ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তবে অনুৎপাদনশীল খাতে হাজার কোটি টাকা বকেয়া

খুলনার তিন পাটকলের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৮

খুলনার তিন পাটকলের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযোগ

রশিদ মামুন ॥ অনুৎপাদনশীল খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া থাকলেও উৎপাদনশীলখাতে বিদ্যুত বিল আদায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। খুলনার সরকারী তিন পাটকলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার অভিযোগ করে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী সম্প্রতি বিদ্যুত জ¦ালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে আধা সরকারী পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন। সরকারের পাটকলের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার মধ্যে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়াতে মিলের শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়েছে বলে এতে অভিযোগ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রধান রফতানি পণ্য ছিল পাট। ক্রমান্বয়ে পাট শিল্পকে ধ্বংস করতে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত কাজ করেছে। দেশের একের পর এক পাটকল বন্ধ হলেও সীমান্তের ওপারে নির্মিত হয়েছে নতুন পাটকল। দেশের সাধারণ কৃষক পাটকে প্রধান অর্থকরী ফসল বিবেচনা করলেও অনেক বছর পাটচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। সরকার দুই মেয়াদে দেশের পাটকলের সুদিন ফেরানোর ঘোষণা দেয়। এরমধ্যে পাটকলকে লাভে ফেরাতে নানা উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। গত কয়েক বছরে পাটের আন্তর্জাতিক বাজারে আবার একটু একটু করে বাংলাদেশ হারানো অবস্থান ফিরে পেতে শুরু করেছে। কিন্তু বিল প্রদানে সরকারের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে বিজেএমসির একজন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন। বিদ্যুত বিভাগ বলছে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাছে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে। এর বেশিরভাগই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন থানায় বকেয়া বিদ্যুত বিল আদায়ে আলাদা করে উদ্যোগও নিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। যেসব প্রতিষ্ঠানে বেশি বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকে তার প্রায় সবগুলোই অনুৎপাদনশীল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন উৎপাদনশীল কোন প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। আবার শ্রমিকের কর্মঘণ্টা নষ্ট হলেও তাকে মজুরি দিতে হয়। দুই দিকের ক্ষতির কারণে এ ধরনের সরকারী প্রতিষ্ঠানের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। সরকারের কাছে দেয়া সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ৬টি বিতরণকারী সংস্থার ছয় হাজার ১৩৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি- ওজোপাডিকো পাটকলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। কোম্পানিটির মাঠ পর্যায়ে বকেয়ার পরিমাণ ৩৭৬ কোটি টাকা। প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ডিও লেটারে জানান, বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছন্ন করায় দি ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিলস লিমিটেড এবং আলিম জুট মিলের উৎপাদনে বিঘœ ঘটেছে। সরকার লোকশানি পাটকলের জীবন ফিরিয়ে দিতে চায়। সেই লক্ষ্য নিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ২০১৫ সালের একটি সরকারী সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ওই বছর ২৩ মার্চ অর্থ সচিবের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। যেখানে সিদ্ধান্ত হয় বিদ্যুত বিল আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সারচার্জ মওকুফ করতে হবে। একই সঙ্গে বকেয়া বিল তিন মাস সমপর্যায়ে হ্রাস করা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের আলোকে বিজেএমসি পাটকলগুলোর বিদ্যুত বিল পরিশোধ করে আসছে। বিজেএমসি জানিয়েছে, কোন মিলেই বিদ্যুত বিলের বকেয়া তিন মাসের বেশি হয়নি। বিজেএমসি বলছে পাট পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার মৌসুম ভিত্তিক। সঙ্গত কারণে সকল সময় পাটপণ্য বিক্রি হয় না। এসব ক্ষেত্রে কোন কোন সময় বিদ্যুত বিল পরিশোধ করতে কিছুটা দেরি হয়। তবে তা কোন সময়ই সরকারের বেঁধে দেয়া তিন মাস সময় অতিক্রম করে না। কিন্তু মিলগুলোর বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় বিজেএমসি আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ছে। এতে লোকশানের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। মির্জা আজম ডিও লেটারে আরও জানিয়েছেন, তাৎক্ষনিকভাবে বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ করে দিলে মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্রেতার আদেশ অনুযায়ী বৈদেশিক বাজারে পণ্য সরবরাহ করতে সমস্যা হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে জাহাজীকরণ না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তিক্ষুন্ন হচ্ছে। যাতে পাট মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর আশঙ্কা করছে।
×