেন্দ্রের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এতে সভাপতিত্ব করেন। একক বক্তৃতায় হরিশংকর জলদাস বলেন, খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আর্যজাতি ভারতে প্রবেশ করে। তাদের ছিল উন্নত ভাষা, নিয়মে বাঁধা সমাজ, সুসংস্কৃত ধর্মব্যবস্থা। ভারতে আগমনের অনেককাল পরে আর্যরা বাংলায় প্রবেশ করে। আগে থেকেই বাংলায় ব্রাহ্মণ্যধর্মের উপস্থিতি থাকলেও তার প্রভাব ছিল অতি সামান্য। গুপ্তযুগ, পাল শাসন পেরিয়ে বাংলায় শুরু হয় সেন-রাজত্ব। সেনদের আমলেই বাংলায় বর্ণাশ্রম প্রথা প্রবল আকার ধারণ করে। ১০৯৮ থেকে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলায় জাতিভেদ তথা বর্ণাশ্রম প্রথা উৎকট আকার নেয়। এসএ টিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন ॥ প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পেরিয়ে ছয়ে পা দিল তৃতীয় প্রজন্মের স্যাটেলাইট টেলিভিশন এসএ টিভি। রাত ১২টা এক মিনিটে কেক কেটে বর্ষপূর্তির আয়োজন উদ্বোধন করেন এসএটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপর শুক্রবার দিনভর শুভেচ্ছা জানাতে এসএ টিভির প্রধান কার্যালয়ে আসেন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদসহ সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষেরা। দিনভর এ আয়োজনে তাদেরকে স্বাগত জানান এসএ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন আহমেদ, পরিচালক নূরে আলম রুবেল এবং চিফ অপারেশন অফিসার সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকিসহ টেলিভিশনটির কর্মকর্তারা।
×